Advertisement
Advertisement
Covid-19

ছবি এঁকে বুঝিয়েছিল শ্বাসকষ্টের কথা, অবশেষে করোনাজয়ী বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন সৌম্যদীপ

সাত দিন আইসিইউতেও ভরতি ছিল সে।

After 7 days in ICU one Specially abled child recovered from covid-19 | Sangbad Pratidin
Published by: Abhisek Rakshit
  • Posted:May 30, 2021 3:08 pm
  • Updated:May 30, 2021 3:08 pm

অভিরূপ দাশ: এক জটিল নিউরো-ডেভলপমেন্টাল ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত সৌম্যদীপ। কথা বলে না বড় একটা। খাতায় আঁকিবুঁকি কেটেই নিজের মনের ভাব প্রকাশ করে বছর বারোর কিশোর। এহেন সৌম্যদীপের খাতায় এক সকালে রং পেনসিলে আঁকা করোনা (Corona) ভাইরাসের ছবি। তাজ্জব হয়ে যান মা-বাবা। “হয়তো ওর ভিতরে ভিতরে শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। টিভিতে তো ও করোনার খবর শুনেছে। ছবি দেখেছে। সেখান থেকেই এঁকেছে।” জানিয়েছেন সৌম্যদীপের মা। আরটি—পিসিআর টেস্ট করতে দেখা যায় আশঙ্কাই সত্যি। রিপোর্ট পজিটিভ।

করোনা আক্রান্ত রোগীর কোথায় কী কষ্ট হচ্ছে তা জানা জরুরি। কিন্তু কথা-ই তো বলতে পারে না সৌম্যদীপ! ডাক্তারদের বলবে কী করে? কীভাবে চিকিৎসা চলবে তা ভেবেই হাত—পা ঠান্ডা ফিজিশিয়ানদের। ডাক্তারদের আশঙ্কাকে মুছে দিয়ে টানা ১৫ দিন হাসপাতালে মাথার কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন সৌম্যদীপের মা। সৌম্যদীপের মুখ হয়ে যিনি কথা বললেন। অটিজম আক্রান্ত ১২ বছরের কিশোরের মেডিক্যাল টিমে সিস্টারদের অলিখিত চিকিৎসক বলছেন এই চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা ড: রাজেশ সিং। যিনি বলেন, “বাচ্চাটি কোনও সমস্যাই নিজে বলতে পারে না। এটাই ছিল মূল সমস্যা। সেটা যে কাটিয়ে চিকিৎসায় সাফল্য এসেছে, সেটাই বড় কথা।”

Advertisement

[আরও পড়ুন: সব সোনার গয়নায় হলমার্কে সমস্যায় পড়বেন ছোট ব্যবসায়ীরা, সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনায় কেন্দ্রকে চিঠি]

মে মাসের প্রথম সপ্তাহের ঘটনা। ধুম জ্বর আসে উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন ওই কিশোরের। ১০৪ জ্বর নিয়ে তাকে ভরতি করা হয় সোদপুরের একটি নার্সিংহোমে। মা চৈতালি রক্ষিত জানিয়েছেন, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শিশুর সামাজিক আচরণ যে ভাবে বদলানো উচিত, আমার বাচ্চার তা হয়নি। অটিজম রয়েছে ওর। এই অসুখের জন্যেই সৌম্যদীপের মস্তিষ্ক সঠিকভাবে বিকাশ হয়নি। সব সময় আগলে রাখি ওকে। ওর শরীরেই কি না করোনার থাবা! দ্রুত ছেলের শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল। সোদপুরের নার্সিংহোমে অক্সিজেন স্যাচুরেশন নেমে গিয়েছিল ৮৫-তে। সেখান থেকে সৌম্যদীপকে স্থানান্তরিত করা হয় কলকাতা বিমানবন্দরের অদূরে তেঘড়িয়ার অন্য একটি ডায়গনস্টিক সেন্টারে। সেখানেও হাল ফেরেনি শরীরের। অগত্যা সেখান থেকে বাইপাসের ধারের আর একটি বেসরকারি হাসপাতাল। ততদিনে হয়ে গিয়েছে সিটি স্ক্যান। রিপোর্টে দেখা গিয়েছে করোনার আঘাতে সৌম্যদীপের বুকের হাল ঘষা কাচের মতো। প্রয়োজন ২৪ ঘণ্টা অক্সিজেনের। টানা সাত দিন নন ইনভ্যাসিভ ভেন্টিলেশনে ছিল সৌম্যদীপ।

Advertisement

একদিকে ভাইরাসের অতর্কিত আক্রমণ, অন্যদিকে জন্ম থেকে স্নায়ুর অসুখ। চিকিৎসা শুরু করতে কিছুটা বেগ পেতে হয় চিকিৎসকদের। হাসপাতালে পিপিই কিট পরা ডাক্তারদের দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল বছর বারোর কিশোর। খিঁচুনি হতে থাকে তার। মনোবিদ সৃষ্টি সাহার সাহায্য নেওয়া হয়। তিনি জানান, এহেন কিশোরদের চিকিৎসা করা বড় সহজ নয়। সব সময় তাদের মন ভাল রাখতে হয়। বাচ্চাটির মন ভাল করতে হাসপাতালের ঘরে টিভির বন্দোবস্ত করেন চিকিৎসকরা। ডেকে নিয়ে আসা হয় সৌম্যদীপের বাবাকেও।

[আরও পড়ুন: করোনা আবহে রাজা রামমোহন মিউজিয়াম থেকে চুরি দুষ্প্রাপ্য সামগ্রী, গ্রেপ্তার ১]

চিকিৎসকদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ শুরু করেন সৌম্যদীপের অভিভাবকরাও। এর মধ্যেই অক্সিজেন সম্পৃক্ততা কমতে থাকায় সৌম্যদীপকে ইন্ট্রাভেনাস ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। সৌম্যদীপের মায়ের কথায়, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রাজেশকুমার সিং এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। বাবাকে ছাড়া ওষুধ খেতে চাইত না। ছুড়ে ছুড়ে সব ফেলে দিত। ডাক্তারবাবুই আমার স্বামীকে ছেলের পাশের ঘরে থাকার বন্দোবস্ত করে দেন। উনিই আমাকে প্রস্তাব দেন, ওর একা একা লাগছে। আইসিইউতে আপনিও থাকুন। আমার ছেলের এপিলেপসি আছে তার জন্যে কী কী ওষুধ খায় তারও তালিকা আমরা দিই ডাক্তারের কাছে। আপাতত সম্পূর্ণ সুস্থ সৌম্যদীপ।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ