Advertisement
Advertisement

দুর্গার পর আলিপুর জেলের বন্দি শিল্পীর চমক এবার কালীতেও

কালীপ্রতিমা তৈরিতে তাকে সমস্তভাবেই উৎসাহিত করে যাচ্ছেন জেল কর্তা ও কর্মীরা।

Alipore Central Jail inmate’s Kali idol receives applaud

ফাইল ছবি

Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:October 12, 2017 3:53 am
  • Updated:October 12, 2017 3:53 am

সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়: দুর্গাপুজোয় জেলের মধ্যেই প্রতিমা গড়ে সকলের নজর কেড়েছিল আলিপুর জেলের যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দি চন্দন চন্দ। দুর্গা প্রতিমা জলে পড়তেই এবার চন্দন জেলে বসেই কালী প্রতিমা গড়ার কাজ শুরু করে দিল। এই কাজে তাকে সাহায্য করছে আরও দু’জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দি। দমদম বালক সংঘের হয়ে কালী প্রতিমা এবার তৈরি করছে চন্দন। এরজন্য পারিশ্রমিক বাবদ চন্দনকে পাঁচ হাজার টাকা সাম্মানিক দেবেন দমদম বালক সংঘের কর্মকর্তারা। তবে এক্ষেত্রে দুর্গাপুজোর মতোই সাম্মানিকের একটি টাকাও নিজের পকেটে পুরবে না চন্দন। দুর্গাপুজোর মতোই কালীপুজোর সাম্মানিকের সমস্ত টাকাই সে দান করতে চায় জেলবন্দিদের জন্য ওয়েলফেয়ার তহবিলে। ‘বন্দিশিল্পী’ চন্দনের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে কালীপ্রতিমা তৈরিতে তাকে সমস্তভাবেই উৎসাহিত করে যাচ্ছেন জেল কর্তা ও কর্মীরা।

[এককালের ত্রাস, এখনও ভক্তিভরে মা কালীর পুজো করেন এই প্রাক্তন ডাকাত সর্দার]

নিজের জেল আলিপুর তো বটেই, পাশাপাশি দমদম জেলেরও এবার প্রতিমা গড়ে দিয়েছিল যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দি চন্দন চন্দ। আলিপুর জেলের পুজোর জন্য চন্দন ছাড়াও আরও ১৬ জন বন্দিকে নিয়ে তৈরি হয়েছিল পুজো কমিটি। তারা কেউ যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত, কেউ বা আবার বিচারাধীন বন্দি। আলিপুর জেলে এবার পুজোর থিম ছিল বিশ্ববাংলা, কন্যাশ্রী এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি।

Advertisement

আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের রিক্রিয়েশন ক্লাবের পাশে রয়েছে ৯ নম্বর ওয়ার্ড। এর পাশে রয়েছে তিনটি ব্লক। এখানেই পুজো মণ্ডপ তৈরির কাজ হয়েছিল। তৈরি হয়েছিল আটটি গুহা। এই গুহার মধ্যে দিয়ে গেলেই দেখা মিলেছিল দুর্গাপ্রতিমার। গুহার সামনে ছিল হিন্দু-মুসলিমের কোলাকুলির মূর্তি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির থিম হিসাবে এই মূর্তিগুলি তৈরি করা হয়েছিল। এছাড়াও প্রতিটি গুহার মুখে ছিল বন্যাত্রাণ, রাজা হরিশ্চন্দ্রের শ্মশানযাত্রা থেকে শুরু করে বাল্মীকি মুনির শরীরে উইপোকার ঢিবি। সমস্ত মূর্তিই তৈরি করেছিল যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দি চন্দন চন্দ। তাকে সাহায্য করছিল আরও তিন বন্দি মহাদেব মণ্ডল, তপন বাউরি ও মণ্টু দাস। অষ্টমীতে একই সঙ্গে খিচুড়ি ভোগ খাওয়া হয়। নবমীতে ছিল ভাত ও খাসির মাংস। অষ্টমী বাদ দিয়ে অন্যান্য দিনের মেনুতেও বন্দিদের খাওয়ার জন্য ছিল মাছ ও মাংস।

Advertisement

[একই মন্দিরে জোড়া কালীর আরাধনা, কারণটা অদ্ভুত]

প্রতিবছরই প্রতিমা তৈরি করে দেয় সাজাপ্রাপ্ত বন্দি চন্দন। আলিপুর, প্রেসিডেন্সি ও দমদম জেল ছাড়াও বিভিন্ন ক্লাবের অর্ডার অনুযায়ী প্রতিমা তৈরি করে সে। কিন্তু এ বছর বেশি প্রতিমা গড়তে পারেনি চন্দন। কারণ, এ বছর সে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছিল। সেই কারণে পড়াশোনার জন্য বেশি প্রতিমা সে গড়তে পারেনি। শুধুমাত্র নিজের জেল আলিপুর, দমদম সেন্ট্রাল জেল এবং দমদমেরই একটি ক্লাবের প্রতিমা গড়ার অর্ডার নিয়েছিল চন্দন। প্রতিমা গড়ার জন্য চন্দন নিজের জেল আলিপুর থেকে কোনও পারিশ্রমিক নেয় না। কিন্তু, আলিপুরের বাইরের প্রতিমা গড়লে নেয় পারিশ্রমিক। আলিপুরে প্রতিমা গড়ার ক্ষেত্রে চন্দনের পারিশ্রমিক বাদ দিয়ে শুধুমাত্র অন্যান্য খরচগুলি জেল কর্তৃপক্ষই দেয়। প্রতিমা গড়ার যাবতীয় পারিশ্রমিকের একটি পয়সাও নিজের পকেটে ঢোকায় না চন্দন। পারিশ্রমিকের সমস্ত টাকাই সে জেলের ওয়েলফেয়ার তহবিলে জমা করে দেয়। এই ওয়েলফেয়ার তহবিলের টাকা দেওয়া হয় বন্দিদের ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার জন্য। কিংবা কোনও বন্দির পরিবারের সদস্যরা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁদের চিকিৎসার জন্য ওই তহবিল থেকে আর্থিক সাহায্য করা হয়।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ