রিংকি দাস ভট্টাচার্য: বগলে শতরঞ্চি, হাতে বিগ শপার। তাতে টিফিন ক্যারিয়ার, হটপট, ফ্লাস্ক, বিরিয়ানি, চিলি চিকেন, চা-কফি। প্লাস্টিকের প্লেট, কাপ, চামচও মজুত।
শীতের চিড়িয়াখানায় এ ধরনের হাজারও পরিবারের ঢল চির পরিচিত। রথ দেখা কলা বেচা এক সঙ্গে। জন্তু জানোয়ার দেখে আমোদ নেওয়ার পাশাপাশি পেটপুজোর আয়োজনও বাঁধা। কার্যত প্রতি শীতকালে পিকনিক স্পট হয়ে ওঠে আলিপুর চিড়িয়াখানা। আর আমজনতার সেই ফুর্তির খেসারত দিতে গিয়ে অাস্তাকুঁড়ে পরিণত হয় গোটা চত্বর। ভালবাসার অত্যাচারে অবলা জীবগুলিরও প্রাণান্ত।
[ নয়া বছরে শহরের চিড়িয়াখানায় অতিথি ৪টি অ্যানাকোন্ডা ]
এই রেওয়াজে এবার দাঁড়ি পড়তে চলেছে। চিড়িয়াখানায় পিকনিকের আসর বসার দিন শেষ। আগামী বছর থেকেই দর্শকদের খাবার নিয়ে ঢোকায় রাশ টানছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। বন্ধ করা হবে বাইরে থেকে জলের বোতল নিয়ে ঢোকাও। বৃহস্পতিবার আলিপুর চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিসকুমার সামন্ত জানিয়েছেন, চিড়িয়াখানা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে এবং পশুদের নিরাপত্তার স্বার্থে এই পদক্ষেপ নেওয়া হবে। “ফি বছর শীতে খাবারের প্যাকেট, জলের বোতলের স্তুূপ পরিষ্কার করতে কালঘাম ছুটে যায় সাফাইকর্মীদের। পাশাপাশি অবিবেচক দর্শকদের কাজকর্মের মাশুল দিতে হয় পশুপাখিদেরও।” মন্তব্য অধিকর্তার। তিনি বলেন, “জলহস্তীর জায়গায় একটি ফুড কোর্ট তৈরির কাজ চলছে। আগামী বছরেই সেটা শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। এরপর থেকেই বিজ্ঞপ্তি জারি করে বাইরে থেকে খাবার ও জল আনা বন্ধ করা হবে।” জলের বিকল্প হিসাবে চিড়িয়াখানার বিভিন্ন প্রান্তে আরও মেশিন লাগানোর কথা জানিয়েছেন তিনি।
[ ব্যক্তিগত আক্রোশেই কি যৌনাঙ্গ ছেদ? বৃদ্ধ খুনে রহস্য ঘনাল সল্টলেকে ]
দীর্ঘদিন ধরেই চিড়িয়াখানার ভিতরে সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে, ‘পশুদের কিছু খেতে দেবেন না’৷ মাইকেও ঘোষণা করা হয়। কিন্তু কোথায় কী! সর্বত্রই নিয়ম ভাঙার খেলা। চিড়িয়াখানার এক কর্মীর কথায়, কিছুদিন আগেই শিম্পাঞ্জি বাবুকে ঠান্ডা পানীয়ের একটি ক্যানে চুমুক দিতে দেখা গিয়েছে। অনেকেই ফল, জলের বোতল ছুড়ে মারছেন। কেউ আবার দ্বিস্তর নিরাপত্তাবলয়ের একটি স্তর টপকাচ্ছেন ছবি তোলার নেশায়। তিনি বলেন, সম্প্রতি হরিণের খাঁচার সামনে একটি পাঁচ বছরের শিশু হরিণকে পাউরুটি খাওয়াচ্ছিল। আর ভাবুন, ‘উৎসাহী’ বাবা মা আবার সেই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করছিলেন। সম্প্রতি বেশ কিছু দর্শককে এই কারণে জরিমানা দিতে হয়েছে বলে জানান আশিসবাবু। নিছক বিনোদনের জন্য পশুদের বিরক্ত করার ‘ট্রেন্ড’ বন্ধ করতে চলতি শীতের মরশুমে কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে আলিপুর কর্তৃপক্ষ।
[ শহরের রাজপথ সাজবে রঙিন আলপনায়, পুরসভার বেনজির উদ্যোগ ]
এবছরও কড়া নিরাপত্তার বেড়াজালে মুড়ে ফেলা হচ্ছে আলিপুরকে। আশিসবাবু বলেন, ১৩টা সিসিটিভি ছিল আগে। এবছর আরও ২০ টা সিসিটিভি বসানো হচ্ছে। তিনি বলেন, অফিসে বসে পুরো বিষয়টিতে নজরদারি চালাব আমি। পশুদের খাবার দিতে গিয়ে ধরা পড়লেই সোজা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হবে অভিযুক্তকে। জরিমানা হতে পারে পাঁচশো টাকা থেকে দু’হাজার টাকা পর্যন্ত। বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যাও। বহাল রাখা হবে ওয়াটগঞ্জ, আলিপুর থানার পুলিশকর্মীদেরও। এদিন রসিকতা করে পশুশালার এক আধিকারিক জানান, “এতদিন বাঁদরের বাঁদরামি নজরদারি চালানো হত৷ এবার মানুষের বাঁদরামি রুখতেই বদ্ধপরিকর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।”