কলহার মুখোপাধ্যায়: ‘আপনি এখানে কি করছেন? প্লিজ চলে যান।’ কথোপকথনস্থল থেকে দশ হাত দূরে তিনতলা বিশাল বাড়িটার লোহার গেটে ততক্ষণে চাঞ্চল্য শুরু হয়ে গিয়েছে। সাদা শার্ট, ধূসর ট্রাউজারের এক চিনা যুবক ম্যান প্যাকে টানা নির্দেশ দিয়ে চলেছেন। গেটে দাঁড়িয়ে থাকা বেসরকারি সংস্থার তিন থেকে চারজন নিরাপত্তারক্ষী রীতিমতো শশব্যস্ত। রাস্তার দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশও সমানভাবে উত্তেজিত। একটু এদিক ওদিক হলেই ব্যবস্থা নিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করবে না কোনও পক্ষই। তাই পুলিশের আদেশের ভঙ্গিতে বলা ‘চলে যান’-অনুরোধ শুনে দাঁড়িয়ে না থেকে হাঁটা শুরু করে দি একপ্রকার বাধ্য হয়েই। এই বাড়িতে সামনে যাঁরাই এদিন ঘেঁষতে গেছে তাদের কেমন যেন সন্দেহ নিয়ে দেখেছে বাড়িটি।
[আরও পড়ুন: কেন গালওয়ানের দখল নিতে মরিয়া চিন? জেনে নিন সত্যিটা]
ঘটনাস্থল সল্টলেক সেক্টর ওয়ানের ইসি ব্লকের ৭২ নম্বর বাড়ি। লাল-সাদায় মেশানো এই অট্টালিকাটিতে রয়েছে কলকাতার চাইনিজ কনস্যুলেটের অফিস। লাদাখ ঘটনার পরের সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত গোটা দিনটা চাপা উত্তেজনা নিয়ে থমথমে দিন কাটালো। যেমন ছিল অতিরিক্ত নিরাপত্তা। তেমনই ছিল এক চাপা থমথমে পরিবেশ।
সকাল সাড়ে ন’ টায় অন্যান্য দিনের মতোই গেট খুলে ছিল ইসি-৭২-এর। তবে কিছুই অন্যান্য দিনের মতো ছিলনা। এদিন বাইরে থেকে বিশেষ কাউকে ঢুকতে দেখা যায়নি। যা কিছু চাঞ্চল্য দেখা গিয়েছে, তা শুধু নিরাপত্তিরক্ষীদের। বাড়িটি তিনতলার দিকে চোখ তুলে তাকালে অন্যান্য দিন বিশাল বড় সিসিটিভিটাই শুধু চোখে পড়ে। এদিন ধূসর ক্যামেরাটা কন্ট্রাস্টে ছাদের পাঁচিল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে সাদা শার্ট পরা এক যুবক ঠায় দাঁড়িয়ে। এক ঝলক দেখে বোঝা যায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা মোতায়েন রয়েছে গোটা বাড়িতে। রাস্তায় একজন নিরাপত্তারক্ষী একটানা টহল দিচ্ছেন। গেটের ফাঁক দিয়ে উঁকি মেরে দেখা গেল ভিতরে একটানা নিরাপত্তারক্ষীদের মধ্যে চাপা চাঞ্চল্য। পুরো পরিস্থিতিটাই কেমন যেন থমথমে। খানিকটা দম বন্ধ করে দেওয়ার মতো।
এদিন বাড়ির আশপাশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেছে বিধাননগর কমিশনারেট। একটা পুলিশ কিয়স্ক এমনিতেই থাকে ইসি-৭২-এর সামনে। আজ অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। কমিশনারেট সূত্রে খবর, ২৪ ঘন্টা নজরদারি রাখা হচ্ছে। এদিন সকাল ১১ টা নাগাদ ডানপন্থী একটি ছাত্র সংগঠন চিনা আগ্রাসন নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে একটি ছোট বিক্ষোভ জানাতে আসে বাড়ির সামনে। কিন্তু পুলিশ হস্তক্ষেপ করে তৎক্ষণাৎ সরিয়ে দেয় তাদের। তারপর যেন আঁটোসাঁটোভাব আরও বাড়িয়ে তোলে কনস্যুলেট বিল্ডিং। কারও সঙ্গে দেখা করা তো দূর অস্ত, বাড়ির সামনে বেশিক্ষণ দাঁড়ানোটাও নিষেধ ছিল এদিন।