সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ঐত্রী মৃত্যুকাণ্ডে নয়া মোড়। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে চাঞ্চল্যকর তথ্য। হৃদযন্ত্রের কোনও সমস্যা ছিল না আড়াই বছরের শিশু ঐত্রী দে-র। বরং শরীরে অক্সিজেনের অভাবের ফলে শ্বাসকষ্টজনিত কারণেই মৃত্যু হয়েছে ওই শিশুর, এমনটাই উল্লেখ ময়নাতদন্তের রিপোর্টে। যেখানে মুকুন্দপুর আমরি কর্তৃপক্ষ বারবার সওয়াল করছিল, ঐত্রীর হৃদযন্ত্রে সমস্যা ছিল বলে। সেখানে এই নয়া রিপোর্ট তদন্তের গতিপ্রকৃতি বদলে দেবে বলে মত চিকিৎসকমহলের। রিপোর্ট অনুযায়ী, কোনও অ্যালার্জি টেস্ট ছাড়াই ইন্ট্রাভেনাস করা হয় ঐত্রীর শরীরে। শরীরে তরল খাদ্য-ওষুধ প্রদানের জন্য ধমনীতে যে চ্যানেল করা হয় তাকেই বলে ইন্ট্রাভেনাস পদ্ধতি। সেই চ্যানেল দিয়ে অগমেন্টিন (Augmentin) ওষুধ প্রয়োগ করা হয় ঐত্রীর শরীরে। অ্যামোক্সিসিলিন অ্যাসিড জাতীয় ওষুধ যা ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ নির্মূল করার জন্য রোগীর শরীরে প্রয়োগ করা হয় তাই হল অগমেন্টিন। রিপোর্ট বলছে, অ্যালার্জি টেস্ট ছাড়াই সেই অগমেন্টিন প্রয়োগ করার ফলেই শ্বাসকষ্ট শুরু হয় ঐত্রীর। আর তাতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে ছোট্ট শিশু। চিকিৎসকরা বলছেন, এমন ওষুধ সহ্য নাহলে মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে। এখন প্রশ্ন উঠছে, কীভাবে বিনা অ্যালার্জি টেস্টে এমন ওষুধ ঐত্রীর উপর প্রয়োগ করা হল? ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন ঐত্রীর মা শম্পা দে।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ জানুয়ারি আমরি মুকুন্দপুর হাসপাতালে মৃত্যু হয় ঐত্রীর। হাসপাতালের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখায় পরিবার। তারপরই হাসপাতালের ইউনিট হেড জয়ন্তী চট্টোপাধ্যায় সংবাদমাধ্যমের সামনে দে পরিবারকে শাসানি দেন। এর জেরে তাঁর বিরুদ্ধে পূর্ব যাদবপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করে পরিবার। চাপে পড়ে অভিযুক্ত ইউনিট হেডকে বরখাস্ত করে আমরি মুকুন্দপুর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।সুবিচারের দাবিতে পথে প্রতিবাদে নামে দে পরিবার। হাসপাতালের সামনে অবস্থানে বসেন শম্পা-সহ অন্যান্য পরিজনরা। তার আগে ঐত্রীর ছবি-সহ ফ্লেক্স, মোমবাতি জ্বালিয়ে হাতে কালো ব্যাজ পরে প্রতিবাদ মিছিলে হাঁটেন তাঁরা। পরিজনরা ছাড়াও বহু শুভানুধ্যায়ীরাও পা মেলান তাঁদের সঙ্গে। সন্তানহারা মায়ের নাছোড় লড়াইয়ে কার্যত পিছু হঠে আমরি কর্তৃপক্ষ। প্রতিবাদস্থলে এসে দে পরিবারের কাছে হাতজোর করে ক্ষমা চেয়ে নেন হাসপাতালের আধিকারিকরা। একইসঙ্গে মৃতার পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তর কথাও জানিয়ে দেওয়া হয়। মৃত ঐত্রীর পরিবারের প্রতি সহানুভূতি বিবৃতি দিয়ে জানায় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি ৭ দিনের মধ্যে তদন্তের ফলাফল মেলার আশ্বাস দেয় তারা। কিন্তু অনেকদিন কেটে যাওয়ার পরও কোনও সুরাহা হয় না। তবে শুক্রবার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এই ঘটনায় নতুন করে পারদ চড়াবে বলে আশ্বাস ওয়াকিবহাল মহলের। সুবিচারের আশার আলো দেখতে পেয়েছেন সন্তানহারা মা শম্পা দে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.