আকাশনীল ভট্টাচার্য, বারাকপুর: আগের রাতেই নেইমারের গোল দেখে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছিলেন সাগর। ফুটবলে বরাবরের ব্রাজিল ফ্যান। মাঝরাতে জাপান-বেলজিয়ামের হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচ দেখে ঘুমোতে গিয়েছিলেন। ফুটবল অনেকটা প্রাণের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। কিন্তু সেই ফুটবলই কাড়ল প্রাণ। খেলতে খেলতে সেই ফুটবলের আঘাতেই মাঠে গড়িয়ে পড়লেন ১৮ বছরের সাগর দাস। স্বপ্ন ছিল ভাল ফুটবলার হওয়ার। ডিফেন্সে কড়া ট্যাকলে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন জীবনের প্রতিরক্ষায় বেসামাল সাগর। মঙ্গলবার বিকেলে মর্মান্তিক ঘটনা বেলঘরিয়া থানা এলাকার দেশপ্রিয় নগর ব্যায়ামাগার মাঠে। বন্ধুদের সঙ্গে ওই মাঠে ফুটবল খেলতে গিয়েছিলেন সাগর। প্রতিদিনই যেমন যান। মঙ্গলবার বিপক্ষ দলের এক খেলোয়াড় বলে সপাটে পাঞ্চ করলে সেটি সজোরে লাগে সাগরের মুখে। মাঠের মধ্যেই অচৈতন্য হয়ে পড়েন তিনি। তড়িঘড়ি সব বন্ধুরা নিয়ে যান কামারহাটি সাগর দত্ত হাসপাতালে। বাঁচানো যায়নি তরতাজা সাগরকে।
[বাংলার প্রাক্তন ফুটবলারের রহস্যমৃত্যু, রেললাইনের ধারে মিলল দেহ]
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই দিন বিকেলে পাড়ার ক্লাবেই ক্যারম খেলছিলেন সাগর। সাড়ে ৪টে নাগাদ ফুটবল খেলতে যাওয়ার জন্য বন্ধুরা তাঁকে ডাকতে আসেন। তখন তাঁদের সঙ্গে স্থানীয় একটি মাঠে ফুটবল ম্যাচ খেলতে যান সাগর। সেখানে গোল করার পরে সকলে যখন হুল্লোড় করছেন, তখন মাঠেই মাথা নিচু করে লুটিয়ে পড়েন সাগর। ফের খেলা শুরু করার জন্য বাঁশি বেজে গেলেও উঠে দাঁড়াননি তিনি। তখন অন্য সঙ্গীরা তাঁকে ডাকতে গিয়ে দেখেন, মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বেরোচ্ছে ওই যুবকের। পড়ে আছেন সংজ্ঞাহীন অবস্থায়। স্থানীয় লোকজনই তাঁকে সাগর দত্ত হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোযণা করেন। ছোট থেকেই ডিফেন্সে খেলতেন সাগর। বিশ্বকাপের প্রতিটি খেলাই দেখছিলেন নিয়মিত। পাড়ার মাঠে ম্যাচ খেলে অনেক সুনামও কুড়িয়েছিলেন সদ্য কলেজে ভর্তি হওয়া ওই যুবক। বুধবার তাঁর পিসতুতো দাদা দীপ কয়াল বলেন, ‘‘খুব ভাল ফুটবল খেলত। ওকে বলেছিলাম, ভাল রেজাল্ট করে কলেজে ভর্তি হলে তবে ফুটবল কোচিং ক্লাসে ভর্তি করে দেব।’’ পরিজনেরা জানান, অ্যালার্জির সমস্যা ছাড়া আর কোনও শারীরিক সমস্যা ছিল না সাগরের। এ দিন তাঁর পিসি পুতুল কয়াল বলেন, ‘‘গোল করে ছেলেটাই চলে গেল।’’