স্টাফ রিপোর্টার: বুলডোজারের ধাক্কায় ষষ্ঠ শ্রেণীর একছাত্রীর মৃত্যু ঘিরে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল বেলেঘাটা। পুড়ল গাড়ি। চলল পথ অবরোধ, পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ। বৃহস্পতিবার সকালের একটি দুর্ঘটনাই মুহূর্তে বদলে দিল গোটা এলাকার পরিস্থিতি। বাবার সঙ্গে সাইকেলে চেপে স্কুলে যাচ্ছিল তুলি দাস নামে ওই ছাত্রী। সিআইটি মোড়ের কাছে বেপরোয়া বুলডোজার পিষে দেয় দু’জনকে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ছাত্রীর। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি তার বাবা রবীন্দ্রনাথ দাস।
এই ঘটনার পরই রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। উত্তেজিত জনতা বুলডোজারে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। ঘটনাস্থলে যায় বেলেঘাটা থানা থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী। বেলা পর্যন্ত এলাকায় উত্তেজনা থাকে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বাবার সঙ্গে সাইকেলে চেপে স্কুলে যাচ্ছিল মেয়েটি। বিল্ডিং মোড় থেকে বাইপাসের দিকে যাচ্ছিল সাইকেলটি। সেইসময় হঠাৎই বুলডোজারটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সাইকেলটিকে ধাক্কা মারে। সাইকেলের পিছনে বসে থাকা ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী রাস্তায় ছিটকে পড়ে যায়। তার শরীরের উপর দিয়ে বুলডোজারের পিছনের চাকাটি চলে যায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ছাত্রীর। গুরুতর আহত অবস্থায় মেয়েটির বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁর অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
[‘মেরে রক্ত বার করে দিয়েছে’, বাবার বিরুদ্ধে থানায় উঠতি মডেল]
চোখের সামনে এই দুর্ঘটনা দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। বুলডোজারটিকে সামনে পেয়ে ভাঙচুর চালান তাঁরা। আগুনও ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পালিয়ে যায় বুলডোজারের চালক। এদিকে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রায়ই বেলেঘাটায় সিআইটি মোড়ে দুর্ঘটনা ঘটে। এদিন সকালেও ফের একবার দুর্ঘটনায় উত্তেজিত হয়ে পড়েন এলাকার বাসিন্দারা। বুলডোজারের চালক মদ্যপ অবস্থায় ছিল বলেও অভিযোগ তোলেন এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের কথায় সিআইটি মোড়ে প্রায়ই বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো হয়। ট্রাফিক পুলিশের নিয়ন্ত্রণের অভাবেই এই ঘটনা ঘটেছে। প্রতিবাদে বেশ কিছুক্ষন সিআইটি রোড অবরোধ করে রাখেন স্থানীয়রা। কিছুক্ষণ যানজট তৈরি হয় এলাকায়। বেলেঘাটা থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে অবরোধ তোলে। দমকলের একটি ইঞ্জিন গিয়ে আগুন নেভায়। বুলডোজারটিকে আটক করেছে পুলিশ। পলাতক চালকের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।
এদিন ওই একই স্কুলে যাচ্ছিলেন তুলির দিদি স্নেহা। স্নেহা অটো করে স্কুলে যাচ্ছিল। সে তার বোনকে চোখের সামনে বুলডোজারের তলায় চলে যেতে দেখে। সেই প্রথম বোন ও বাবার দুর্ঘটনার কথা বাড়িতে ফোন করে জানায়। এর পর বাড়ির লোকেরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এদিকে তুলির বাবা রবীন্দ্রনাথ দাসকে গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবণতি হলে তাঁকে অপর একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। বাড়ির ছোট্ট মেয়ের আকস্মিক এই মৃত্যুর ঘটনায় শোকাহত তার পরিবারের লোকেরা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এদিন এই দুর্ঘটনার পিছনে রয়েছে সিআইটি রোডের উপর বেআইনি পার্কিং। তাঁদের বক্তব্য, বেলেঘাটা থেকে ফুলবাগান যাওয়ার এই রাস্তার দু’ধারে প্রচুর গাড়ি বেআইনিভাবে পার্কিং করে রাখা হয়। গাড়ি পার্কিং করে রাখার ফলে সিআইটি রোড ক্রমশ সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। ফলে প্রায়ই এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। এদিনও তার ব্যতিক্রম হল না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.