মণিশংকর চৌধুরি: দলনেত্রীর ডাকে ব্রিগেড সমাবেশ। তাই, রাজ্যের প্রতিটি কোণ থেকেই মানুষ এসেছেন এই সমাবেশে। কেউ হয়তো প্রথমবার কলকাতা দেখছেন, কেউ হয়তো এর আগে মেরেকেটে ২-১ বার মহানগরীর বুকে পা রেখেছেন। মুশকিল হল, শহর কলকাতার আগা থেকে গোড়া, কোনওটাই এরা চেনেন না। দলের নেতাদের পিছু পিছু চলে এসেছেন ব্রিগেডে। দলের উদ্যোগে খাওয়া-দাওয়া নিয়েও চিন্তা নেই, এমনিতে তো তৃণমূল কংগ্রেস ডিম ভাতের দেদার আয়োজন করেইছে। এর বাইরেও ছোট ছোট শিবিরে কোথাও চিকেন আবার কোথাও খিচুড়িতে ভুরিভোজ হচ্ছে। কিন্তু মুশকিলটি হল, প্রকৃতির ডাক। প্রকৃতি যখন ডাকে তখন তো আর সাড়া না দিয়ে উপায় নেই। মল হোক বা মূত্র, সময় হলে তা ত্যাগ করতেই হয়। কিন্তু শহরের যারা আগাপাচতলা কিছুই চেনেন না তারা কোথায় যাবেন?
[ব্রিগেড সমাবেশ ঘিরে যান নিয়ন্ত্রণ, জেনে নিন কোন কোন রাস্তা বন্ধ]
তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে শহরের বিভিন্ন জায়গায় বায়ো টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। খালি ময়দান চত্বরেই যার সংখ্যা একশোর বেশি। কিন্তু সেসব আর খুঁজছে কে। এমনিতেই অচেনা শহর। তাই যেখানে সেখানে একটু ফাঁকা জায়গা পেলেই হল, উন্নয়নের সেনানীরা সেখানেই শুরু করে দিচ্ছেন মূত্রত্যাগ। এমনই ছবি দেখা গেল ময়দানে। আসলে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মিছিলের লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড় সামাল দেওয়ার জন্য একশো বায়ো টয়লেটও যথেষ্ট নয়। আর হলেও, টয়লেটের খোঁজে সময় নষ্ট করছে কে? যদি মিটিং শুরু হয়ে যায়? নেত্রী যদি গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলে দেন, হাতে সময় কোথায়?
[বিরোধীদের ব্রিগেডে ‘বিধি’ বাম, রাহুলের চিঠি নিয়ে তুমুল অস্বস্তি আলিমুদ্দিনে]
তাই ব্রিগেডে ঢোকার আগে ফাঁকা কোনও জায়গা পেলেই মানুষ প্রস্রাব করার কাজটি সেরে নিচ্ছেন। আমাদের প্রতিনিধিরা এই ছবিটি তুলেছেন ইলিয়ট পার্ক থেকে। যেখানে মূত্রত্যাগ নিষিদ্ধ, শুধু ইলিয়ট পার্ক কেন কলকাতার যে কোনও জায়গাতেই খোলাস্থানে মূত্রত্যাগ নিষিদ্ধ। কিন্তু কে শোনে কার কথা? পুলিশও নির্বিকার। কারণ, শয়ে শয়ে মানুষ এখানেই কাজ সারছেন ক’জনকেই বা আটকানো যায়। কিন্তু মুশকিল হল, এই মানুষের প্রকৃতির ডাক সামাল দেওয়ার চত্বরে শহর কলকাতা দূষিত হচ্ছে। আগামী ২ দিন দুর্গন্ধের জন্য যে ওই অঞ্চলে পা মাড়ানো যাবে না, সেটা হয়তো বলাই বাহুল্য। তবে একথা বলতেই হবে, এত মানুষের ভিড়েও যে ব্যবস্থাপনা তৃণমূল কংগ্রেস করেছে তা প্রশংসনীয়। এই যে বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলি ঘটছে তা নিতান্তই জনসাধারণের সচেতনতার অভাবে। শাসক দল ব্যবস্থা করলেও তাড়াহুড়ের বশেই হোক আর অজ্ঞানতার বশেই হোক, সেসব ব্যবহার করছে না আগত মানুষ। সাদাসিধে রাজ্যবাসী বেছে নিচ্ছেন ইলিয়ট পার্কের মতো জায়গাগুলিকেই।