শুভঙ্কর বসু: গুরুত্ব পেল না বিরোধীদের অভিযোগ। সোমবার পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পর্বে জেলায় জেলায় শাসকদলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা দায়ের করেছিল কংগ্রেস-বিজেপি। কিন্তু মঙ্গলবার শাসক-বিরোধী দুপক্ষের বক্তব্য শোনার পর বিরোধীদের অভিযোগ খারিজ করে দেয় বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের এজলাস। কংগ্রেসের মামলা আগেই খারিজ করে দেয় আদালত। সেই কারণে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে যাচ্ছে কংগ্রেস, এমনটাই জানা গিয়েছে। সেক্ষেত্রে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে ফের আইনি জটিলতা বাড়তে পারে।
অন্যদিকে, মঙ্গলবার হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো মনোনয়নকে মান্যতা দিল হাই কোর্ট। আদালতের এই নির্দেশ নজিরবিহীন। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়ন জমা দেওয়া যাচ্ছে না। সোমবার মনোনয়নের বর্ধিত দিনে ভাঙড়ের ৯ জন প্রার্থী হোয়াটসঅ্যাপে মনোনয়ন পাঠায়। মঙ্গলবার পঞ্চায়েতের শুনানি চলাকালীন হাই কোর্ট রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে এই মনোনয়নগুলি গ্রহণ করার নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি ওই ন’জনের নাম চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় যাতে থাকে তাও নিশ্চিত করতে বলে আদালত। অন্য যাঁরা অনলাইনে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন এদিনের নির্দেশের ফলে তাঁদেরও কি বৈধতা মিলবে? এদিনের সিদ্ধান্ত কি অনলাইন মনোনয়ন ব্যবস্থার প্রথম ধাপ? এমন বহু প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক মহলে।
পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে গোটা দেশের নজর বাংলার দিকে। এদিন কলকাতা হাই কোর্ট বলেছে, ভাঙড়ের নয় প্রার্থীর হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো মনোনয়ন মঞ্জুর না করলে ফের নির্বাচন প্রক্রিয়া স্থগিত করা হবে। ভাঙড়ে পাওয়ার গ্রিড বিরোধী আন্দোলনের নেত্রী শর্মিষ্ঠা চৌধুরি বলেন, “আমাদের সদস্যরা মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি। তাই ভাঙড় ২ নম্বর ব্লকের বিডিওকে হোয়াটসঅ্যাপে মনোনয়ন পাঠানো হয়। আদালত সেই মনোনয়নকে মান্যতা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।” আদালতের নির্দেশে বর্ধিত দিনেও পঞ্চায়েতে মনোনয়ন জমা দেওয়া যায়নি এই অভিযোগ নিয়ে এদিন কংগ্রেস, পিডিএস ও বামেরা ফের আদালতে যায়। বামেদের তরফে আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য বলেন, আদালতের নির্দেশ লঙ্ঘিত হয়েছে। ব্যাপক হিংসা হয়েছে। তৃণমূলের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বিজেপির রাজ্য সভাপতি এই জন্য দায়ী। কংগ্রেসের তরফে ভোট প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার আবেদন করা হয়।
রাজ্য নির্বাচন কমিশনার-সহ অন্য আধিকারিকরা কমিশনের অফিসে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। পঞ্চায়েত দপ্তরের ওএসডি সৌরভ দাস কমিশনে আসেন। বিকেল নাগাদ ভোটের দিন ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সূত্রের খবর, রাজ্য চাইছে দু’দফায় ভোট এবং তাও আবার ১৪ ও ১৬ মে। সেখানেই কমিশনের আপত্তি। প্রথমত দু’দফায় নয় কমিশন চায় তিন দফায় ভোট। তাও আবার ১৫ এবং ১৭ তারিখের আগে নয়। রাজ্য ও কমিশন ঐক্যমতে না পৌঁছতে পারলে ফের ঝুলে পঞ্চায়েত ভোটের দিন ঘোষণা। গত শুক্রবার কলকাতা হাই কোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশের প্রেক্ষিতে মনোনয়ন দাখিলের বাড়তি সময় ঘোষণা করেছিল কমিশন। সেইমতো সোমবার সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টে পর্যন্ত নতুন করে মনোনয়ন নেওয়া হয়েছে। যদিও ভোট গ্রহণের তারিখ ঘোষিত না হওয়ায় এই মুহূর্তে পুরো বিষয়টি কার্যত অনিশ্চয়তার ঘেরাটোপে। বস্তুত রমজান শুরু হওয়ার আগে আদৌ ভোট করা যাবে কি না তা নিয়েও ঘোর সংশয়। সোমবার মনোনয়ন ঘিরে হিংসা ও অশান্তির প্রতিবাদে বিরোধীরা ফের আদালতে গিয়েছেন বিরোধীরা। তবে রাজ্য সরকার চায় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পঞ্চায়েত ভোটপর্ব চুকিয়ে ফেলতে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.