শুভঙ্কর বসু: অবিবাহিত অবস্থায় মারা গিয়েছেন ছেলে। গোটা জীবনের সঞ্চয় রয়েছে এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের দু’টি অ্যাকাউন্টে। ছেলের মৃত্যুর পর এখন সেই টাকার একমাত্র দাবিদার মা। কিন্তু ছেলের মৃত্যুর পর এক বছর কেটে গেলেও ব্যাঙ্কে জমানো টাকা হাতে পাচ্ছেন না দক্ষিণ ২৪ পরগনার শেওড়াবাটা বৃহস্পতিপুরের বাসিন্দা রুক্মিণী শিকারি। বাধ্য হয়ে তাই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বৃদ্ধা।
[চিড়িয়াখানায় আর পিকনিক নয়, বন্ধ বাইরে থেকে জল নিয়ে ঢোকাও]
গত ২৪ নভেম্বর এই মামলায় রুক্মিণীদেবীকে ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে সমস্ত তথ্য জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারপতি দেবাংশু বসাক। ফের বিচারপতি বসাকের এজলাসে মামলাটির শুনানির সময় বৃদ্ধার আইনজীবী সুব্রত ঘোষ ও সায়ন্তন হাজরা জানান, আদালতের নির্দেশ মতো ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে সমস্ত তথ্য জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও টাকা মেলেনি। এরপরই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের আইনজীবী বলেন, জানুয়ারি মাসে ওই টাকা পাওয়া যাবে। একথা শুনেই বেজায় চটে যান বিচারপতি বসাক। তিনি প্রশ্ন করেন, “জানুয়ারি মাস কেন। এখন নয় কেন? বলুন আপনাদের জোনাল ম্যানেজার কে? আমি তাঁর বেতন বন্ধের নির্দেশ দেব।” বিচারপতির মেজাজ বুঝে তৎক্ষণাৎ বিষয়টি হালকা করতে যান রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের আইনজীবী। বিচারপতিও নাছোড়বান্দা। বলেন, “এখনই ওই বৃদ্ধার টাকা বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দিতে হবে জোনাল ম্যানেজারকে। বেলা তিনটে পর্যন্ত সময় দিচ্ছি। না হলে আমি জোনাল ম্যানেজারের বেতন বন্ধের নির্দেশ দেব।”
[নয়া বছরে শহরের চিড়িয়াখানায় অতিথি ৪টি অ্যানাকোন্ডা]
২০১৬-র ২৭ মে মারা যান রুক্মিণী শিকারির ছেলে স্বপন শিকারি। অসুখে ভুগে স্বাভাবিক মৃতু্য হয়েছিল তাঁর। অবিবাহিত ছিলেন স্বপন। তাঁর দুই বোন রয়েছেন। বাবা আগেই গত হয়েছেন। মারা যাওয়ার আগে গোটা জীবনের সঞ্চয় তিনি রেখেছিলেন টালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের দু’টি অ্যাকাউন্টে। একটি অ্যাকাউন্টে রয়েছে ৪৮ হাজার। অন্য অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ। দাদার মৃত্যুর পর দুই বোনই লিখিতভাবে জানিয়ে দেন, ‘দাদার টাকায় তাঁদের কোনও অধিকার নেই। অর্থের একমাত্র দাবিদার তাঁদের মা।’ সমস্ত তথ্য-সহ ব্যাঙ্কে টাকা ফেরতের আবেদন জানিয়েও টাকা পাচ্ছিলেন না বৃদ্ধা। ম্যানেজারের বেতন বন্ধের বকুনি খাওয়ার পর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক অবশ্য শীঘ্রই টাকা মিটিয়ে দিতে চাইছে। তবে টাকা ফেরাতে আদালতের কাছে কিছুটা সময় চেয়েছে তারা। সেই আবেদন অবশ্য মঞ্জুর করেছে আদালত। ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে ওই বৃদ্ধার টাকা মিটিয়ে দিতে হবে।