শুভঙ্কর বসু: চার বছর আগে কাউকে কিছু না বলে স্বামীর ঘর ছেড়েছেন। ছ’মাসের শিশুপুত্রকে কোলে নিয়ে। তারপর শত চেষ্টাতেও বউ রূপার দেখা পাননি সঞ্জয়।
কতবার চিঠি পাঠিয়েছেন। ও প্রান্ত নীরব। শ্বশুরবাড়িতে হাজির হয়েছেন। ঢুকতে পারেননি। কারণ জানতে আইনি চিঠি পাঠিয়েছেন। জবাব আসেনি। শেষে নিম্ন আদালতে মামলা ঠুকেছেন। সেখানেও রূপা আসেননি। ভারী রহস্যজনক! কেন এহেন অন্তরাল? ভাল আছে তো বউটা? অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়নি তো রূপার? সেদিনের ছ’মাসের পুত্রসন্তান তো আজ সাড়ে চার বছরের শিশু! কেমন আছে আদরের সে মানিক? বিরহে আকুল সঞ্জয়ের উৎকণ্ঠা দূর করতে অবশেষে আসরে হাই কোর্ট। চার বছর পর স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীর দেখা করাতে দু’জনকে এজলাসে ডেকে পাঠিয়েছেন বিচারপতি দেবীপ্রসাদ দে।
ইসলামপুরের সঞ্জয় দাসের সঙ্গে হাওড়া আমতার রূপা সামন্তর প্রেম ও বিয়ে অনেকটা গল্পের মতো। ২০১২ সালে দিদি-জামাইবাবুর সঙ্গে ইসলামপুরে বেড়াতে গিয়েছিলেন রূপা। সে সময়ই জামাইবাবুর সূত্রে সঞ্জয়ের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। প্রথম দর্শনেই দু’জনের ভাল লাগা। ভাল লাগা ‘ভালবাসা’য় বদলে যেতে সময়ও লাগেনি খুব একটা। এবং তখনই বিয়ের সিদ্ধান্ত। স্থানীয় একটি কালীমন্দিরে সঞ্জয়ের সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়েন রূপা।
সঞ্জয়ের বাবা মারা গিয়েছেন আগেই। শাশুড়ি-দেওরকে নিয়ে সংসারজীবন প্রথমটায় ভালই কাটছিল রূপার। শাশুড়ি-বউমাতে টুকটাক ঠোকাঠুকি হত ঠিকই। তা সে কোন পরিবারে হয় না? ‘সব কিছু ঠিকই আছে’- ধরে নিয়েছিলেন পেশায় গাড়ি চালক সঞ্জয়।
[চপ্পলে বিদেশি মুদ্রা পাচার, কলকাতা বিমানবন্দরে পাকড়াও দুই যুবক]
এক বছরের মধ্যে রূপার কোলে সন্তান এল। ছেলে হল। পরিবারে খুশি আর ধরে না। কিন্তু কে জানত ছেলে হওয়ার ছ’মাসের মধ্যে একদিন দুপুরে কাউকে কিছু না জানিয়েই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবেন রূপা? ছেলেকে নিয়ে ইসলামপুর থেকে বেরিয়ে পড়বেন বাপের বাড়ির উদ্দেশে? বাবা-মা নেই, তাই এসে উঠলেন দাদার বাড়ি। ব্যস! সেই থেকে গোসাঘরে। চিঠি পাঠিয়েও কোনও উত্তর মেলেনি। অথচ সঞ্জয়ের নামে থানায় কোনও অভিযোগও করেননি রূপা। খোরপোশও চাননি। তাহলে? রহস্যভেদ করতে রূপাকে আইনি চিঠি পাঠান সঞ্জয়। সাধারণ চিঠিতে হয়নি! উকিলের চিঠিতে যদি উত্তর আসে। কিন্তু না। তাতেও কোনও উত্তর নেই। শেষমেশ উপায় না দেখে ইসলামপুর কোর্টে রূপার বিরুদ্ধে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা করেন সঞ্জয়। লক্ষ্য, মামলায় হাজিরার সময় যদি রূপাকে একবার চোখের দেখা যায়। এবার নড়ল ওপক্ষ। খবর এল, সঞ্জয়ের ইসলামপুর কোর্টে করা বিবাহ বিচ্ছেদের মামলাটি হাওড়া আদালতে সরিয়ে নিয়ে যেতে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন রূপা। এই তো সুযোগ!
[পোশাক পরীক্ষার অছিলায় শরীরে হাত, স্কুলেই নাবালিকা ছাত্রীকে যৌন হেনস্তা]
হাই কোর্টে মামলাটি উঠতেই সঞ্জয়ের আইনজীবী গৌতম ঠাকুর বলেন, “স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে চান সঞ্জয়। তাঁর সঙ্গে সংসার করতে চান। তাই তাঁর একটাই আবেদন, স্ত্রী ফিরে আসুন।” তীব্র আপত্তি করেন রূপার আইনজীবী। বলেন, “এ কী করে সম্ভব। একটা বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলছে।” গৌতমবাবুর ঝটতি জবাব, “আমি এখনই বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা তুলে নেব। শুধু স্ত্রী ফিরে আসুন।” এবার আসরে নামেন বিচারপতি দে। রূপার আইনজীবীকে তিনি প্রশ্ন করেন, “কেন রূপা ফিরবেন না?” রূপার আইনজীবীর উত্তর, “তিনি একজন অসহায় মহিলা। “কিন্তু ওঁকে তো শ্বশুরবাড়ির ঘর করতেই হবে! বিয়েটা তো খেলা নয়।”-পাল্টা বলেন বিচারপতি। এরপর বিচারপতির প্রশ্ন, “চার বছর কেন স্বামীর সঙ্গে দেখা করেননি রূপা? ব্যাপারটা কী? দাদার সংসারে বোঝা না হয়ে এতদিনে স্বামীকে একখানি প্রেমপত্রও তো লিখতে পারতেন!” রূপার আইনজীবী নিরুত্তর। এরপরই বিচারপতি বলেন, “দেখা যাক একটা শেষ চেষ্টা করে। স্বামী-স্ত্রী উভয়কেই আদালতে আসতে হবে। ” আদালতে হাজিরা দিয়ে নীরবতা ভাঙতে হবে রূপাকে। আদালতের এই নির্দেশে আশায় বুক বাঁধছেন সঞ্জয়।