দীপঙ্কর মণ্ডল: পচা মাংসের আতঙ্ক এবার গ্রাস করল শহরের দুই বিশ্ববিদ্যালয়কেও। টন টন পচা মাংস উদ্ধারের ঘটনায় তোলপাড় বজবজ থেকে কলকাতা। পচা মাংসর দৌরাত্ম্য থেকে হস্টেল ও ক্যান্টিনগুলিকে নিরাপদে রাখতে কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে কলকাতা ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। হস্টেলে পড়ুয়াদের জন্য কোথা থেকে মাংস আসছে, কীসের মাংস তা খতিয়ে দেখতে এবার বাজারে ঘুরবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিকরা। ভেন্ডরদের কাছ থেকে যাচাই করে তবেই মাংস ঢুকবে হস্টেল ও ক্যান্টিনগুলিতে। এমনটাই করবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে হস্টেলে ও ক্যান্টিনে সরবরাহ করা মাংসর নমুনা পরীক্ষা করবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষা করা হবে। পচা মাংসের প্রমাণ মিললেই সংশ্লিষ্ট ভেন্ডর বা বিক্রেতার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে দুই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
[কেমিক্যালের গুণে ভাগাড়ের পচা মাংস তাজা হয়ে অনায়াসে পৌঁছাত বিদেশে]
উল্লেখ্য, দিনকয়েক আগেই বজবজের একটি ভাগাড় থেকে মরা পশুর মাংস পাচারের হদিশ মেলে। এরপরই কেঁচো খুড়তে গিয়ে কেউটের সন্ধান পায় পুলিশ। ট্যাংরা, কাঁকিনাড়া, জগদ্দল-সহ একাধিক জায়গায় হানা দেয় পুলিশ। খোঁজ মেলে হিন্দুস্তান কোল্ড স্টোরের। হিমঘর ভাড়া নিয়ে সেখানে জমা রাখা হত টন টন মাংস। যা প্রক্রিয়াকরণের পর সস্তার হোটেলে চালান করা হত। শুধু তাই নয়, তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, চক্র ছড়িয়েছে আন্তর্জাতিক স্তরেও। জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশ ও নেপালেও পাচার হত পচা মাংস। তারপর শুক্রবার এয়ারপোর্ট এলাকা থেকে মুরগির পচা মাংস-সহ দুজনকে পাকড়াও করে পুলিশ। তাদের জেরা করেই নিউটাউনে এক বিশাল খামারের হদিশ মেলে। সেখানে উদ্ধার হয় ১০০ কেজি পচা মাংস। সেই ঘটনার পর থেকে গোটা শহরে আতঙ্কের ছায়া। ভয়ে মুখে মাংস তুলতে চাইছেন না কেউ। বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলগুলিতে বাইরে থেকে মাংস সরবরাহ হয়। ক্যান্টিনেও তাই। এই প্রসঙ্গে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘হস্টেলগুলি চালায় মেস কমিটি। আমি সেক্রেটারি বোর্ডের প্রেসিডেন্টকে নির্দেশ দিয়েছি, হস্টেলগুলি ঘুরে ঘুরে আপনি খোঁজ নেবেন কারা মাংস সাপ্লাই করেন। সেইসব ভেন্ডরদের কাছে গিয়ে খোঁজখবর নিতে হবে। সেরকম হলে নমুনা পরীক্ষা করে দেখা হবে।’ তিনি আরও জানিয়েছেন, হস্টেলে পড়ুয়ারা বাজার করে। তাঁদেরকেও বলা হয়েছে, বাজারে গিয়ে যেন নিজে দাঁড়িয়ে থেকে মাংস কেটে নিয়ে আসে তাঁরা। কোনওভাবে যেন আগে থেকে কাটা মাংস না কেনা হয় তা দেখতে বলা হয়েছে।
[চিকেন আতঙ্কে দূরপাল্লার ট্রেন যাত্রীরা, চিন্তিত আইআরসিটিসি]
একই বক্তব্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের। তিনি জানিয়েছেন, হস্টেল এবং ক্যান্টিনে সরবরাহ করা মাংস পরীক্ষা করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করা হবে। ভেন্ডরদের কাছে গিয়ে যাচাই করেই মাংস হস্টেলে ও ক্যান্টিনে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। কোনওভাবে পড়ুয়ারা অসুস্থ হয়ে যাতে না পড়েন সেইজন্য মাংসের নমুনা ল্যাবে পরীক্ষা করে দেখার কথা জানিয়েছেন তিনি।