সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভাগাড়ের মাংস আতঙ্ক থাবা বসিয়েছে রাজ্যবাসীর স্বাভাবিক জীবনযাপনে। যার জেরে রবিবার বা ছুটির দিনও বাঙালির পাতে মাংস উঠছে না। বরং মাছ বা ডিমে মন দিয়েছে রাজ্যবাসী। কিন্তু শুধু কি অনামী হোটেল বা হাতে গোনা রেস্তরাঁতেই ভাগাড়ের মাংস সরবরাহ হত নাকি এর জাল ছড়িয়েছে আরও গভীরে? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে বৃহস্পতিবার ধর্মতলায় জনপ্রিয় মার্কিন ফুড চেন কেএফসি-র বিপণিতে হানা দিলেন পুরসভার আধিকারিকরা। ধর্মতলা চত্বরে দাপিয়ে বেড়ান প্রায় ৬০-৭০ জন পুর অফিসার। কেএফসির মাংসের নমুনা সংগ্রহ করেন তাঁরা। এরপর ল্যাবরেটরিতে সেগুলির পরীক্ষা হবে। জানা যাবে, আদৌ ওই মাংস নিরাপদ কি না।
শুধু কেএফসি-ই নয়, ধর্মতলা চত্বরে একাধিক স্ট্রিট ফুডের দোকান থেকে আজ মাংসের স্যাম্পেল সংগ্রহ করেন পুরসভার আধিকারিকরা। এদিনের অভিযানের নেতৃত্ব দেন মেয়র পরিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ। এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে আজ বাইপাস সংলগ্ন বেশ কয়েকটি ধাবাতেও অভিযান চালিয়েছেন পুরসভার আধিকারিকরা। সেখান থেকেও সংগ্রহ করা হয়েছে খাবারের নমুনা। শুধু মাংসই নয়, সেই সঙ্গে সস-মশলাতেও ভেজাল মেশানো হয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখেন পুরসভার অফিসাররা। নষ্ট করা হয়েছে প্রচুর ভেজাল খাবার। মেয়র পারিষদ জানিয়েছেন, বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও অনেক খাবারের দোকানের মালিকই বাজে, পচা খাবার নষ্ট করে ফেলেন না। তাই বাধ্য হয়ে পুরসভাকে কড়া পদক্ষেপ করতে হল।
এদিকে, বুধবার গভীর রাতে ভাগাড় কাণ্ডে পুলিশের জালে ধরা পড়ে মাস্টারমাইন্ড বিশ্বনাথ গড়াই ওরফে মাংস বিশু। সোনারপুর থেকে তাকে ধরেছে ডায়মন্ডহারবার পুলিশ। তাকে জেরা করে আরও হিমঘরের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। যা ভাগাড় কাণ্ডে শহরবাসীর উদ্বেগ আরও বাড়াল। পুলিশের অনুমান, কলকাতা ও দুই ২৪ পরগনার সর্বত্র এর শিকড় জাল বিস্তার করে রয়েছে। জেরায় যে তথ্য মিলেছে, তাতে শুধু দক্ষিণ ২৪ পরগনাই নয়, কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন অংশের ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, এমনকী, সেখানকার বাজার ও রেস্তরাঁতেও ভাগাড়ের সেই পচা মাংস চলে যেত বলে আশঙ্কা। আর এই মাংস কীভাবে কার হাতে কোন কোন ভাগে সরবরাহ হবে, তার পুরো বাঁটোয়ারাটাই করত বিশু। ভাগাড় কাণ্ডে রাজাবাজার থেকে এক চাঁইকে জেরার ভিত্তিতেই উঠে আসে মাংস বিশুর নাম।
পুলিশ জানাচ্ছে, বছরের পর বছর এই ব্যবসা চালিয়েছে বিশু। কলকাতার নারকেলডাঙায় সে ভাড়া নিয়েছিল হিমঘরের একটি অংশও। পাশাপাশি শহর ও শহরতলির একাধিক জায়গায় হিমঘরের নিয়ন্ত্রণও তার হাতে ছিল। তার নিজের হিমঘরে ভাগাড়ের পচা মাংস এনে সেখানেই রাসায়নিকে ডুবিয়ে চলত তার প্যাকেটবন্দির কাজ। বাকি যে হিমঘরগুলি তার নিয়ন্ত্রণে ছিল, সেগুলিও ছিল তার নজরবন্দি। ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের পাশাপাশি বাজার ও রেস্তরাঁয় কীভাবে কোন মাংস সরবরাহ হবে, তার সবটাই বলে দিত এই বিশু। অর্থাৎ শুধু পচা মাংস ভাগাড় থেকে এনে হিমঘরে রাখাই নয়, সেখান থেকে তার প্যাকেটবন্দি করে বাজারে পৌঁছে যাওয়া, গোটা অপারেশনটাই চালাত বিশু।
সবমিলিয়ে ভাগাড় কাণ্ডের রেশ এখনই কাটছে না সে কথা স্পষ্ট। বিজেপি, কংগ্রেস দুই দলই ভাগাড়ের মাংস নিয়ে কঠোর পদক্ষেপের দাবিতে আজ পথে নামে। বিধানভবন থেকে মৌলালি পর্যন্ত পদযাত্রা করেন কংগ্রেস সমর্থকরা। অন্যদিকে, পুরসভার বাইরে রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি কর্মীরা। তার আগে ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেল থেকে কর্পোরেশন পর্যন্ত মিছিলও করেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.