অনির্বাণ বিশ্বাস: সেলিব্রিটি ডিস্ক জকি। নৈশ জগতে এটাই তার পরিচিতি। তার ‘সাউন্ড মিক্সিং’-এর জাদুতে হিল্লোল ওঠে শহরের নৈশ ক্লাব থেকে পুল পার্টি। কলকাতা থেকে একমাত্র জকি হিসাবে ডাক পেয়েছেন বলিউডের সেরা অভিনেতার বাড়ির অনুষ্ঠান মাতাতে। নামের পাশে জুড়েছে স্টার ডিজে, নাইট কিং-এর মতো তকমা। শুধু এ শহরই নয়, জয়পুর, গোয়ার মতো শহরেও নাম কিনেছেন নিখিল লাখওয়ানি।
কিন্তু সেই নিখিল লাখওয়ানিই কিনা এবার নারকোটিক্স ব্যুরোর হাতে গ্রেপ্তার হলেন নিষিদ্ধ ড্রাগ কারবারে যুক্ত থাকার অপরাধে। সোমবার সকালে এই খবর সংবাদ মাধ্যমে প্রচার হতেই নেশা ছুটল গতকাল রাতে নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা ‘পার্টি অ্যানিম্যাল’দের। পার্ক স্ট্রিটের এক নৈশ ক্লাবে পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল ১৫ লক্ষ টাকার নিষিদ্ধ মাদক মালানা হাসিস। সেখানে রিসিভার এন্ডে থাকার কথা ছিল শহরের এই ডিজের। বিষয়টি জানাজানি হতেই মুখে কুলুপ এঁটেছে নৈশ ক্লাব কর্তৃপক্ষও। কিন্তু ডিজে নিখিলের এই মাদকচক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়া নিয়ে অবাক প্রায় সকলেই। ওই নৈশ ক্লাবে যাতায়াত রয়েছে এমন অনেকেই নিখিলের এই জড়িয়ে পড়াকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডিজে জানিয়েছে, “নিখিলকে কখনই খারাপ মনে হয়নি। নিখিল যে এইসব নিষিদ্ধ মাদকের কারবারের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে তা দেখে বোঝা যায়নি।”
[হ্যাকারের দখলে হোয়াটসঅ্যাপ, অশ্লীল মেসেজ নিয়ে বিভ্রান্ত যুবক]
তবে নিখিলের এই মাদক চক্রের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পিছনে আরও বড় কোনও মাথা রয়েছে বলে প্রাথমিক অনুমান করছেন নারকোটিক্স ব্যুরোর তদন্তকারীরা। এমনকী নিখিলকে সামনে রেখে শহরের কোন কোন নৈশ ক্লাবে এই মাদক সরবরাহ করা হয়েছে তা জানার চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে টলিউড যোগের গন্ধ পাচ্ছেন তদন্তকারীরা। উঠতি মডেল থেকে অন্য নৈশ ক্লাবের মহিলা ম্যানেজার থেকে জনসংযোগ আধিকারিক সবাই রয়েছেন স্ক্যানারে। একই সঙ্গে নিখিল পার্ক স্ট্রিট ছাড়াও আরও যে যে নৈশ ক্লাবে ডিক্স জকির কাজ করেছে সেই সব নৈশ ক্লাব নিয়েও তথ্য জোগাড় করা হচ্ছে। নিখিলের সঙ্গে শহরের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সম্পর্ক, তাঁদের বাড়িতে যাতায়াত থেকে একই সঙ্গে বিভিন্ন পার্টিতে অংশ নেওয়ার বিষয়গুলিও খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা।
টলিউডের পাশাপাশি বলিউডের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী অভিনেতার সঙ্গেও নিখিলের সখ্য জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। নিখিল ছাড়ার এই মাদক কারবারের সঙ্গে আরও একাধিক ডিজে জড়িয়ে থাকতে পারে বলে অনুমান করছেন গোয়েন্দারা। ২৫ ও ৩১ ডিসেম্বরে এই মাদকের কনসাইনমেন্ট কীভাবে বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করার কথা ছিল তা জানার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা। তবে এই মাদক কারবারের চক্রে শহরের মহিলা ডিজেরাও জড়িত কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
[শহরে মিছিলে শামিল রূপান্তরকামী-সমকামীরা]
নিখিল নিজে এমডি এফএফ পিল নিত বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা। যা ড্রাগ সার্কিটে ‘মেউ মেউ’ বলে বেশি পরিচিত। এছাড়াও নিখিলের এলএসডির নেশা ছিল। তদন্তকারীদের অনুমান, নিখিলদের এই ড্রাগ সার্কিটে রয়েছে শহরের বেশকিছু অভিজাত ঘরের ছেলেমেয়েরা। মূলত দক্ষিণ কলকাতায় তাঁদের বাড়ি বলে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা গিয়েছে। দুর্গাপুজো, কালীপুজো, হ্যালউইন পার্টিতেও এই ড্রাগ সার্কিট সক্রিয় ছিল বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। বেহিসেবি জীবনযাপনের জন্য শুধু নয়, বছর শেষের পার্টিতে ড্রাগ সরবরাহ করে রাতারাতি লাখ টাকা কামানো লক্ষ্য ছিল নিখিলদের। তবে নিখিল পাকচক্রে জড়িয়ে পড়ায় তাকে বিচ্ছিন্ন হিসাবেই দেখছেন কলকাতার অন্যান্য ডিজেরা। মহানগরের এক প্রতিষ্ঠিত ডিজে সুপর্ণার বক্তব্য, একজনের জন্য গোটা পেশাকে খারাপ ভাবার কারণ নেই।
[OMG! প্রেমিকের মধ্যে স্বামীকে খুঁজে পেতে এ কী কাণ্ড মহিলার!]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.