গৌতম ব্রহ্ম: পাকস্থলি, ক্ষুদ্রান্ত্র, লিভার। কিছুই নেই পেটের মধ্যে। চক্ষু চড়কগাছ ডাক্তারদের। গেল কোথায়? সন্ধান মিলল একটু পরেই। সব অঙ্গই লুকিয়ে আছে নাভিমূল থেকে বেরিয়ে আসা একটি বড় থলের মধ্যে। অনেকটা সেই কর্ণের কবচ-কুণ্ডলের মতো। তার উপর শিশুর শরীরে পুরুষাঙ্গ ও যোনির দ্বৈত অবস্থান। ফলে বিরল এই শিশুর লিঙ্গ নির্ণয় করা যায়নি। ‘ফিমেল বেবি’ লিখেও কেটে দেওয়া হয়েছে। লগবুক থেকে নার্সারি রেজিস্ট্রার সর্বত্র লিঙ্গের জায়গায় লেখা হয়েছে ‘অ্যাম্বিগুয়াস বেবি’।
[ শহরের পার্লার ও স্পা-এ ছদ্মবেশে হানা দিয়ে মধুচক্রের পর্দাফাঁস গোয়েন্দাদের, গ্রেপ্তার ৫৪ ]
রবিবার সকাল থেকে এই শিশুটিকে নিয়ে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়াল চিত্তরঞ্জন সেবা সদনে। হাজরা মোড়ের এই সরকারি হাসপাতালেই এদিন সকাল ৬ টা ২২ মিনিটে জন্ম নেয় শিশুটি। ওজন ২ কেজি ৯১৫ গ্রাম। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, শিশুটি বিরল ‘এম্ফালোসেলে’ আক্রান্ত। সেই সঙ্গে রয়েছে ‘সেক্সুয়াল অ্যানোম্যালি’। প্রতি ৪ হাজারে একটি শিশু এমন ত্রুটি নিয়ে জন্মায়। কয়েকদিন আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাদরতলা নাদিয়ালের সানিয়া পারভিন ভরতি হন চিত্তরঞ্জনে। এদিন ভোরে প্রসব বেদনা উঠলে সানিয়াকে লেবার রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। নর্মাল ডেলিভারি হয়। চমকে যান ডাক্তারবাবুরা। শিশুটির নাভিমূল থেকে একটি বড় থলির মতো অংশ বেরিয়ে এসেছে। লিঙ্গ লিখতে গিয়ে বিপাকে পড়েন ডাক্তাররা। শিশুটির পুরুষাঙ্গ ও যোনি দু’টোই রয়েছে। বিভ্রান্ত চিকিৎসকরা প্রথমে ‘ফিমেল বেবি’ লিখে দেন লগ বুকে। ঘণ্টা দু’য়েক পর আরএমও আসেন। শিশুটিকে পরীক্ষা করে বলেন, ‘বাই সেক্সুয়াল দেখা যাচ্ছে, তবু কেন গার্ল বেবি লেখা হল?” ‘গার্ল বেবি’ কেটে অ্যাম্বিগুয়াস করা হয়। হাসপাতালের শিশু চিকিৎসা বিভাগের প্রধান ডা. সুদীপ সাহা জানালেন, ইউএসজিতে এই অস্বাভাবিকতা ধরা পড়লে ভাল হত। অস্ত্রোপচার করে এই শিশুদের সুস্থ করা খুব মুশকিল। তাছাড়া আরও অনেক অস্বাভাবিকতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, শিশুটি আপাতত স্থিতিশীল। নার্সারিতে রেখে তার চিকিৎসা চলছে। সেই সঙ্গে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অবস্থান জানতে আরও কিছু পরীক্ষা করানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ও ক্রিটিক্যাল কেয়ার স্পেশালিস্ট ডা. প্রভাবপ্রসূণ গিরি জানিয়েছেন, মাতৃজঠরে থাকাকালীন ন’সপ্তাহের মাথায় ক্ষুদ্রান্ত্র পেটের বাইরে বেরিয়ে আসে। দশ মাসের পর আবার ‘ফিটাল অ্যাবডোমেনে’ ঢুকে যায়। কিন্তু শিশুর মল অপসারণে সমস্যা হলে অনেক সময় ক্ষুদ্রান্ত্র আর পেটের ভিতরে ঢোকে না। বাইরেই থেকে যায়।
[ আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণে এবার স্কুল চালু করছে কলকাতা পুলিশ ]
এক্ষেত্রে ক্ষুদ্রান্ত্রের সঙ্গে লিভার, পাকস্থলীও বেরিয়ে এসেছে, তাই থলির আকারটি বড়। এমনটাই মনে করছেন চিকিৎসকরা। তাঁদের মত, এই ধরনের শিশুদের অর্ধেকেরই হার্টের সমস্যা থাকে। ৪০ শতাংশের ‘নিউরাল ডিফেক্ট’ হয়। ১৫ শতাংশের ক্রোমোজোমাল অ্যাবনর্মালিটি থাকে। ৩০ শতাংশের ‘সেক্সুয়াল অ্যানোম্যালি’ হয়। ‘গ্যাসট্রোচিসিস’, ‘এডওয়ার্ডস সিনড্রোম’, ‘বেকউইথ-ওয়েডম্যান সিনড্রোমে’র সঙ্গে অনেকে মিল খুঁজে পেয়েছেন। যদিও সবাই একবাক্যে স্বীকার করে নিয়েছেন, একসঙ্গে এত ‘অ্যানোম্যালি’ নিয়ে খুব কম শিশুই জন্মায়। অতি বিরল বললে ভুল হবে না। প্রভাসপ্রসূণবাবুর মত, এই ধরনের অস্বাভাবিকতা এএফপি স্ক্রিনিং, ইউএসজি ও ‘অ্যামনিওসাইটোসিস’ করলে ধরা পড়ে। তবে, আর পাঁচটা শিশুর মতো স্বাভাবিক করে তোলা খুব কঠিন। এই শিশুটির ভবিষ্যৎ নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। প্রভাসবাবু জানিয়েছেন, শিশুটির শরীরে জরায়ু, ফ্যালোপিয়ান টিউব আছে কি না আগে দেখতে হবে। তারপর ক্যারিওটাইপিং করে লিঙ্গটি নিশ্চিত করতে হবে৷
এম্ফালোসেল কি?
মাতৃ জঠরে থাকাকালীন ন’সপ্তাহের মাথায় ক্ষুদ্রান্ত্র পেটের বাইরে বেরিয়ে আসে। দশ মাসের মাথায় আবার ‘ফিটাল অ্যাবডোমেন’—এ ঢুকে যায়। কিন্তু শিশুর মল অপসারনে সমস্যা হলে অনেক সময় ক্ষুদ্রান্ত্র আর পেটের ভিতরে ঢোকে না। বাইরেই থেকে যায়। এবং অঙ্গগুলিক ঘিরে একটি থলি তৈরি হয়।
কতটা বিরল?
প্রতি চার হাজার শিশুর মধ্যে একজনের এম্ফালোসিল দেখা যায়। তবে, এই ধরনের শিশুর দেহে পুরুষাঙ্গ ও যোনির দ্বৈত অবস্থান অতি বিরল।
আর কী সমস্যা?
এই শিশুদের অর্ধেকের হার্টের সমস্যা থাকে। ৪০ শতাংশের ‘নিউরাল ডিফেক্ট’ হয়। ১৫ শতাংশের ক্রোমোজোমাল অ্যাবনর্মালিটি থাকে।
কোন রোগের সঙ্গে মিল?
‘গ্যাস্ট্রোসকাইসিস’, এডওয়ার্ডস সিনড্রোম, বেকউইথ-ওয়েডম্যান সিনড্রোমে’র সঙ্গে অনেক মিল রয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.