ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: বিধানসভায় জবাবি ভাষণে বিজেপিকে নিশানা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, বিজেপি বিধায়করা একটি ধর্মকে বিক্রি করে খাচ্ছেন। রাজ্যের শাসকদলকে তা করতে হয় না। তারা সব ধর্মকে নিয়ে চলতে পারে। মঙ্গলবার দুপুরে যখন বাজেট অধিবেশনে বক্তব্য রাখছেন মুখ্যমন্ত্রী ঠিক সেই সময় বিধানসভার সিঁড়িতে ধরনায় বসেন ‘সাসপেন্ড’ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেখান থেকে তাঁর তোপ, “মা সরস্বতীর অপমানের প্রতিবাদ করায় সাসপেন্ড হতে হয়েছে।” সবমিলিয়ে এদিন এক বেনজির সংঘাতের সাক্ষী রইল বাংলার বিধানসভা।
স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে কাগজ ছুড়ে একমাসের জন্য বিধানসভা থেকে সাসপেন্ড হয়েছেন শুভেন্দু-সহ ৪ বিজেপি বিধায়ক। এরপর রাজ্য সরকারের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ এবং সাসপেনশনের কারণ নিয়ে মিথ্যাচার করায় বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিসও দেওয়া হয়েছে। এর বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর জবাবি ভাষণ বয়কট করে বিজেপি। সিঁড়িতে ধরনা দেয় তারা। এনিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর তোপ, “ওরা আমাকে ফেস করতে পারে না। তাই আমি যখন বলতে আসি ওরা চলে যায়।”
শুভেন্দু অভিযোগ করেছিলেন, রাজ্য সরকার আদপে মুসলিমের সরকার। হিন্দু ধর্মের হয়ে বলতে গিয়ে তাঁকে সাসপেন্ড হতে হয়েছে। বিরোধী দলনেতার অভিযোগ উড়িয়ে পালটা তোপ দাগেন মমতা। বলেন, “একটা ধর্মকে বিক্রি করে খাচ্ছেন। আমি ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ে। ধর্ম বেচে খাই না।” তিনি আরও বলেন, “আমার নামে আপনারা কী বলতে বাকি রেখেছেন? আমার আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে রাজনীতি করব না। বারবার আমায় অসম্মান করতে দেব না। লক্ষ্মণরেখা যদি ভাঙবার চেষ্টা করেন তাহলে জবাব দেওয়ার অধিকার আমার আছে।” এরপরই ধর্মের ইস্যুতে বিজেপিকে কার্যত তুলোধোনা করেন মমতা।
শুভেন্দুকে নিশানা করে মুখ্যমন্ত্রীর জবাব, “বাইরে আপনারা কী বলেছেন আমি দেখেছি। আপনারা বললেন, হিন্দু ধর্ম নিয়ে কথা বলছিলেন বলে সাসপেন্ড! আপনি কবে থেকে হিন্দু ধর্মের নেতা হলেন? হিন্দু ধর্ম এত ছোট? যারা ‘শৃণ্বন্তু বিশ্বে অমৃতস্য পুত্রা’ বলেছেন সেই হিন্দু ধর্ম, এই হিন্দু ধর্ম আলাদা?” রাজ্যে হিন্দু ধর্মের জন্য কী কী করেছেন, তার খতিয়ানও তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “স্বামীজির বাড়ি দখল হয়ে যাচ্ছিল। নিবেদিতার বাড়ি দখল রুখেছি। এগুলো কোন ধর্মের? উত্তর আছে বন্ধুরা? তারাপীঠের মন্দিরের গেট কারা করেছিল? আমরা। দক্ষিণেশ্বরে স্কাইওয়াক আমরা করেছি। কঙ্কালীতলা সতীপীঠ আমরা সাজিয়ে দিয়েছি, মদনমোহন মন্দির করেছি। কালীঘাটে স্কাই ওয়াক আমরা করছি।” গঙ্গাসাগর মেলায় কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়েও সরব হন তিনি।
১৪ এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি পরপর দুদিন ছুটি ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। তা নিয়ে শুভেন্দুরা অভিযোগ করেছিলেন, শবে বরাতের জন্য দুদিন ছুটি দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে এদিন মুখ্যমন্ত্রীর জবাব, “বললেন, আমি মুসলিম লিগ তাই শবে বরাতে দুদিন ছুটি দিয়েছি। আমি চ্যালেঞ্জ করছি।” তিনি জানান, ১৪ তারিখ শবে বরাত এবং ১৫ তারিখ পঞ্চানন বর্মার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ছুটি দেওয়া হয়েছিল। মমতার চ্যালেঞ্জ, “আমায় মুসলিম লিগ বলছেন? আপনারা তো নির্বাচনের সময় সাহায্য নেন মুসলিম লিগের। বেলুন ফাঁস করব? ধর্ম বিক্রি করে খাচ্ছেন, মানুষ নজর রাখছে।”
মমতার বিরুদ্ধে বারবার সংখ্যালঘু তোষণের অভিযোগ উঠেছে। এদিন সেই প্রসঙ্গে জবাব দিতে গিয়ে মমতা বলেন, “বাংলায় ৩০% মুসলিম থাকে। তারা শিক্ষা নেবে না? তাদের একঘরে করতে হবে? মারতে হবে? খুন করতে হবে? এত যে বাজে কথা বলছেন, কেউ যদি একটা আন্দোলনের ডাক দেয় নিজেকে সামলাতে পারবেন তো?”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.