স্টাফ রিপোর্টার: শহরের বেআইনি জলের কোম্পানিগুলির বিরুদ্ধে এবার আইনি পথে মামলা করছে কলকাতা পুরসভা। তার জন্য রাজ্যের ফুড সেফটি কমিশনারের সুবজ সংকেত পাওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু করে দিয়েছে খাদ্য ভেজাল রোধ বিভাগ ও স্বাস্থ্য বিভাগ। এছাড়া, যে দুই বড় বহুজাতিক সংস্থা ও রাজ্য সরকারের অধীনস্ত জলের প্রস্তুতকারক সংস্থা রয়েছে তাদেরকে চিঠি পাঠিয়ে শো-কজ করার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ স্বাস্থ্য অতীন ঘোষ বলছেন, “অভিযুক্ত বেআইনি জলের কারখানাগুলির বিরুদ্ধে সরাসরি ইনফরমাল মামলা করার পথে হাটছে পুরসভা। আর লাইসেন্স আছে এমন সংস্থার ক্ষেত্রে পদ্ধতিগতভাবে শো-কজের পথেই হাঁটা হচ্ছে। পুরসভা অভিযুক্ত সংস্থাগুলিকে বড়জোর চিহ্নিত করতে পারে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে নকল জল বাজেয়াপ্ত করা বা গ্রেপ্তারির ক্ষমতা আমাদের হাতে নেই। তাই এক্ষেত্রে রাজ্যের এনফোর্সমেন্ট ডিজিকে চিঠি লিখে অভিযুক্ত কোম্পানিগুলির বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হচ্ছে।” যাঁরা মানুষের জীবনের মূল্যের কথা মাথায় না রেখে ব্যবসা করে চলেছে তাঁদের সঙ্গে কোনওভাবে আপস করা হবে না বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন অতীনবাবু। অভিযোগ প্রমাণ হলে ছ’মাস অবধি জেল ও ৫ লক্ষ টাকা অবধি জরিমানাও করা হতে পারে।
পুরসভা সূত্রে খবর, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই অভিযানে শহরে একডজনের বেশি বেআইনি জল কারখানা বা ডিস্ট্রিবিউটরের খোঁজ ইতিমধ্যে পেয়েছে কলকাতা পুরসভা। কিন্তু পুরসভার চিন্তা বাড়িয়েছে লাইসেন্স রয়েছে, এমন বেশ কিছু বড় ও নামী সংস্থার জলে মিলেছে কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি। এক্ষেত্রে সরাসরি জলের কোম্পানিকে দায়ী না করলেও পুরসভা চিন্তিত তাঁদের প্যাকেজিং ও ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবস্থা নিয়ে। এর মধ্যেই কেউ ফায়দা তোলার জন্য বড় নামের আড়ালে নকল জল শহরের বাজারে ছড়িয়ে দিচ্ছে বলেও আশঙ্কা করছেন পুরকর্তারা। বৃহস্পতিবারই কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে এসেছে এক রিপোর্ট। সেই রিপোর্টেই ধরা পড়েছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। বহুজাতিক সংস্থার একাধিক জলের নমুনায় বিস্তর অনিয়ম ধরা পড়েছে পুরসভার স্ক্যানারে।
এই খবর প্রকাশিত হতেই শুক্রবার কলকাতা পুরসভায় এসে এক বহুজাতিক জলের সংস্থার কর্তা মেয়র পারিষদ স্বাস্থ্যের সঙ্গে দেখা করার তদ্বির করেন। পুরসভা সূত্রে খবর, সোমবার ওই সংস্থার কর্তা ফের আসবেন অতীনবাবুর সঙ্গে দেখা করতে। বহুজাতিক সংস্থার পানীয় জলে অনিয়ম ধরা পড়ার বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত কলকাতা পুরসভাও। তাঁরা ওই সংস্থাদের শো-কজ করে জলে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতির কারণ দর্শনোর কথা বলবে বলে জানা গিয়েছে। এছাড়া বেআইনিভাবে তৈরি হওয়া জল শহরের বাইরে থেকেও যে শহরে ঢুকছে তা মেনে নিয়েছেন পুরকর্তারা। দুই চব্বিশ পরগনার সীমান্তবর্তী এলাকায় এই জলের কারখানাগুলি চলছে রমরমিয়ে। অথচ তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু জলবাহিত কোনও রোগ হলে সব দায় এসে পড়ছে পুরসভার উপর। তাই বাধ্য হয়েই সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার জন্য আবেদন জানানো হচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.