স্টাফ রিপোর্টার: পেট তো নয়! যেন হার্ডওয়্যারের দোকান! গোবরডাঙার প্রদীপকুমার ঢালির পেটে অস্ত্রোপচার শুরু করার পর সোমবার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের পোড় খাওয়া সার্জনদের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ছিল এটাই। পাকস্থলী ‘ওপেন’ করে তাঁরা দেখতে পান, চর্তুদিকে গিজগিজ করছে পেরেক। শয়ে শয়ে। নানা আকারের। এক এক করে বের করে আনা অসম্ভব কাজ। শেষমেশ চুম্বকের সাহায্য নিতে হল। চুম্বকের টানে রোগীর পেট পরিষ্কার করে পেরেক গোনাও হয়েছে। ৬৩৯টি পেরেক বার করা হয়েছে ৪৮ বছরের প্রৌঢ়ের পাকস্থলী থেকে। সঙ্গে বেশ খানিকটা মাটিও!
কী হয়েছিল ভদ্রলোকের? হাসপাতাল সূত্রে খবর, উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙার বাসিন্দা প্রদীপবাবু স্কিৎজোফ্রেনিয়ার রোগী। বাড়ির লোকের সঙ্গে বিশেষ কথাবার্তা বলতেন না। একা একা নিজের মনে বিড়বিড় করতেন। ডাক্তাররা বলে দিয়েছিলেন ওঁকে জ্বালাতন না করতে। তাই বাড়ির লোকও ওঁকে ঘাঁটাতেন না। রাতের খাবার উঠোনে বসে একাই খেতেন। আর হামেশাই মাটিতে উবু হয়ে বসে থাকতেন। “ও মাটি থেকে নানা উলটোপালটা জিনিস তুলে মুখে দিত। চোখে চোখে তো সবসময় রাখা যেত না।”—এদিন এমনটাই বলেন প্রদীপবাবুর জ্যাঠতুতো ভাই বিশ্বনাথ।
শেষপর্যন্ত পরিণাম যা হওয়ার তাই হল। গত দু’মাস যাবৎ পেটে অসহ্য যন্ত্রণা। বাড়ির লোক গোড়ায় ভেবেছিলেন মামুলি পেট খারাপ। কিন্তু ওষুধে কমেনি। পুজোর পর অবস্থা রীতিমতো সঙ্গিন হয়ে ওঠে। স্থানীয় নার্সিংহোমে তাঁকে দেখেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সার্জন ডাঃ সিদ্ধার্থ বিশ্বাস। তিনি এক্স-রে করিয়ে দেখতে পান প্রদীপবাবুর পেটের মধ্যে কালো কালো কিছু রয়েছে। এন্ডোস্কপিতে ধরা পড়ে ধাতব বস্তুর অস্তিত্ব। বাধ্য হয়ে অপারেশনের সিদ্ধান্ত। শুক্রবার প্রদীপবাবুকে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়। আর এদিন দুপুরে শুরু হয় অপারেশন। পেটে ছুরি চালিয়ে চোখ কপালে ওঠে ডাক্তারদের। সিদ্ধার্থবাবুর কথায়, “পাকস্থলী কাটতে গিয়েই চমকে যাই। সেখানে অগুনতি পেরেক।” হতভম্ব চিকিৎসক বিশ্বাস। প্রায় ১৫ সেন্টিমিটার অংশ কেটে সমস্ত পেরেক বের করা হয়েছে। গুনে দেখা গিয়েছে সবমিলিয়ে ৬৩৯ টি পেরেক।
শুধু পেরেক নয়, পাকস্থলীর মধ্যে থেকে বেশ খানিকটা মাটিও পেয়েছেন চিকিৎসকরা। সিদ্ধার্থ বিশ্বাস জানিয়েছেন, রোগী স্কিৎজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত। মাটি থেকে কুড়িয়ে এটা সেটা মুখে দিত। এভাবেই পেরেক ঢুকে গিয়েছে পাকস্থলীতে। সে পেরেক যে শ্বাসনালীতে চলে যায়নি তাই রক্ষে। আপাতত সুস্থ রয়েছে রোগী। তবে পুরনো লোহার পেরেক মরচে ধরা। সাধারণত এই সমস্ত ক্ষেত্রে পেরেক বের করলেও পাকস্থলীতে সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। রোগীকে তাই আগামী ৭২ ঘন্টা কড়া পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.