নব্যেন্দু হাজরা: দেড় বছরে ধুলো জমেছে আড়াইশো কোটির রেকে। অথচ ত্রিশ বছর পার হওয়া বুড়ো রেককেও ছুটতে হচ্ছে মাইলের পর মাইল। ফলে যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে। প্রায় দিনই নানা যান্ত্রিক সমস্যায় বিকল হচ্ছে মেট্রো। শুধু বুড়ো রেকই নয়। ট্রিপ ঠিক রাখতে অতিরিক্ত ছোটানোর কারণে বিগড়াচ্ছে এসি রেকও। কখনও আগুনের ফুলকি, কখনও দরজা বন্ধ না হওয়া, কখনও আবার বিদ্যুৎ টানতে না পারা। হাজারো সমস্যায় জেরবার হতে হচ্ছে মেট্রোকে। দুর্ভোগ পোয়াচ্ছেন নিত্যযাত্রীরা। সাধারণ মানুষের কাছে কার্যত আতঙ্কের হয়ে উঠছে পাতালযাত্রা।
[প্রশ্নপত্র দেওয়ার নামে প্রতারণা, ছাত্রীর টাকা-গয়না নিয়ে উধাও ফেসবুক বন্ধু ]
নির্দিষ্ট কোনও বেঁধে দেওয়া গণ্ডি নেই। তবু দিনে ৩৫০-৪০০ কিলোমিটার গড়ে ছোটার কথা। তার বদলে পরিষেবা ঠিক রাখতে একেকটি রেককে ছোটানো হচ্ছে ৫৫০-৬০০ কিলোমিটার। ফলে যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে। শুধু বুড়ো বা আধবুড়ো রেকই নয়। এসি রেকেও প্রায় নিত্যদিনই দেখা দিচ্ছে নানা সমস্যা। কর্তৃপক্ষের দাবি, ২৭২ থেকে ৩০০ ট্রিপ ট্রেন চালাতে গিয়েই সমস্যা বেড়েছে। কারণ, পরিষেবা বাড়ায় বেশিরভাগ এসি রেককেই কম করে অতিরিক্ত দু’ট্রিপ করে বেশি ছুটতে হচ্ছে। কোনও ট্রেনকে চার ট্রিপও। ফলে বিগড়াচ্ছেও দ্রুত। সমস্যা বাড়ছে যাত্রীদের। নতুন আসা চারটি রেক নামানো গেলে বাকিদের উপর চাপ কমত। সেই লক্ষ্যেই তা আনা হয়েছিল আইসিএফ থেকে। কিন্তু দেড় বছর পার। তা এখনও নামানো যায়নি লাইনে। যাত্রী নিয়ে ছোটা হয়নি ৬৫ কোটির রেকের। চারটি রেকে আড়াইশো কোটি টাকার বেশি খরচ হলেও তাতে আদৌ যাত্রী তোলা যাবে কি না তা নিয়ে এখন সংশয়ে কর্তারাই।
[মন্দিরে ভক্তদের ভিড়ে গোয়েন্দা অফিসারের মানিব্যাগ উধাও]
মেট্রোসূত্রে খবর, নিয়ম অনুযায়ী একেকটি রেকের ৭-৮টি ট্রিপ করার কথা। তাতে এসি বা নন এসি যে কোনও রেকেরই স্বাস্থ্য ভাল থাকে। কিন্তু কলকাতা মেট্রোয় ট্রিপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই রুটিন বদলে যায়। বিশেষত এসি রেকের। ২৭ কিলোমিটার করে যাতায়াতে এক ট্রিপে একটি রেককে ছুটতে হয় ৫৪ কিলোমিটার। মানে সাত ট্রিপ করলেই ৩৫০ কিলোমিটারের বেশি ছোটানো হয়। কিন্তু তার বদলে অনেক এসি রেককেই পরিষেবা স্বাভাবিক রাখতে ছোটানো হয় ৫৫০ কিলোমিটার। মানে ১০ ট্রিপ। বয়সের ভারে কোনও কোনও নন এসি রেককে ৩৫০ কিলোমিটারের কমও ছোটানো হয় অনেক সময়। সেক্ষেত্রে চাপ বাড়ে এসির উপর। তাতেই বাড়ে আরও বিপত্তি। রেকগুলো বিশ্রাম পায় না। মেট্রোর এক কর্তার কথায়, আইসিএফ যেমন খুশি রেক এখানে পাঠিয়ে দিয়েছে। তাই তো চারটে রেক বসে আছে। এখানকার লাইনের কোনও পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করেনি। নানা সমস্যায় জেরবার রেকগুলি তো নামানোই গেল না। একেকটির দাম ৬৫ কোটি টাকা। অথচ তা কাজেই লাগল না। শেষধাপে যে এসি রেকগুলি এসেছিল, সেগুলিতেও নানা সমস্যা ছিল। অনেক রকমভাবে তা শোধরানো গিয়েছে। তাঁর কথায়, নতুন রেক না এলে কিছু করার নেই। এভাবেই চলবে। যাত্রী নিরাপত্তা থাকবে তলানিতেই।