স্টাফ রিপোর্টার: ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে মেধাবী তরুণ চিকিৎসকের মৃত্যুরহস্যে নয়া মোড়। মৃতের পকেট থেকে উদ্ধার হল কয়েক পাতার চিঠি। আর সেখানেই পুলিশের সন্দেহ ও আশঙ্কা, প্রেমিকার চাপে কিংবা ব্ল্যাকমেলিংয়ের জেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন এমএস পাঠরত জুনিয়র ডাক্তার। থাকতে পারে ত্রিকোণ প্রেমের জেরও। মৃত্যুর কিছু আগেই উত্তেজিত হয়ে মোবাইলে কথা বলতেও দেখা গিয়েছিল তাঁকে। সিসিটিভি ফুটেজে সেই চিত্রও রয়েছে পুলিশের কাছে। নির্দিষ্ট কোনও মহিলা এক্ষেত্রে যুক্ত রয়েছে কি না, তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। মহিলাকে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিতও করা গিয়েছে বলে সূত্রে খবর।
উদ্ধার হওয়া চিঠিটি আপাতত পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। কার চিঠি, কে লিখেছিল, চিঠির বয়ানেই বা কী রয়েছে, তা পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। পুলিশের ধারণা, চিঠিটি সম্ভবত কোনও মহিলা ওই চিকিৎসককে লিখেছিলেন। কেন ওই চিঠি পকেটে নিয়ে ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করলেন চিকিৎসক সোমক চৌধুরী, তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। তাঁর মোবাইলের কললিস্টও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
[অমানবিক! অসুস্থ বাবাকে ঘরে আটকে রেখে ভ্রমণে পুত্র ও পুত্রবধূ]
প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, ঘটনার ঘণ্টাখানেক আগে এটিএম থেকে টাকা তোলেন তিনি। এর পর হাসপাতালে মূল গেটের সামনে দাঁড়িয়ে মোবাইলে প্রায় এক ঘণ্টা কারও সঙ্গে প্রচণ্ড উত্তেজিত হয়ে কথা বলছিলেন। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যুর ঘটনা। সোমকের সহপাঠীদের সঙ্গেও কথা বলছে পুলিশ। জানা গিয়েছে, বেশ কয়েকদিন ধরে মোবাইলে কথা বলা ও চ্যাটিংয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখা গিয়েছে সোমককে। কথাবার্তা দীর্ঘও হয়েছে। মোবাইলের কললিস্ট ঘেঁটে জানার চেষ্টা হয়েছে, তিনি কে? তাহলে কি ওই মহিলার সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের জেরেই আত্মহননের পথ বেছে নিতে হয়েছে মেধাবী তরুণ চিকিৎসককে? ওই মহিলা কি মেডিক্যালের ছাত্রী? সোমকের প্রেমের সম্পর্কে কি কোনও তৃতীয় ব্যক্তির প্রবেশ হওয়ার ফলেই তা মেনে নিতে পারেননি আবেগপ্রবণ সোমক? খুব দ্রুত রহস্যভেদ হবে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হয়েছে। সেখানে ওই চিকিৎসকের ঝাঁপ দেওয়ার ফুটেজ স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে। ফুটেজের প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী, ওই সময় ছাদে একাই ছিলেন সোমক।
[নখের আঁচড়ের সূত্র ধরে বেলেঘাটায় ডাকাতির তদন্তে গোয়েন্দারা]
তবে সোমকের পরিবার, প্রতিবেশীরা অবশ্য এই মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে মনে করছেন না। তাঁরা এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেছেন। হুগলির বৈদ্যবাটির রামকৃষ্ণ অ্যাপার্টমেন্টের প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, সোমকের মধ্যে কোনওদিনই আত্মহত্যার কোনও প্রবণতা ছিল না। বরাবরই শান্ত স্বভাবের মেধাবী ছাত্র ছিলেন সোমক। তিনি কোনওভাবে আত্মহত্যা করতে পারেন না। এর পিছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে। কেউ বা কারা তাঁকে ছাদ থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিতে পারে। সরিষা রামকৃষ্ণ মিশনের প্রাক্তন মেধাবী ছাত্র কোনওরকম নেশা করতেন না ও তাঁর কোনও মহিলার সঙ্গে প্রণয়ের সম্পর্কও ছিল না বলে জানিয়েছেন আত্মীয়-প্রতিবেশীরা।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাত ৯টা নাগাদ ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের সার্জারি বিল্ডিংয়ের ছ’তলার ছাদ থেকে ঝাঁপ দেন সোমক। বছর ৩৫-এর সোমক ন্যাশনাল মেডিক্যালের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনি। বর্তমানে এমএস পড়ছিলেন। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেছিলেন সোমক। জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে আচমকাই কাউকে কিছু না বলে চুপি চুপি ছাদে উঠে যান তিনি। কেউ খেয়ালই করেননি। সেই সময় হাসপাতালের ছাদের গেট খোলাই ছিল। রাত ন’টা নাগাদ আচমকাই ব্লাড ব্যাঙ্কের সামনে আছড়ে পড়ে দেহটা। বিকট আওয়াজে চমকে ওঠেন হাসপাতালের কর্মচারীরা। দেখেন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন একজন। সামনে এসে সোমককে পড়ে থাকতে দেখেন তাঁরা।
[নির্ভয়া কাণ্ডের ছায়া, রাজধানীতে মহিলাকে অপহরণ করে গণধর্ষণ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.