অর্ণব আইচ: রীতিমতো পরীক্ষায় ‘পাশ’ করে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন সিআইএসএফ কনস্টেবল। উত্তীর্ণ হয়েছিলেন প্রশিক্ষণে। প্রশিক্ষণের শেষে গার্ডেনরিচ শিপ বিল্ডার্সে শুরু হয়েছিল ডিউটিও। কিন্তু একটি উড়ো চিঠি ও তার সঙ্গে ওই জওয়ানের হাতের লেখা ওলটপালট করে দিল পুরো হিসাব। বেশ কয়েক মাস চাকরি করার পরও ধরা পড়লেন ‘জাল’ সিআইএসএফ কর্মী। জানা গেল, আনমোল কুমার নামে ওই জওয়ান আদৌ এসএসসি পরীক্ষায় বসেননি। তার বদলে পরীক্ষা দিয়েছিলেন এক ‘ডামি’ পরীক্ষার্থী। এই তথ্য সামনে আসতেই সিআইএসএফ কর্তাদের চক্ষু চড়কগাছ। এই বিষয়ে গার্ডেনরিচ থানায় কেন্দ্রীয় বাহিনী সিআইএসএফ-এর পক্ষ থেকে অভিযোগ দায়ের করা হয়। বুধবার আনমোল কুমারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁকে জেরা করে ওই ‘ডামি’ পরীক্ষার্থীর সন্ধান চালাচ্ছেন পুলিশ আধিকারিকরা। এর আগেও শহরে বিভিন্ন সময়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর পরীক্ষায় ধরা পড়েছে ‘ডামি’ পরীক্ষার্থী। প্রাথমিকভাবে ধৃত জওয়ানকে জেরা করে পুলিশের সন্দেহ, ওই ‘ডামি’ পরীক্ষার্থীর সঙ্গে পরিচয় রয়েছে তাঁর। গার্ডেনরিচ শিপ বিল্ডার্স থেকে কয়েক বছর আগে পাক চর আইএসআই চক্র ধরা পড়ার পর কেন্দ্রীয় সরকারের এই যুদ্ধজাহাজ কারখানার নিরাপত্তার বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা নেওয়া হয়। সেখানে এই গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় কীভাবে একজন ভুয়া সিআইএসএফ কনস্টেবল দিনের পর দিন ডিউটি করেছেন, তা নিয়ে উঠে এসেছে প্রশ্ন।
[ কেরল থেকে তৃতীয় ট্রেন হাওড়া হয়ে গেল শিবসাগর ]
পুলিশ জানিয়েছে, আনমোল কুমার নামে ওই সিআইএসএফ জওয়ান কয়েক মাস আগে গার্ডেনরিচের যুদ্ধজাহাজ কারখানায় ডিউটি শুরু করেন। ‘প্রবেশন’ পিরিয়ডে ছিলেন তিনি। স্বয়ংক্রিয় রাইফেল হাতে টহলও দিচ্ছিলেন। হঠাৎই সিআইএসএফ-এর দপ্তরে আসা একটি উড়ো চিঠি দেখেই চমকে ওঠেন ওই কেন্দ্রীয় বাহিনীর কর্তারা। ওই চিঠিতে লেখা ছিল, গার্ডেনরিচের যুদ্ধজাহাজ কারখানায় আনমোল কুমার নামে যে জওয়ান ডিউটি করছেন, তিনি আসলে ভুয়া। তিনি আদৌ এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেননি। তাঁর হয়ে পরীক্ষা দিয়েছিলেন অন্য একজন। প্রথমে কর্তাদের মনে হয়েছিল, চিঠিটি ভুয়া। এই বিষয়ে ওই কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিজস্ব গোয়েন্দা বাহিনীর আধিকারিকরা তাঁকে জেরা শুরু করেন। কিন্তু আনমোল দাবি করেন, তিনি রীতিমতো পরীক্ষায় পাশ করে চাকরি পেয়েছেন। প্রশিক্ষণ নিয়ে যোগ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারের কারখানায়। কিন্তু জেরার সময়ই খটকা লাগে আধিকারিকদের। তাঁরা যাচাই করার জন্য আনমোলের পরীক্ষার খাতা খুঁজে বের করেন। ওই একই উত্তর তাঁকে লিখতে বলেন। তিনি লিখতে শুরু করতেই ধরা পড়ে যায় বুজরুকি। দেখা যায়, আসল ও নকল আনমোলের হাতের লেখায় রয়েছে বিস্তর ফারাক। সেই সূত্র ধরে জেরা করতেই ভেঙে পড়েন ওই জওয়ান। জানান, ‘ডামি’ পরীক্ষার্থীর সাহাযে্যই তিনি পরীক্ষায় পাস করে চাকরি পেয়েছেন। জেরা করে নিশ্চিত হওয়ার পর আনমোলকে গ্রেফতার করা হয়। এভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনীটিতে আরও কোনও ‘ভুয়া জওয়ান’ রয়েছেন কি না, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
[ রাজ্যে এল বাজপেয়ীর চিতাভস্ম, বৃহস্পতিবার গঙ্গাসাগরে অস্থি-বিসর্জন ]