শুভঙ্কর বসু: হানিমুনে গিয়ে স্বামী জোর করে মদ খাইয়েছে। শারীরিক সম্পর্কও করেছে জোর করে।
ব্যাংকক থেকে মুধুচন্দ্রিমা সেরে দেশে ফিরেই স্বামীর নামে থানায় এহেন বিস্ফোরক অভিযোগ সদ্য বিবাহিত স্ত্রীর। নববধূর রোষের হাত থেকে রেহাই পাননি শ্বশুর-শাশুড়িও। তাদের বিরুদ্ধেও থানায় ৪৯৮-এ ধারায় বধূ নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন নতুন বউ।
আর এহেন অভিযোগের ঠেলায় এখন রাতে ঘুম উড়েছে ডায়মন্ড হারবারের চৌধুরি পরিবারের। পাড়ায় মুখ দেখানোর জো নেই। দিশেহারা হয়ে শেষমেষ এফআইআর খারিজের দাবিতে হাই কোর্টে ছুটতে বাধ্য হয়েছেন সদ্য বিবাহিত রোহিত চৌধুরি। আসলে কী ঘটেছিল? নববধূর অভিযোগটাই বা কী? দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারের শ্যামনিবাস কলোনির বাসিন্দা রোহিতের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয় কলকাতার বিধান সরণির বাসিন্দা রুচিকা মাটিয়ার। খবরের কাগজে ‘পাত্রী চাই’ বিভাগে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল রোহিতের পরিবার। সেই সূত্রে যোগাযোগ হয় রুচিকার পরিবারের সঙ্গে। দুই পরিবারের সম্মতিতেই চলতি বছরের ২৯ নভেম্বর বিয়ে ঠিক হয়। একমাত্র ছেলের বিয়েতে খরচে কোনও কসুর করেনি চৌধুরি পরিবার।
বিয়ে মিটতেই ব্যাংককে হানিমুনে যাওয়ার আবদার করে রুচিকা। নতুন বউয়ের ইচ্ছামতো ৪ ডিসেম্বর ব্যাংককে যাওয়ার প্লেনে ওঠে নবদম্পতি। ৫ তারিখ পৌঁছে সেখানকার নামী এক রিসর্টে ওঠেন তাঁরা। কিন্তু তার পরে সেখান থেকে ফিরে আসতে চায় রুচিকা। ফিরে আসতে বাধ্য হন রোহিত।
এরপরই আসল বিপত্তির শুরু। দেশে ফিরেই স্বামীর বিরুদ্ধে মদ খাইয়ে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ করেন রুচিকা। এখানেই শেষ নয়। ৭ তারিখ এসএসকেএমে শারীরিক পরীক্ষা করান। তারপরই শ্যামপুকুর থানায় স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ির বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করেন রুচিকা। শ্বশুর শাশুড়ির বিরুদ্ধে কী অভিযোগ? নতুন বউকে হানিমুনে সোনার গয়না পরে যেতে বারন করেছিলেন রোহিতের মা চন্দ্রাবতী চৌধুরি। বধূনির্যাতনের সেই বহুল চর্চিত ৪৯৮-এ ধারা লাগু হওয়ার পর থেকেই বিতর্কের শিখরে এই আইন। অভিযোগ, একাধিক ক্ষেত্রেই এই আইনকে ব্যবহার করে স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনদের শায়েস্তা করে বধূ। গোটা দেশ জুড়ে বধূ নির্যাতনের লক্ষ লক্ষ মামলা ঝুলে থাকায় কিছুদিন আগেই এই আইনে বদল করেছে সুপ্রিম কোর্ট। এখন আর ৪৯৮-এ ধারায় অভিযোগ পড়লেই সরাসরি অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা যায় না।
কিন্তু এতসব কিছুর পরও ৪৯৮-এ ধারায় প্রতিদিন থানাগুলিতে ঝুড়ি ঝুড়ি অভিযোগ জমা পড়ছে। যেমনটা এক্ষেত্রেও হয়েছে বলে অভিযোগ। বিয়ের সাত দিন কাটতে না কাটতেই নির্যাতনের অভিযোগকে ‘শকিং’ বলেই মন্তব্য করেছে কলকাতা হাই কোর্ট। মামলাটি শুনানির জন্য উঠেছিল বিচারপতি দেবীপ্রসাদ দের শীত অবসরকালীন বেঞ্চে। রোহিতের আইনজীবী রাজদীপ মজুমদার ও প্রীতম রায়ের বক্তব্য শোনার পর বিস্মিত বিচারপতির মন্তব্য, “মাত্র সাত দিনের বিবাহিত জীবনে নির্যাতনের অভিযোগ!” দু’পক্ষকে অবশ্য আপসে বসে বিষয়টি মিটিয়ে নিতে সময় দিয়েছে আদালত। ছুটি কাটিয়ে আদালত খুললে ফের মামলার শুনানি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.