স্টাফ রিপোর্টার, বারাসত: আবারও প্রকাশ্যে শুটআউট। গুলি-বোমায় কেঁপে উঠল মধ্যমগ্রাম। সেলুনে ঢুকে গুলি করে খুন করা হল সদ্য জেল থেকে ছাড়া পাওয়া এক প্রোমোটারকে। অনেকটা গ্যাংওয়ার।
শুক্রবার বেলা সাড়ে দশটা নাগাদ ব্যস্ত মধ্যমগ্রাম চৌমাথার কাছের বঙ্কিমপল্লিতে সেলুনে চুল-দাড়ি কামাতে বসেছিলেন প্রমোটার প্রকাশ দে সরকার ওরফে ঢাকাই গৌতম। গৌতম ভাইপোকে সিগারেট কিনতে পাঠান। ভাইপো পাপাই জানান, ‘ফিরে আসতেই দেখি, দশ-বারো জন কাকাকে গুলি করছে। হেঁটে হেঁটে ফিরে যাচ্ছিল। আমাকে দেখে ওরা বন্দুক দেখায়। আমি পালিয়ে যাই।’ কয়েকজনের মাথায় হেলমেট পড়া ছিল। বিজয়নগরের দিকে ওরা বাইক রেখে এসেছিল। খুব কাছ থেকে পরপর তিনটি গুলি চালানো হয় গৌতমের মাথা লক্ষ্য করে। ঝাঁঝরা করা হয় গুলিতে। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন গৌতম। সেলুন থেকে বেরিয়ে দুষ্কৃতীরা বোমা ছুড়তে থাকে। বেশ কয়েকটি বোমা মেরে তারা পালিয়ে যায়।
[শরীরে অক্সিজেনের অভাবেই মৃত্যু ঐত্রীর, উল্লেখ ময়নাতদন্তের রিপোর্টে]
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দু’টি দলে এসেছিল দুষ্কৃতীরা। একটি দল চৌমাথার দিকে যায়। অন্যদল সোদপুর রোড ধরে পালিয়ে যায়। গৌতমের ভাই কার্তিক দে সরকার দাবি করেছেন, স্থানীয় প্রোমোটিং ব্যবসায়ী কুরু দুষ্কৃতীদের গৌতমকে চিনিয়ে দিতে সাহায্য করেছে। গৌতমকে চিনিয়ে দিতেই সেলুন থেকে বাকি সবাইকে বের করে দেয় দুষ্কৃতীরা। তারপরই গুলি চালানো হয়। কার্তিককেও ধাওয়া করে ওরা। চালানো হয় গুলিও। পাঁচিল টপকে কোনওক্রমে পালান কার্তিক। পুলিশ সকালেই কুরুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে।
জনবহুল ওই এলাকায় ব্যস্ত সময়ে এমন ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সাধারণ মানুষ। গৌতম কিছুদিন আগেই মাদকপাচার মামলায় জেল খেটে এসেছেন। পুজোর আগে মাদক ও অস্ত্রসমেত পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিলেন তিনি। তারপর থেকে প্রোমোটারির ব্যবসায় বেশি করে জড়িয়ে পড়েন। এর আগেও তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছিল কয়েকজন দুষ্কৃতী। এই নিয়ে তিনবার হামলা চলেছে। ইমারতি-জমি-বাড়ির ব্যবসায় অন্য একটি গোষ্ঠীর সঙ্গে তাঁর লড়াই ছিল বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। প্রদীপ দে ওরফে পদ-ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে তাঁর গোলমাল লেগে থাকত বলে অভিযোগ। সম্প্রতি রেল ব্রিজের নিচে জোড়া খুনে অভিযুক্ত পদ জেলেই মারা যান। গৌতমের ভাইপোর অভিযোগ, ‘পদর ভাগ্নে টুবাই খুনের সময় কাছেই ছিল। ব্যবসায় প্রতিদ্বন্দ্বীকে সরাতেই এই ছক কষা হয়েছে।’ গৌতমের ভাই শম্ভু দে সরকারও অভিযোগ করেছেন, মধ্যমগ্রামেরই অন্য একটি গোষ্ঠীর লোকেরাই এই খুন করিয়েছে। বিরাটির কুখ্যাত দুষ্কৃতী রাজা দত্ত ও সাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেছে নিহতের পরিবার।
[স্ত্রীকে নিষিদ্ধপল্লিতে বিক্রি করে দেবে ‘অপহরণকারী’ যুবক, হাই কোর্টে স্বামী]
এদিন গৌতম গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরই তাঁকে যশোর রোডের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপরই গৌতম-ঘনিষ্ঠরা যশোর রোড অবরোধ করেন দোষীদের শাস্তির দাবিতে। মধ্যমগ্রাম থানায়ও বিক্ষোভ দেখানো হয়। বারাসতের এসডিপিও দ্রুত সেলুনে এসে কার্তুজ নিয়ে যান। বন্ধ করে দেওয়া হয় সেলুনও। দোষীদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।