Advertisement
Advertisement

গোয়েন্দাদের জেরায় ভেঙে পড়লেন ‘ডাকাবুকো’ প্রিন্সিপাল শর্মিলা

জি ডি বিড়লা কাণ্ডে নির্যাতিতার বাবার দাবি, 'নো অ্যারেস্ট, নো মিটিং'।

GD Birla principal broke down before police officials at Lalbazar
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:December 5, 2017 7:17 am
  • Updated:September 21, 2019 11:37 am

স্টাফ রিপোর্টার: গোয়েন্দাদের জেরায় প্রায় ভেঙে পড়লেন জি ডি বিড়লা স্কুলের প্রিন্সিপাল শর্মিলা নাথ। মঙ্গলবার সকালে ‘ডাকাবুকো’ প্রিন্সিপাল লালবাজারে আসেন। আগে থেকেই গোয়েন্দাদের কাছে প্রশ্নমালা তৈরি ছিল। সরাসরি জেরা শুরু হয়। সূত্রের খবর, প্রথমে কিছুটা কড়া মনোভাব দেখান শর্মিলা। ৩০ নভেম্বর শিশু নির্যাতনে তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাঁকে যে গ্রেফতার করা হতে পারে সেকথা ভেবেই সম্ভবত কিছুটা নরম হন প্রিন্সিপাল। অন্যদিকে, এদিনই দুপুরে অভিভাবকরা জি ডি বিড়লা স্কুলে আলোচনায় বসার কথা। তবে নির্যাতিতা শিশুর বাবা এই আলোচনায় অংশ নেবেন না বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘নো অ্যারেস্ট নো মিটিং’। প্রিন্সিপালকে গ্রেপ্তার করার দাবি জানিয়েছেন অন্য অভিভাবকরাও।

[ছাত্রীদের সঙ্গে অভব্য আচরণ করলেই জানিয়ে দেবে নয়া যন্ত্র]

শর্মিলা লালবাজারে আসার আগে থেকেই কী কী প্রশ্ন করা হবে তার খসড়া তৈরি রেখেছিল পুলিশ। নির্যাতিতার মা জানিয়েছেন, শিশুর পোশাকে রক্ত লেগে থাকা অবস্থায় বাথরুম থেকে বের করে এনেছিলেন এক ‘লেডি অ্যাটেনডেন্ট’। ওই অ্যাটেনডেন্টের বিষয়ে তিনি কতটা জানেন। ওই অ্যাটেনডেন্ট কি তাঁকে জানিয়েছিলেন যে শিশুটি অসুস্থ? জানার পর তিনি কি ব্যবস্থা নিয়েছিলেন? ঘৃণ্য অপরাধের কথা জানার পরও কেন তিনি পুলিশকে জানাননি? ঘটনা জানা সত্ত্বেও কেন তিনি মিডিয়ায় ক্রমাগত মিথ্যা কথা বলেছেন? তিনি কি অভিযুক্তদের আড়াল করার জন্যই লাগাতার মিথ্যা বলে গিয়েছেন? জেরায় শর্মিলা পুলিশের কাছে দাবি করেন তিনি ঘটনার কথা জানতেন না। যদি শর্মিলা ঘটনা জানার কথা অস্বীকার করার পর পুলিশের প্রশ্ন, চার বছরের ছাত্রীকে নিয়ে যখন গোটা শহর উত্তাল তখন তিনি কি শিশুটির শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিয়েছেন? ২০১৪ সালে এক শিশু নিগ্রহের শিকার হয়। তখনও স্কুলের দায়িত্বে ছিলেন শর্মিলা। তারপর কেন তিনি নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়াননি? সম্প্রতি শিশু নির্যাতনে অভিযুক্ত দুই শিক্ষক অভিষেক ও মফিজুদ্দিন ওইদিন কখন স্কুলে এসেছিলেন? তাঁরা স্কুল থেকে কখন বেরিয়ে যান? ওই দিন কি পিটির ক্লাস ছিল? অন্যদিকে আইন ভেঙে তিনি কেন নির্যাতিতার নাম প্রকাশ করেছেন সে প্রশ্নও করা হয় শর্মিলাকে। তিনি আমতা আমতা করে বলেন, তিনি ইচ্ছাকৃত এই অপরাধ করেননি।
যাদবপুর থানায় এদিন লেডি অ্যাটেনডেন্টকে ডেকে জেরা করা হয়। যাদবপুর থানার রিপোর্টের সঙ্গে লালবাজারে শমির্লার বয়ান মেলানো হয়। টানা জেরায় প্রায় ভেঙে পড়েন শর্মিলা। তাঁর বক্তব্যে বেশ কিছু অসংগতি লক্ষ্য করে পুলিশ। তাঁর আগের বক্তব্যের সঙ্গে এদিনের কথায় অমিল পাওয়া যায়। অধস্তন দুই শিক্ষককে বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন কি না তা জানার চেষ্টা করেছেন গোয়েন্দারা। একইসঙ্গে তিনি দুই অভিযুক্ত অভিষেক রায় ও মহম্মদ মফিজুদ্দিনকে বাঁচানোর জন্য তথ্য লোপাট করেছিলেন কি না, তা-ও জানার চেষ্টা করেছেন গোয়েন্দারা। তদন্ত শুরু করার পর উঠে এসেছে বহু প্রশ্ন। সেগুলির উত্তর পেতে বিশেষ তদন্ত কমিটির সাহায্য নিয়েছে লালবাজার। আগেই শর্মিলা নাথকে নোটিস পাঠিয়ে লালবাজারে ডেকে পাঠানো হয়। সেইমতো এদিন সকালে লালবাজারে হাজির হন প্রিন্সিপাল। স্কুলে শিক্ষকদের হাজিরা খাতাও সঙ্গে নিয়ে যান তিনি।

Advertisement

[নির্যাতিতার নাম প্রকাশ, ফের বিতর্কে জি ডি বিড়লার প্রিন্সিপাল]

বিশেষ তদন্তকারী কমিটিতে রয়েছেন রাজ্যের শিক্ষা দফতর, শিশু সুরক্ষা কমিশন, দিল্লির আইসিএসই বোর্ড ও কলকাতা পুলিশের সদস্যরা। পুলিশের পক্ষে কমিটিতে আছেন ডিসি (ডিডি) ২ নীলু শেরপা চক্রবর্তী। অধ্যক্ষর বিরুদ্ধে প্রতারণা ও পকসো আইনের ২১ ধারায় যে অভিযোগগুলি আনা হয়েছে, তার ভিত্তিতেই শুরু হয়েছে তদন্ত। পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ৪২০ ও ১২০বি ধারায় প্রতারণা ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগও আনা হয়েছে অধ্যক্ষর বিরুদ্ধে। অভিযোগ উঠেছে, যে বিল্ডিংয়ে ওই যৌন নিগ্রহের ঘটনাটি ঘটেছে, সেটির বৈধতা নেই। মূলত সেই কারণেই প্রতারণার অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এই ক্ষেত্রে কোনও ভুয়া নথিপত্র ব্যবহার করা হয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখবেন গোয়েন্দারা। এ ছাড়াও সিসিটিভি না থাকা থেকে শুরু করে যে গাফিলতির অভিযোগগুলি উঠে এসেছে, সেগুলি নিয়েও তদন্ত হবে। এই বিষয়ে তদন্ত কমিটিতে থাকা আইসিএসই-র পদাধিকারিকের সাহায্য নেবেন পুলিশ আধিকারিকরা।

Advertisement

[চাপের মুখে নতিস্বীকার, সাসপেন্ড এম পি বিড়লা স্কুলের অভিযুক্ত কর্মী]

পকসো আইনেই বলা আছে, যে ব্যক্তি কোনও শিশু বা নাবালিকার যৌন নিগ্রহে প্ররোচনা দেবে বা তথ্য গোপন করবে, তার বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। প্ররোচনার ক্ষেত্রে এই আইনে বলা আছে যে, কেউ যদি অপরাধীদের যৌন নিগ্রহ করতে উসকে দেয়, সেই ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। অভিযুক্ত ওই অপরাধের ক্ষেত্রে মূল অপরাধীদের সঙ্গে কোনও ষড়যন্ত্র করে ও ইচ্ছাকৃতভাবে অভিযুক্ত অপরাধীকে আশ্রয়, সাহায্য বা বাঁচানোর চেষ্টা করলেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি দুই অভিযুক্ত অভিষেক রায় ও মহম্মদ মফিজুদ্দিনকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন। তাদের আড়াল করার চেষ্টা করছেন। অধ্যক্ষ এমনও দাবি করেছেন যে, ক্লাস শেষ করে দুই অভিযুক্তই দুপুর দু’টো থেকে আড়াইটের মধ্যে স্কুল থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। একই দাবি করে দুই অভিযুক্তও। কিন্তু তার কোনও প্রমাণ মেলেনি।

[জি ডি বিড়লার প্রিন্সিপালকে গ্রেপ্তারির দাবিতে স্কুলে অবস্থান বিক্ষোভ রূপার]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ