Advertisement
Advertisement

নির্যাতিতার নাম প্রকাশ, ফের বিতর্কে জি ডি বিড়লার প্রিন্সিপাল

এভাবে শিশুর ভবিষ্যৎ নষ্ট করার চেষ্টা হচ্ছে, অভিযোগ ক্ষুব্ধ অভিভাবকদের।

GD Birla Rape case: guardians furious over disclosing victim's name
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:December 5, 2017 2:59 am
  • Updated:September 21, 2019 12:28 pm

স্টাফ রিপোর্টার: শিশুর যৌন হেনস্তার ঘটনায় জি ডি বিড়লা স্কুলের অধ্যক্ষ শর্মিলা নাথকে নিয়ে ক্ষোভের পারদ প্রতিনিয়তই বেড়ে চলেছে। সোমবার ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢেলেছে অধ্যক্ষর লেখা একটি চিঠি। অভিভাবকদের পাঠানো ওই চিঠিতে চার বছরের নির্যাতিতা শিশুর পরিচয় প্রকাশ্যে আনা হয়েছে। যা হাতে পেয়ে নতুন করে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন অভিভাবকরা। তাঁদের বক্তব্য, অধ্যক্ষ প্রথমে যৌন হেনস্তার ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। আর এখন শিশুটির পরিচয় প্রকাশ্যে এনে তার ভবিষ্যৎ নষ্ট করার চেষ্টা করছেন।

রবিবার অধ্যক্ষর বিরুদ্ধে এফআইআর হওয়ার পর এদিন লালবাজারে অধ্যক্ষকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি সে মুখো হননি। এই পরিস্থিতিতে অধ্যক্ষকে জেরা করার জন্য বিশেষ কমিটি তৈরি করার কাজ শুরু করেছে পুলিশ। এদিকে জি ডি বিড়লার যৌন হেনস্তার ঘটনা নিয়ে সোমবার ফের মুখ খোলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দে্যাপাধ্যায়। তিনি বলেন, “এটা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। শিক্ষামন্ত্রী তো বলেছেন, আমিও বলেছি। এক-দু’জনের জন্য সব শিক্ষককে দোষ দেওয়া ঠিক নয়। অ্যাকশন নেব।” এই আবহেই মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশের উপস্থিতিতে অভিভাবকদের সঙ্গে স্কুল কর্তৃপক্ষের বৈঠক হওয়ার কথা। স্কুল চালু করা নিয়ে সেখানে আলোচনা হওয়ার কথা থাকলেও অধ্যক্ষের অপসারণের দাবিতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে পুরোমাত্রায়।

Advertisement

[‘দু-একজনের জন্য গোটা শিক্ষক সমাজের ভাবমূর্তিতে আঘাত করা ঠিক নয়’]

Advertisement

জি ডি বিড়লা স্কুলের ঘটনায় যে রাজ্য প্রশাসন কড়া ভুমিকা নিতে চলেছে, তার ইঙ্গিত মিলেছে কলকাতা পুলিশ ও শিক্ষা দপ্তরের বিভিন্ন কর্ম তৎপরতায়। এদিন লালবাজারে অধ্যক্ষকে ডেকে পাঠানো হয়। কিন্তু তিনি যাননি। নির্যাতিতা শিশুর বাবা অবশ্য গিয়েছিলেন। পুলিশ তাঁর কাছ থেকে বেশ কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছে। সুত্রের খবর, স্কুলের অধ্যক্ষ শর্মিলা নাথকে জেরা করার জন্য বিশেষ কমিটি তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেছে কলকাতা পুলিশ। স্কুলের মনোনয়ন নিয়ে তৈরি হওয়া বিতর্কের উত্তর খুঁজবে এই কমিটি। রাজ্য শিক্ষা দপ্তর, রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশন, আইসিএসই বোর্ডের প্রতিনিধিরা থাকবেন এই কমিটিতে। যদিও মনোনয়ন নিয়ে এদিন অশোকা হল গ্রুপের পক্ষ থেকে বলা হয়, মনোনয়ন নিয়ে নির্যাতিতা শিশুর বাবা যা দাবি করছেন তা ঠিক নয়। জায়গার অভাবের জন্যই জুনিয়র স্কুলটি আলাদা বিল্ডিংয়ে। মনোনয়ন নিয়ে কোনও সমস্যা নেই।

মঙ্গলবার জি ডি বিড়লা স্কুলে গার্জিয়ান ফোরামের সঙ্গে স্কুল ম্যানেজমেন্টের বৈঠক। তাতে কলকাতা পুলিশের প্রতিনিধিও থাকবেন। সেই বৈঠকেও অধ্যক্ষর অপসারণের দাবি উঠবে বলে খবর। এদিন তাই আগেভাগে তার হোমওয়ার্ক সেরে নিয়েছে পুলিশ। এমনটাই মনে করা হচ্ছে। অশোকা হল গ্রুপ ম্যানেজমেন্ট অবশ্য এখনও ‘ক্লিন-চিট’ দিয়ে চলেছেন অধ্যক্ষকে। তাঁরা অধ্যক্ষর পদ থেকে শর্মিলা নাথকে সরাতে নারাজ। কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে সুভাষ মহান্তি জানান, অধ্যক্ষকে নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আসেনি। পুলিশ তদন্ত করছে। দোষ প্রমাণিত হলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। কর্তৃপক্ষের এই অনড় মনোভাব অভিভাবকদের ক্ষোভ বাড়িয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি বৈঠক হওয়া নিয়ে ক্ষীণ হলেও একটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে নির্যাতিতা শিশুর বাবার ভূমিকায়। অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত কোনও বৈঠক নয়- এই দাবিতে এদিন দিনভর অভিভাবকদের সই সংগ্রহ করতে নেমেছিলেন তিনি। একই সঙ্গে অধ্যক্ষের গ্রেপ্তারের দাবিতে লালবাজার অভিযানেরও ডাক দিয়েছেন তিনি। যার প্রেক্ষিতে বৈঠক হওয়া নিয়ে সামান্য হলেও অনিশ্চয়তা থাকছে।

[চাপের মুখে নতিস্বীকার, সাসপেন্ড এম পি বিড়লা স্কুলের অভিযুক্ত কর্মী]

এই টানাপোড়েনের মধ্যেই এদিন দিনভর বিক্ষোভ চলে জি ডি বিড়লার সামনে। সকাল সাতটা থেকেই অভিভাবকরা স্কুল গেটের সামনে জড়ো হতে শুরু করে। স্কুল কর্তৃপক্ষ রবিবারই বিভিন্ন কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্কুল বন্ধের কথা ঘোষণা করেছিল। তা সত্ত্বেও এদিন বহু অভিভাবক পড়ুয়াদের নিয়ে হাজির হন স্কুলে। অনেকেরই এদিন পরীক্ষা ছিল। গার্জিয়ানস ফোরামের পক্ষ থেকে এদিন ফের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করে স্কুল খোলার দাবি রাখা হয়। অভিভাবকদের বক্তব্য, অভিভাবকদের সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা না করেই স্কুল বন্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ। এটা অন্যায়। শিশু অধিকারের পরিপন্থী। নির্যাতিতা শিশুর বাবা অবশ্য অধ্যক্ষ গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত স্কুল বন্ধ রাখার দাবিতে অনড় থেকেছেন। বিরোধিতা করেছেন বৈঠকেরও। অভিভাবকদের একাংশের সঙ্গে এই নিয়ে তর্কও হয়। গার্জিয়ান ফোরামের পক্ষ থেকে অবশ্য বৈঠকে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায় এদিন জি ডি বিড়লা স্কুলে আসেন। অভিভাবকদের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে স্কুল খোলার দাবি করেন। ভিড়ের থেকে একটা অংশ অবশ্য রূপার উদ্দেশে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান তোলে। এদিন যৌন নির্যাতনের ঘটনার বিরোধিতা করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়-সহ বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়ারা স্কুলের সামনে জড়ো হন। ধরনায় বসেন। ‘হোক কলরব’ স্লোগানও ওঠে।

সোমবার আলিপুর জজ কোর্টের বিশেষ আদালতে দুই অভিযুক্ত অভিষেক রায় ও মহম্মদ মফিজুদ্দিনকে তোলা হয়। দু’জনেরই ১৫ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন অতিরিক্ত জেলা জজ। এদিন অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবিতে সরব হন বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তাঁরা স্কুলের সামনে ব্যানারও টাঙিয়ে যায়।

[জি ডি বিড়লার প্রিন্সিপালকে গ্রেপ্তারির দাবিতে স্কুলে অবস্থান বিক্ষোভ রূপার]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ