ছবি: প্রতীকী।
অভিরূপ দাস: করোনা (Coronavirus) আবহে রোজগারে টান। বিল দেওয়া হয়নি হাসপাতালের। তার জন্য ফৌজদারি আদালতে মামলা করে রোগীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বের করল হাসপাতাল। মৃগিরোগে জর্জরিত ওই রোগী মানসিক ভারসাম্যহীন। স্বাভাবিকভাবে কথাই বলতে পারেন না। তাঁর প্রতি হাসপাতালের অমানবিক এই আচরণে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ রাজ্যের স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশন (Health Commission)। কমিশন চেয়ারম্যান অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ”দুঃখজনক ঘটনা। অবিলম্বে ওই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহার করতে বলেছি হাসপাতালকে। যে যুবক মানসিক ভারসাম্যহীন সামান্য এই কারণে কোনওভাবেই তাঁকে গ্রেপ্তার করতে পারে না পুলিশ।” শুধু তাই নয়, বকেয়া বিলের আর এক টাকাও ওই যুবকের পরিবারকে দিতে হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে কমিশন।
দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়ার আতাবাগানের বাসিন্দা প্রসেনজিৎ কর্মকার। তাঁর একুশ বছরের ছেলে দুর্বার মৃগি রোগে আক্রান্ত। মাস সাতেক আগে পেটের সমস্যা নিয়ে আনন্দপুরে বাইপাসের ধারের একটি হাসপাতালে ভরতি করা হয় তাঁকে। সেখানে চিকিৎসা বাবদ প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা খরচ হয়। জটিল একটি অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তা ঝুঁকিপূর্ণ বলে ওই হাসপাতাল অপারেশন করেনি। পরে ক্যানাল সার্কুলার রোডে অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি করানো হয় দুর্বারকে। ৫ মে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়। রোগীর পরিবারের দাবি, হাসপাতালে ভরতি করার সময় কর্তৃপক্ষ জানায়, প্যাকেজে ছ’লক্ষ টাকা খরচ হবে। শেষমেশ সেই খরচ গিয়ে দাঁড়ায় ৯ লক্ষ ৮৭ হাজার টাকায়।
প্রসেনজিৎ জানিয়েছেন, ”আমার ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসা। করোনা আবহে লকডাউনে ব্যবসার অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। রোজগার নেই। বাধ্য হয়ে বাড়িতে বাড়িতে ঘুরে হকারি করতে হচ্ছে। এমতাবস্থায় হাসপাতালের মোটা বিল মেটানো সম্ভব ছিল না।” কোনওরকমে ঘটি-বাটি বেঁচে ৭ লক্ষ টাকা মেটাতে পারেন প্রসেনজিৎবাবু। বকেয়া থেকে যায় ২ লক্ষ ৮৭ হাজার টাকা। ২৩ মে রোগী ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় ‘পোস্ট ডেটেড’ চেক চায় হাসপাতাল। তা দিয়ে আসেন প্রসেনজিৎবাবু। কিন্তু অ্যাকাউন্টে টাকা না থাকায় সেই চেক বাউন্স হয়ে যায়।
এরপরেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত অমানবিক আচরণ করে। ফৌজদারি আদালতে মামলা করে তারা। মানসিক প্রতিবন্ধী দুর্বার এবং তাঁর বাবার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা (Arrest Warrant) জারি হয়। এরপর বাধ্য হয়েই স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনের দ্বারস্থ হন প্রসেনজিৎ। তিনি জানিয়েছেন, ”গ্রাসাচ্ছাদনের জন্য হকারি করতে হচ্ছে। আমার মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেলে আমাদের আত্মহত্যা করতে হবে।” এই ঘটনার কথা জেনে অবিলম্বে হাসপাতালকে সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করতে বলেছে স্বাস্থ্য কমিশন। শুধু তাই নয় কমিশন চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, ”যা বিল হয়েছে তা খতিয়ে দেখে আমাদের অত্যন্ত বেশি মনে হয়েছে। আর কোনও টাকা দেবে না কর্মকার পরিবার।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.