সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘ভাবছো তুমি সুতোর টানে নাচবে সবাই…’! এখানে অবশ্য ভাবনার অবকাশ নেই। সত্যিই সুতোর টানে নেচে উঠছে ‘তারা’। আর ফুটে উঠছে এক একটা দেশের নিজস্ব সংস্কৃতি। আলোছায়ার রূপকথায় মূর্ত হচ্ছে ভারতের মূকাভিনয় থেকে ব্রাজিলের বেলি ডান্স। ইন্টারন্যাশনাল পাপেট কার্নিভাল-এ এরকমই মুহূর্তের সাক্ষী থাকল কলকাতা।
বছর তিনেক আগে প্রায় অনুরূপ এক জমজমাট শো-এর আয়োজন হয়েছিল শহরে। মোহর কুঞ্জ থেকে সায়েন্স সিটি-তে খেল দেখিয়েছিল সুতোয় বাধা পুতুলরা। কিন্তু মানুষ তেমন ওয়াকিবহাল ছিলেন না। প্রচারও ছিল কম। তারপর সেই অর্থে আন্তর্জাতিক মানের কোনও পাপেট শো-এর দেখা মেলেনি। শুধু ভারত নয়, বহু দেশেই পুতুলনাচের ট্র্যাডিশন আছে। লোককথার গল্প এই পুতুলনাচ ফর্মের মাধ্যমেই একসময় ছড়িয়ে পড়ত। তাতে মিশে থাকত ইতিহাসের অবশেষ। বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীর সংস্কৃতির নিদর্শন। ফলে এই ঐতিহ্য যেমন প্রাচীন তেমনই সমৃদ্ধ। তবে তেমনভাবে যে এর প্রচার আছে তা নয়। সেই অভাব মেটাতেই এবছর শহরে আন্তর্জাতিক মানের এই পাপেট কার্নিভালের আয়োজন।
ভারত, ব্রাজিল, পেরু, সিঙ্গাপুর-সহ প্রায় নটি দেশের শিল্পীরা অংশ নিলেন এই আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে। তাঁদেরই ভাবনায় মঞ্চে মঞ্চে জীবন্ত হয়ে উঠল পুতুলরা। গত ২৬ অক্টোবর মোহর কুঞ্জে উদ্বোধনের দিনই উন্মাদনা ছিল চোখে পড়ার মতো। বহু মানুষ রীতিমতো টিকিট কেটেই দেখতে গিয়েছিলেন এই শো। আগ্রহ অবশ্য বেশি কচিকাঁচাদের মধ্যেই। সঙ্গী বড়রাও। শেষমেশ ছোট-বড় মিলে সকলেই মিলে গেল পুতুলনাচের ইতিকথায়। কোয়েস্ট মল থেকে পিসি চন্দ্র গার্ডেন্স, যেখানেই শো হয়েছে চোখে পড়েছে খুদেদের ভিড়। পি সি চন্দ্র গার্ডেন্সে তো দুটি স্কুল থেকে এসেছিল পড়ুয়ারা। অন্যদিকে টিকিট কেটে ছেলেমেয়েদের এই শো দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলেন অভিভাবকরাও। একদিকে রঙিন পুতুলের মেলা, অন্যদিকে জমজমাট শিশুমহল। ২৬-৩০ অক্টোবর, এই ছয়দিন পাপেটকে সামনে রেখেই শহরে অভূতপূর্ব মিলনমেলা।
পারফরম্যান্সে প্রতিটি দেশই তুলে এনেছে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি। ভারত থেকে কেরলের শিল্পী মাইমের আঙ্গিকে তুলে ধরেছেন তাঁর শিল্প। ব্রাজিলের বেলি ডান্স থেকে পেরু বা সিঙ্গাপুরের শিল্পীরাও একই পথে হেঁটেছেন। ফলে এই শো-এর হাত ধরে বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতির একটা ধারণা ফুটে উঠেছে শিশুদের মনে। এছাড়া ছোটদের মনোরঞ্জনের জন্য ছিল বিশেষ ব্যবস্থাও। হাতের কায়দায় পাপেট দিয়ে বল ছোঁয়ার খেলা দারুণ উপভোগ করেছে তারা। শো-এর মধ্যেই দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে কী করে ঘরোয়া উপকরণেই পাপেট বানানো যায়। বল বা শ্যাম্পুর ফেলে দেওয়া বোতলেও যে পুতুল তৈরি করা যায়, তা দেখিয়ে ছোটদের সৃজনশক্তি বিকাশের সাধু প্রয়াস কার্নিভালে। উদ্যোগ ব্যক্তিস্তরে। তবে শহর যেভাবে তাতে সাড়া দিল, সে উন্মাদনাই যেন ভরসা জোগাচ্ছে। এতদিন অনিয়মিতই ছিল এই ধরনের কার্নিভাল। শো দেখতে আসা মানুষের আশা, শীতের শুরুতে প্রতিবার এরকম আয়োজন হলে মন্দ হয় না।
দেখুন ভিডিও:
[ছবি: শুভ্ররূপ বন্দ্যোপাধ্যায়]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.