রমেন দাস: ক্যাম্পাসে খুনের হুমকি? বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরছে ভয়ের স্মৃতি? এবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়ালে লেখা স্লোগান নিয়ে শুরু তীব্র বিতর্ক। এসএফআইয়ের দাবি, অরবিন্দ ভবনের উপরের তলার দেওয়ালে লেখা হয়েছে, ‘শালকু ট্রিটমেন্ট টু এসএফআই’, সিপিএমের ওই ছাত্র সংগঠনের আরও দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অতিবাম ছাত্র সংগঠনের তরফে দেওয়ালে লেখা হয়েছে, ‘বিরোধী ছাত্রছাত্রীদের লাশ ফেলার হুমকি দিলে পার্থ বিশ্বাসের মতো পরিণতি হবে।’
এই শব্দবন্ধ নিয়েই শোরগোল। কে এই পার্থ বিশ্বাস বা শালকু সোরেন? লালগড় এবং আন্দোলনের আবহে এই দু’জনেরই মৃত্যু হয়েছিল। পার্থ বিশ্বাসকে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। আবার শালকু সোরেনের খুন এবং তাঁর দেহ সৎকার নিয়েও নানা ইতিহাস রয়েছে। এবার ক্যাম্পাসে তাঁদের নাম নিয়ে হুমকির অভিযোগে সরব হয়েছে এসএফআই।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা বিভাগের এসএফআই ইউনিট সম্পাদক অভিনব বসুর দাবি, “বেশ কয়েকদিন এবং গতকাল থেকে এই হুমকির পরিবেশ বেড়েছে। আইসিসি নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা অবস্থান করি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি সংগঠন সেক্ষেত্রে বাধা দেয়।কয়েকজন কমরেডকে মারধর করা হয়। এবার অরবিন্দ ভবনের দেওয়ালে শালকু সোরেনের নাম করে হুমকি দেওয়া হয়েছে। কমরেড পার্থ বিশ্বাসের কথা বলা হয়েছে। আমরা জানি, তাঁদের ভয়ংকর পরিণতির কথা। তাঁদের সঙ্গে চূড়ান্ত অমানবিকতার কথা। এসব করেছে আরএসএফ এবং ছাত্র খুনের (প্রথম বর্ষের নবাগত) সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন মঞ্চ যেমন ফ্যাস, ডাব্লিউটিআই, ডিএসএফ-র সদস্যরা। তাঁদের নাম করেই লেখা রয়েছে।” খুনের হুমকি? ভয় পাচ্ছেন? অভিনব বসুর দাবি, “ভয় পাওয়ার চেয়েও গুরুত্বের, ক্যাম্পাসে সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখা। রাজনীতি নীতিগত ক্ষেত্রে হওয়ার কথা। সেখানে দাঁড়িয়ে খুনের হুমকি, খুনের সঙ্গে জড়িতদের সংগঠনের এরকম কাজ অবাক করছে।”
যদিও এসএফআইয়ের অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরএসএফ নেতা ইন্দ্রানুজ রায়ের দাবি, ”আমরা পার্থ বিশ্বাসের নাম করে লিখেছি। কিন্তু শালকু সোরেন নিয়ে কিছু লিখিনি। ওরা অর্থাৎ এসএফআই নিজেরাই লিখে হয়ত বদনামের চেষ্টা করছে। আর পার্থ বিশ্বাসের প্রসঙ্গ এসেছে তার কারণ, আমরা ওদের স্মরণ করিয়েছি, ওরা ছাত্রছাত্রীদের লাশ ফেলে দেব হুমকি দিয়েছে। এরকম করলে, হুমকি-সন্ত্রাসের রাজনীতি করলে ঠিক কী হতে পারে, সেই অর্থে লেখা হয়েছে। সিপিএমের আমলে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে এসএফআইয়ের সন্ত্রাসের রাজনীতির ফলে এই ধরনের অশান্তির সৃষ্টি হয়, সেই কথা স্মরণ করাতে চেয়েছি।”
এই বিষয়ে কী বলছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ভাস্কর গুপ্ত? সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল-কে তিনি জানান, “গতকাল একটা সমস্যা হয়েছিল। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সেটা মিটিয়েছেন।” স্লোগান নিয়ে অভিযোগ, খুনের হুমকির অভিযোগ, ক্যাম্পাসের নিরাপত্তায় উদ্বিগ্ন? তিনি জানান, “আমি উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনও কারণ দেখছি না।”
যদিও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাম, অতিবাম ছাত্র সংগঠনের বিবাদ নিয়ে বারবার সরব হয় রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ইউনিটের সভাপতি কিশলয় রায়ের দাবি, “এরা নিজেদের মধ্যে গণ্ডগোল করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট করছে। বাম-অতিবামের দ্বন্দ্ব। এরা কখন এক হবে, কখন হবে না, বোঝা যায় না!”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.