আকাশনীল ভট্টাচার্য, ব্যারাকপুর: সানাইয়ের সুরে চার হাত এক হওয়ার অপেক্ষা। এসে গিয়েছেন অতিথিরা। আচমকাই ছন্দপতন। লগ্নের আগে বেঁকে বসলেন পাত্র। লগ্নভ্রষ্টা হলেন কনে। হাল না ছেড়ে পাত্রকে কার্যত তুলে আনে মেয়ের বাড়ির লোকজন। এরপর থানা-পুলিশ। শেষ পর্যন্ত পাত্র রাজি হলেও মেয়ের পরিবার তাঁকে প্রত্যাখ্যান করে।
[এবারের মতো শীতের ইনিংস শেষ, পূর্বাভাস হাওয়া অফিসের]
মঙ্গলবার এমন নাটকের সাক্ষী হলেন খড়দহের রহড়া স্টেশন রোড এলাকায় বিয়েবাড়িতে আসা অতিথিরা। বিয়ের লগ্ন ছিল সন্ধে ৬ টা নাগাদ। ছাদনাতলায় বিয়ের প্রস্তুতি সারা। শুধু বর আসার প্রতীক্ষায় পাত্রীপক্ষের লোকজন। বিবাহ লগ্নের মাত্র ২০ মিনিট আগে পাত্রের ফোনে মাথায় যেন বাজ পড়ে কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার। পাত্র আর্য বসু ফোন করে হবু শ্বশুরকে জানিয়ে দেন তিনি আসতে পারবেন না। কারণ তাঁর মা-বাবার এই বিয়েতে সায় নেই। পাত্রের ছলচাতুরিতে পাত্রীপক্ষের লোকজন কান্নায় ভেঙে পড়েন। বিবাহের আসরে তখন হইচই। কী হবে, এই প্রশ্ন। প্রাথমিক জড়তা কাটিয়ে মেয়ের পরিবার ছেলের বাড়িতে লোক পাঠায়। কার্যত আর্যকে বিয়েবাড়িতে তুলে আনা হয়। ইতিমধ্যে লগ্ন পেরিয়ে গিয়েছে। লগ্নভ্রষ্টা পাত্রী শ্রেষ্ঠা দে জানিয়ে দেন তিনি এমন ছেলেকে বিয়ে করবেন না। এরপর পাত্রর উপর চাপ বাড়ানোয় আসল খবর বেরিয়ে আসে। খবর যায় থানায়। খড়দহ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পাত্রকে আটকে করে।
[নানা রকমের কয়েন কি আদৌ নেবেন? কী জানাল আরবিআই?]
জানা গিয়েছে, ২০১৩ সালে ফেসবুকের মাধ্যমে আর্য ও শ্রেষ্ঠার পরিচয়। খড়দহের রহড়া রামকৃষ্ণ পল্লির বাসিন্দা ২২ বছরের শ্রেষ্ঠা দে। খড়দহের মিশন পাড়ায় থাকেন আর্য বসু। শ্রেষ্ঠার বাবা বিশ্বনাথ দে হাই মাদ্রাসার কর্মী এবং মা পম্পা দে গৃহবধূ। অপরদিকে আর্যর বাবা কুণাল বসু খড়দহ পুরসভার অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী এবং মা গোপাদেবী শিক্ষিকা। দীর্ঘদিন ফেসবুকে আলাপের পর আর্য ও শ্রেষ্ঠার মধ্যে প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। উভয় পরিবার আলোচনার মাধ্যমে বিয়ের দিনক্ষণও ঠিক করে। এমনকী বাবা-মাকে রাজি করবার বাহানা দিয়ে পাত্রীর বাবার কাছ থেকে সোমবার রাতে ৩৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল। মেয়ের দাবি আর্যকে অনুষ্ঠান বাড়িতে আনার পর তার পকেট থেকে ১৯,৫০০ টাকা মেলে। সকলের সামনে পাত্র মুচলেকা দেয় যে, সে ৩৫ হাজার টাকা নিয়েছিল এবং ১৯,৫০০ টাকা ফেরত দিল। পাত্রীর বাবা বিশ্বনাথ দে এবং কাকিমা জয়া দে-র অভিযোগ, আর্য তাদের প্রতারণা দিয়েছে। সে বলেছিল সল্টলেকের সেক্টর ফাইভে একটি প্রখ্যাত তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় ৮৫ হাজার টাকার বেতন পায়। কিন্ত ও আসলে বেকার। এত কাণ্ডের পর আর্য বিয়েতে রাজি হয়। কিন্তু প্রচুর টাকা নষ্ট হলেও, পাত্রীপক্ষ ওর সঙ্গে বিয়ে দিতে নারাজ।
ছবি: প্রতিবেদক
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.