অর্ণব আইচ: ডেরায় বসে ওরা সন্ধিগ্ধ শ্যেনদৃষ্টিতে ফালাফালা করে আগন্তুককে। ভাবখানা যেন, এ আবার কে? কোন সাহসে আমাদের খাসতালুকে এসে ওড়াউড়ি করছে?
ওরা মানে রেড রোডের আশপাশে উঁচু গাছের মগডালের বাসিন্দা চিলের দল। কলকাতা পুলিশের নজরদার উড়ুক্কুযান নিয়ে যাদের শঙ্কা, সন্দেহের শেষ নেই। চিন্তায় পুলিশও। তাই সাধারণতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজের সময় লালবাজারের ‘দুর্দান্ত’দের ঘাড়ে চিল যাতে ছোঁ মারতে না পারে, সে জন্য বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। সভা সমাবেশের উপর ‘পাখির চোখে’ (বার্ডস আই ভিউ) নজরদারির জন্য কলকাতা পুলিশের হাতে রয়েছে ৬টি উড়ুক্কু গোয়েন্দা। চলতি ভাষায় ড্রোন। নাম, দুর্দান্ত। সাধারণতন্ত্র দিবসের সকালে এর কয়েকটিকে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। গত বছর ২৬ জানুয়ারির প্যারেডেও রেড রোডের আকাশে উড়েছিল ‘দুর্দান্ত’। তখন ডিউটিরত পুলিশকর্মী, এমনকী দর্শকদের চোখেও পড়েছিল সেই দৃশ্য। নজরদারির জন্য উড়ছে ড্রোন। সেই আকাশযান ওড়ার শব্দ পেয়েই উড়ে আসছে চিল। কখনও এক। কখনও একাধিক। উড়ন্ত ড্রোনটিকে ছোঁ মারতে চাইছে। যদিও চিল যাতে কোনওভাবেই ড্রোনকে আঘাত করতে না পারে, সেই বিষয়ে সতর্ক হয়ে যান পুলিশ আধিকারিকরা। তার ফলে আকাশে ড্রোনের সঙ্গে রীতিমতো ‘লুকোচুরি’ চলে চিলের। চিল ছোঁ মারতে গেলেই সেই ড্রোনটিকে অন্যদিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। আবার কখনও নামিয়ে নেওয়া হয় সেই ড্রোন। সেই ‘লুকোচুরি’র মাঝখানেই উড়িয়ে দেওয়া হয় অন্য একটি ড্রোন। চোখের সামনে একাধিক ‘শত্রু’কে উড়তে দেখে ঘাবড়েও যায় চিলগুলি।
[দেশের সুরক্ষায় প্রাণত্যাগ, মরণোত্তর অশোক চক্র সম্মান পাচ্ছেন প্রাক্তন জঙ্গি]
গত বছর সাধারণতন্ত্র দিবসের প্যারেডের পর চিলের এই আচরণের কারণ সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে পুলিশ জানতে পারে যে, রেড রোডের কাছে উঁচু গাছে কখনও কখনও চিল বাসা বাঁধে। শীতকাল হচ্ছে তাদের ‘ব্রিডিং’-এর সময়। জানুয়ারির মধ্যেই তারা বাসা বাঁধে উঁচু গাছের মগডালে। সেখানে তারা ডিমও পাড়ে। তাই এই সময় চিলগুলি সতর্ক হয়ে যায়। গাছের চারপাশটায় তারা কড়া নজর রাখে। তাদের বাসার ধারেকাছে ড্রোন উড়ে এলে তারা ‘শত্রু’ মনে করেই তাকে তাড়া করে। আগামী শনিবার সাধারণতন্ত্র দিবসের দিন পুলিশের নজর থাকবে মনিটরের ‘স্ক্রিন’-এর উপর। রেড রোডে প্যারেড চলাকালীন নজরদারির সময় যদি চিল ছোঁ মারার চেষ্টা করে, তবে ‘দুর্দান্ত’কে রক্ষা করতে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। যদিও পুলিশের মতে, হেলিকপ্টারের মতোই ড্রোন ওড়ার সময় বাতাস সঞ্চারিত হয়। তাতে বিশেষ একটি শব্দও হয়। চিল ড্রোনের কাছে এসে ছোঁ মারার চেষ্টা করলেও ওই বাতাস ও শব্দের কারণে দূরে সরে যায়। খুব কাছে আসার সাহস পায় না। তবুও কোনও ঝুঁকি না নিয়েই চিলের ছোঁ থেকে ড্রোন বাঁচানোর চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
[কাশ্মীরে শহিদ সেনাকর্তা নায়ার, ক্যাপ্টেনকে ‘স্যালুট’ পক্ষাঘাতগ্রস্ত স্ত্রীর]