অভিরূপ দাস: মানুষের জীবন বাঁচানোর শপথ নিয়েছিলেন। ডাক্তারি পড়াশোনা শেষে রোগী অন্তঃ প্রাণ দিন কাটাতেন চিকিৎসক অমিয়ভূষণ সরকার। মৃত্যুর পরেও যাঁর হৃদয়, কিডনি, লিভার সচল থাকবে অন্যের শরীরে। চার মৃত্যুপথ যাত্রীকে নতুন জীবন দিয়ে অতিমারির আবহে অমরত্ব পেলেন পূর্ব মেদিনীপুরের সরকারি হাসপাতালের এই চিকিৎসক।
করোনা পরিস্থিতিতে যখন একের পর এক অমানবিক ঘটনার সাক্ষী শহর, সেই সময় অঙ্গদানের বিরল নজির তৈরি করলেন অমিয়ভূষণবাবুর পরিবার। গত ২২ এপ্রিল পথ দুর্ঘটনায় মাথায় গুরুতর চোট পান নিউটাউনের এই বাসিন্দা। কর্মসূত্রে যিনি পূর্ব মেদিনীপুরের একটি হাসপাতালে চাকরি করতেন। দুর্ঘটনার পরদিন থেকেই ভরতি ছিলেন অ্যাপোলো হাসপাতালে। গতকাল, সোমবার তাঁর ব্রেন ডেথ ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসকের ছেলেও স্বনামধন্য চিকিৎসক। অমিয়বাবুর পুত্র এবং স্ত্রী চেয়েছিলেন অঙ্গদান করতে। অমিয়বাবুর অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ পুত্র জানিয়েছেন, “বাবার একটাই ধর্ম, তা হল মানবসেবা। ছোটবেলা থেকে বাবা আমায় এটাই শিখিয়েছেন। তাই বাবার অঙ্গগুলো আগুনে পুড়ে নষ্ট হয়ে যাক এমনটা আমরা চাইনি।”
সাধারণত অঙ্গদান করতে গেলে অঙ্গ দাতার সঙ্গে গ্রহীতার রক্তের গ্রুপ ম্যাচ করতে হয়। এদিকে অমিয়বাবুর শরীরের রক্ত ছিল বিরল এবি পজিটিভ গ্রুপের। ফলে দ্রুত একই ব্লাড গ্রুপের রোগী জোগাড় করাই ছিল চ্যালেঞ্জ। রিজিওনাল অর্গান টিস্যু ট্রান্সপ্লান্ট অর্গানাইজেশন (ROTTO) এবং ন্যাশনাল অর্গান টিস্যু ট্রান্সপ্লান্ট অর্গানাইজেশন (NOTTO) যৌথভাবে খোঁজ শুরু করে। অবশেষে সত্যি হয় অমিয়ভূষণবাবুর স্বপ্ন।
১৩১১ কিলোমিটার দূরের গুরগাঁওতে খোঁজ মেলে এক লিভার বিকল হয়ে পরে থাকা রোগীর। কলকাতা থেকে আকাশপথে গুরগাওয়ের এক হাসপাতালে পৌঁছেছে লিভার। গ্রিন করিডর করে অমিয়বাবুর দুটি কিডনি গিয়েছে কলকাতার কমান্ড হাসপাতাল এবং আরএনটেগোর হাসপাতালে। অন্যদিকে হার্ট নিয়ে যাওয়া হয়েছে হাওড়ার নারায়ণা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। সেখানে ৩০ বছরের এক যুবকের শরীরে বসছে হার্টটি। হাসপাতাল সূত্রে খবর ওই যুবক ডাইলেটেড কার্ডিওমায়োপ্যাথির শিকার। তাঁর হার্ট সম্পূর্ণ বিকল হয়ে গিয়েছিল। ডা. দেবাশিস দাস, ডা. নীলাঞ্জন দত্ত, ডা. প্রদীপ নারায়ণের তত্ত্বাবধানে হার্ট ট্রান্সপ্লান্টের অস্ত্রোপচার হয়।
এছাড়া অমিয়বাবুর কর্নিয়া ও ত্বকও সংরক্ষণ করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে এসএসকেএম হাসপাতালে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.