ধৃতদের নাম অভিষেক নায়েক, স্নেহাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, সৈকত সরকার, রামপ্রসাদ ঘোষ, শাহ আলম সালিম ও নাসিম আনওয়ার। এদের কেউ সদ্য এমবিএ উত্তীর্ণ, কেউ আবার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র। কারও বাড়ি বেহালা, তপসিয়া বা নিউটাউন। কারও আবার মধ্যমগ্রাম কিংবা বাঁকুড়া। সল্টলেকের সি কে ব্লক এলাকায় ‘আর এস সলিউশন’ নামে এক সংস্থা খুলে ওই ছয় যুবক জালিয়াতি চক্র শুরু করেছিল। সম্প্রতি নীহার লুহারুকা নামে দমদম পার্ক এলাকার বাসিন্দা এক ব্যক্তি ওই সংস্থার বিরুদ্ধে বিধাননগর পূর্ব থানায় প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন। তঁর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নামে পুলিশ। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে অভিযান চালিয়ে নিউটাউন, ডানকুনি ও হুগলির বিভিন্ন এলাকা থেকে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
নীতেশ লুহারুকার ভাই মেডিক্যালের কেন্দ্রীয় প্রবেশিকা পরীক্ষা নিটে উত্তীর্ণ হয়। হঠাৎই একদিন আর এস সলিউশন সংস্থার নাম করে তাঁদের কাছে একটি ফোন আসে। বলা হয়, আর জি কর, মেডিক্যাল কলেজ-সহ রাজ্যের যে কোনও সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ওই সংস্থা ভর্তি করিয়ে দিতে পারে। এক্ষেত্রে ছাত্রকে ‘ডোনার’ কোটাতে ভর্তি করানো হবে। সরকারি কলেজে ভর্তির লোভে নীতেশ তাঁর ভাইকে নিয়ে ওই অফিসে যান। সেখানে গিয়ে তিনি দেখেন সংস্থার কর্তারা প্রত্যেকেই উচ্চশিক্ষিত। ঝাঁ চকচকে চেহারা, নম্র ব্যবহার দেখে তাদের বিশ্বাস করে ফেলেন। তাঁকে বলা হয়, ১৫ লক্ষ টাকা দিলে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে তাঁর ভাই ভর্তি হতে পারবেন।
এর পর গত জুলাই মাস থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ধাপে ধাপে ১৫ লক্ষ টাকা দেন নীতেশ। কিন্তু যতবারই তিনি ভর্তির বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতেন, তা এড়িয়ে যায় প্রতারকরা। এক সময়ে তাঁর ফোনও ধরা বন্ধ করে। ডিসেম্বর মাসেও কলেজে ভর্তি নিয়ে কোনওরকম আশ্বাস না মেলায় তিনি ভাইকে নিয়ে ফের সল্টলেকের ওই অফিসে যান। গিয়ে দেখেন অফিসে তালা ঝুলছে। প্রতারকদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ফের ব্যর্থ হন নীতেশ। তিনি বিধাননগর পূর্ব থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে। সল্টলেকের অফিস থেকে কয়েকটি ল্যাপটপ, ট্যাব, ব্যাঙ্কের নথি, পাসপোর্ট উদ্ধার হয়। পুলিশ ধৃতদের জেরা করছে। এই চক্রের পিছনে কোনও বড় মাথার যোগ রয়েছে কি না, তা দেখা হচ্ছে। কীভাবে শুরু হয়েছিল জালিয়াতি?
রাজ্য জয়েন্ট এনট্রান্স, কেন্দ্রীয় স্তরের মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীদের তালিকা তৈরি করে রাখত অভিযুক্তরা। সেখান থেকে র্যাঙ্ক পর্যালোচনা করে কলেজে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার নামে পড়ুয়াদের ফোন করত। অফিসে ডেকে পাঠিয়ে টাকার বিনিময়ে সরকারি কলেজে ভর্তির আশ্বাস দিয়ে এই জালিয়াতির চক্র ফেঁদেছিল। মূল পান্ডা এমবিএ উত্তীর্ণ অভিষেক। এর আগে রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার নাম করে একাদিক জালিয়াতির ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। এর আগেও আর জি করে ভর্তির নামে প্রতারিত হন এক ভিন রাজ্যের ছাত্রী। তার কাছ থেকে ২০ লক্ষ টাকা দাবি করেছিল এক জালিয়াত চক্র। তবে শুধুমাত্র ছাত্রভর্তিই নয়, কর্মী নিয়োগেও রয়েছে দুর্নীতির অভিযোগ। ন্যাশনাল মেডিক্যালে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতানোর অভিযোগ ওঠে স্বয়ং ওয়ার্ড মাস্টার-সহ চারজনের বিরুদ্ধে। তারা গ্রেপ্তারও হয়। এছাড়া ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিগ্রি কলেজ, পলিটেকনিকে ভর্তি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তো রয়েছে ভূরি ভূরি। ইঞ্জিনিয়ারিং হোক কিংবা মেডিক্যাল। ভর্তির ক্ষেত্রে অনলাইন কাউন্সেলিংই একমাত্র উপায়। সেখানে ঘুরপথে টাকা দিয়ে ভর্তির কোনও সুযোগ নেই। তা জানা সত্ত্বেও কীভাবে পড়ুয়া ও অভিভাবকরা এ ধরনের ফাঁদে পা দিচ্ছেন তা নিয়ে রীতিমতো বিস্মিত গোয়েন্দারা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.