অর্ণব আইচ: তিন বছর ধরে মায়ের মৃতদেহ আগলে রাখে ছেলে। কোনও কাঁচা হাতের কাজ নয় রীতিমতো ‘মমিফাইড’ সেই দেহ। ‘লেদার টেকনিশিয়ান’ শুভব্রতর এহেন কাণ্ডে কার্যত হতবাক দুঁদে গোয়েন্দারা। বুধবার গভীর রাতে বেহালার জেমস লং সরণির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে থ বনে যায় পুলিশ।
[বিজেপির বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে তৃণমূল, পার্থদের তলব রাজ্যপালের]
বৃহস্পতিবার তদন্ত আগ বাড়ার সঙ্গেই উঠে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। এহেন নজিরবিহীন ঘটনায় তোলপাড় মহানগর। তা কেন মায়ের দেহ ফ্রিজে রেখেছিলেন শুভব্রত? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারীরা। উঠে আসছে একের পর এক সম্ভাব্য কারণ। অভিযোগ, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকুরে মায়ের পেনশন পেতেই এই ফন্দি করেন শুভব্রত। যোগসাজশে শামিল তাঁর বাবা গোপাল মুখোপাধ্যায়ও। মৃত মায়ের দেহ সংরক্ষণ করে তাঁর আঙুলের ছাপ নিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা তুলতেন শুভব্রত। দেহে পচন ধরলে তা সম্ভব হত না। ফলে রীতিমতো ‘মমি’ বানিয়ে মাকে ফ্রিজে রাখেন তিনি। এইভাবে দিনের পর দিন ব্যাংক থেকে পেনশন তুলে যাচ্ছিলেন বাবা-ছেলে। মৃতদেহে যাতে কোনও বিকৃতি না ঘটে, তাই একেবারে বিশেষজ্ঞদের ধাঁচে মায়ের পেট থেকে নাড়িভুঁড়ি বের করে রাসায়নিক মাখিয়ে দেহ বড় ফ্রিজারে ঢুকিয়ে রাখেন শুভব্রত। জানা গিয়েছে, তদন্তকারীদের প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন শুভব্রত। কোন ব্যাংক থেকে পেনশন তোলা হত তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এক্ষেত্রে ব্যাংকের ভূমিকা নিয়ে চলবে তদন্ত।
মার প্রতি অত্যাধিক টানের জন্যই দেহ আগলে রেখেছিলেন শুভব্রত। এই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীরা। জানা গিয়েছে, ২০১৫-র ৭ এপ্রিল হার্ট অ্যাটাকে মারা যান বীণা মজুমদার। তাঁর ডেথ সার্টিফিকেট জারি করে বেহালার বালানন্দ হাসপাতাল। তারপর সেই দেহ বাড়ি নিয়ে আসেন শুভব্রত। তিনি বাবাকে বোঝান যে, বিজ্ঞানের একদিন এমন উন্নতি হবে যে, মায়ের মৃতদেহে প্রাণ ফিরে আসবে। সেই জন্যই দেহ সংরক্ষণ করা দরকার। শুভব্রতই মানসিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে, তিনি নাকি দাবি করছেন তাঁর মাকে হত্যা করেছে রাশিয়ানরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিরাপত্তাহীনতা ও মায়ের প্রতি অগাধ আস্থা এই কাণ্ড ঘটাতে পারে। সব মিলিয়ে রহস্য আরও ঘন হয়ে উঠেছে।
ছবি: গোপাল দাস
[কৃষ্ণসার হরিণ হত্যা মামলায় দোষী সলমন, বাকিরা বেকসুর খালাস]