কৃষ্ণকুমার দাস: দিল্লির দূষণের মাত্রার কাছাকাছি পৌছে গেল কলকাতা। সোমবার দুপুর বারোটায় শহরের রবীন্দ্রভারতী ও ফোর্ট উইলিয়ামে প্রতি ঘনমিটারে পিএম ২.৫ এর মাত্রা পৌঁছে গিয়েছিল যথাক্রমে ৩৩১ এবং ৩২৪। যাদবপুর ও বালিগঞ্জে এই মাত্রা পৌছেছিল ৩১২ ও ৩০৩। স্বভাবতই মহানগরের পরিবেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সোমবার ‘উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিশেষজ্ঞ কমিটি’ গড়ল কলকাতা পুরসভা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক অনিরুদ্ধ মুখোপাধ্যায় এই কমিটির প্রধান। ১৩ জনের এই কমিটিতে রয়েছেন খড়গপুর আইআইটি, যাদবপুর ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপকরা। কমিটিতে আছেন অধ্যাপক সুদর্শন নাগ, ভার্গব মিত্র, সোমনাথ মুখোপাধ্যায়ের মতো দেশের নামী পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। দূষণ রুখতে চটজলদি ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা করে মেয়র তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, “শীত শুরুর আগেই কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে তা নিয়ে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে কমিটিকে। এছাড়া পরের ৪৫ দিনের মধ্যে কলকাতায় কী কী দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় তার সুপারিশ চাওয়া হয়েছে।” পরিবেশ দূষণ চিরস্থায়ী বন্ধে মুখ্যমন্ত্রী যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন বলেও মেয়র জানান।
এক বছর আগেই রাজ্য সরকারের পরিবেশ দপ্তর শহরের দূষণ বন্ধে একগুচ্ছ ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তর অধিকাংশই কার্যকর করা সম্ভব হয়নি বলে পরিবেশ দফতরই স্বীকার করে নিয়েছে। উল্টে শহরের দূষণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। বিশেষ করে এদিনই ময়দানের কেন্দ্রবিন্দু ফোর্ট উইলিয়ামে নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের যে যন্ত্র বসানো আছে সেখানে চমকে দেওয়া মাপকাঠি এসেছে দূষণের। সবুজ গাছপালা ভর্তি ময়দানে প্রতি ঘনমিটারে পিএম ২.৫ এর মাত্রা কীভাবে ৩২৪ হল? উত্তর কলকাতা ও উত্তর শহরতলির কার্যত সংযোগস্থল রবীন্দ্রভারতীতে কীভাবে এই মাত্রা ৩৩১ হল? প্রশ্ন তুলেছেন শহরের পরিবেশবিদরা।
কিন্তু আগামি দিনে যে দূষণের জালে কলকাতা আরও বিপজ্জনকভাবে ফাঁসছে তা স্বীকার করে নিয়েছেন স্বয়ং মেয়র ফিরহাদ হাকিম। পাল্টা তথ্য দিয়ে বলেছেন,“দিল্লির মতো তিলোত্তমার পাশে কোনও সমুদ্র নেই যে বাতাসের দূষণ শুষে নেবে। চেন্নাই বা মুম্বইয়ের পাশে আরব সাগর ও ভারত মহাসাগর থাকায় ওই দুই মহানগরের দূষণের হার কলকাতার চেয়ে কম। বস্তুত এই কারণে এক্ষুনি ব্যবস্থা নিতে হবে, ভাবী নাগরিকদের কথা ভেবে দূষণ বন্ধে সবাইকে এগোতেই হবে।” এক বছর আগে পরিবেশমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব নিয়ে শুভেন্দু অধিকারী দূষণ রুখতে কলকাতা নিয়ে একটি ‘আধুনিক মাস্টারপ্ল্যান’ তৈরি করান। অনেকগুলি সুপারিশ থাকলেও তার মধ্যে একমাত্র বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে বাতাসে যাতে ধূলিকণা না ছড়ায় সেগুলি কিছুটা কমানো সম্ভব হয়েছে বলে পরিবেশ দপ্তর স্বীকার করেছে। এখন অপেক্ষা ১৫ দিন পরে পুরসভার নিয়োগ করা বিশেষজ্ঞ কমিটি মেয়রকে কী সুপারিশ করে। এবং সেই সুপারিশ কীভাবে রাজ্য সরকার তথা পুরসভা কার্যকর করে তা দেখার জন্য অপেক্ষায় শহরবাসী।
[আরও পড়ুন: মরা মাছ-কচ্ছপ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে, রবীন্দ্র সরোবরে দূষণ নিয়ে সাফাই মেয়রের]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.