Advertisement
Advertisement

আবেশের মৃত্যু দুর্ঘটনাতেই, সিলমোহর লালবাজারের

পুলিশের বক্তব্য উড়িয়ে খুনের তত্ত্বেই অনড় আবেশের পরিবার৷

Kolkata Police today ruled out the murder theory in the Abesh Dasgupta death case
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:July 29, 2016 10:05 am
  • Updated:August 5, 2019 4:35 pm

স্টাফ রিপোর্টার: লনের পাশে একটি ছোট্ট পাঁচিল৷ সেই পাঁচিল টপকিয়ে ‘শর্টকাট’ করতে গিয়েই ঘটে যায় বিপত্তি৷ বগলের কাছে রাখা মদের বোতল মাটিতে পড়ে ভেঙে যায়৷ সেই ভাঙা কাচের উপর আছাড় খেয়ে পড়ে আবেশ দাশগুপ্ত৷ তার পরই রক্তারক্তি৷ শেষপর্যন্ত মৃত্যু হয় তার৷

খুন নয়৷ তদন্তের মোড় ঘুরছে দুর্ঘটনার দিকেই৷ জট কাটল সিসিটিভি ফুটেজে৷ বালিগঞ্জের সানি পার্ক-কাণ্ডে পাঁচদিনের তদন্তের পর প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনার তত্ত্বেই সিলমোহর দিল লালবাজার৷ লালবাজারে গোয়েন্দাপ্রধান বিশাল গর্গ বলেন, “আবেশ দাশগুপ্তর মৃত্যুর পিছনে কোনও পূর্ব পরিকল্পনা নেই৷ কোনও ষড়যন্ত্রেরও প্রমাণ মেলেনি৷ সানি পার্কের বহুতল আবাসনের প্রত্যেকটি সিসিটিভির ফুটেজ একাধিকবার ঘাঁটা হয়েছে৷ ঘটনাস্থলে থাকা ১৮ কিশোর-কিশোরী ও আবাসনের কমিটির কর্তা, লেখক অমিত চৌধুরি এবং তাঁর পরিবার, আবাসনের নিরাপত্তারক্ষী, গাড়ির চালক, অন্য কর্মীদের একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে৷ আবেশের বন্ধু ও বান্ধবীদের মোবাইল ফোন আটক করা হয়েছে৷ খতিয়ে দেখা হয়েছে প্রত্যেকের কল লিস্ট৷ ঘটনার পর ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো সোশ্যাল মিডিয়ায় আবেশের বন্ধু ও বান্ধবীরা কী মেসেজ করেছিল, সেই সম্পর্কেও একটি ধারণা মিলেছে৷ ঘটনাস্থল একাধিকবার পরিদর্শন করেছেন গোয়েন্দারা৷ তদন্তে প্রত্যেকটি মিসিং লিঙ্ক ও ফাঁক বোজানোর চেষ্টা হয়েছে৷ এখনও পর্যন্ত যেদিকে তদন্তের গতি, তাতে মনে হচ্ছে দুর্ঘটনাই৷ যদিও তদন্ত এখনও শেষ হয়নি৷ ময়নাতদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্ট এখনও হাতে আসেনি৷ ফরেনসিক রিপোর্টের জন্যও অপেক্ষা করা হচ্ছে৷”

Advertisement

জানা গিয়েছে, এখনও ২০ সেকেন্ড নিয়ে রহস্য রয়ে গিয়েছে৷ কারণ ২০ সেকেন্ডের ফুটেজ পাওয়া যায়নি৷ যদিও প্রত্যেককে জিজ্ঞাসাবাদ করে ওই সময়ের মধ্যে কীভাবে আবেশ পড়ে গিয়েছিল, সেই সম্পর্কে অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে বলে দাবি পুলিশের৷ এ ছাড়াও ওই ঘটনার আগে কেনা হয়েছিল প্রায় তিন হাজার টাকার মদ৷ ওই টাকা ছাত্র-ছাত্রীরা কোথা থেকে পেল, কে তাদের দিয়েছিল, কেনার জন্য কে কত টাকা খরচ করে, সেই তথ্য নিয়ে ধোঁয়াশায় গোয়েন্দারা৷

Advertisement

লালবাজারের একটি সূত্র জানিয়েছে, আবেশ দাশগুপ্তর মা রিমঝিম দাশগুপ্তকে বৃহস্পতিবার লালবাজারে ডেকে পুরো ঘটনাটি বিস্তারিতভাবে বলা হয়৷ তাঁকে কিছু সিসিটিভির ফুটেজও দেখানো হয়৷ যদিও আবেশের দিদিমা কৃষ্ণা পাল বলেন, তিনি ও তাঁর পরিবার এই দুর্ঘটনার তত্ত্বে বিশ্বাস করেন না৷ আবেশের পরিবারের দাবি, তদন্তকে প্রভাবিত করা হয়েছে৷ আবেশকে খুন-ই করা হয়েছে৷ প্রভাবশালী পরিবারের ছেলেমেয়েদের বাঁচানোর চেষ্টা করা হচ্ছে৷ তাই এত তাড়াতাড়ি পরিবারের লোকেদের ডেকে পুলিশ জানিয়ে দিল যে, দুর্ঘটনায় বোতলের কাচ ভেঙে মৃত্যু হয়েছে আবেশের৷ আবেশের অভিভাবকরা জানান, তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন এবং সুবিচার চাইবেন৷

এদিকে, এদিনও লালবাজারে অমিত চৌধুরি ও তাঁর স্ত্রীকে ডেকে পাঠানো হয়৷ চারজন নিরাপত্তারক্ষী ও আবেশের চার বন্ধু ও বান্ধবীকে ডেকে ফের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়৷ এদিন রাতে আবেশের মা লালবাজার থেকে ফিরে বলেন, “আমরা এই তদন্তে খুশি নই৷ সিসিটিভিতে তেমন কোনও ফুটেজ নেই৷ যা আছে তা অস্পষ্ট৷ চার বন্ধুর বয়ান থেকেই পুলিশ এমন দাবি করছে৷”

গোয়েন্দা পুলিশের দাবি, আবেশ মদ্যপান করে ছিল৷ সিসিটিভির ফুটেজে তার পা টলতে দেখা যায়৷ পার্কিং লট থেকে বেরিয়ে ঢাল দিয়ে সে লন বা ঘাসভর্তি সবুজ মাঠের দিকে হাঁটতে থাকে৷ ওই ঢাল শেষ হওয়ার পরই শুরু হচেছ সবুজ লন৷ লনের শুরুতেই রয়েছে দুই ফুটের একটি পাঁচিল৷ সন্ধ্যা ছটায় সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে যে, ‘শর্টকাট’ করার উদ্দেশ্যেই পাঁচিলটি টপকানোর চেষ্টা করে সে৷ তখন তার বগলের কাছে ছিল একটি কাচের মদের বোতল৷ এর পরের দৃশ্যটি সিসিটিভিতে দেখা না গেলেও পারিপার্শ্বিক তথ্য জানাচ্ছে যে, কাচের বোতল নিয়েই পড়ে যায় সে৷ প্রথমে কাচের বোতল ভেঙে যায়৷ তার উপরই গিয়ে পড়ে সে৷ একটি বড় কাচের টুকরো বিঁধে যায় তার বগলের কাছে৷ প্রায় সাড় চার ইঞ্চি গভীরে ঢুকে ছিঁড়ে দেয় তার ধমনি৷ এ ছাড়াও কেটে যায় তার কব্জি, হাতের তালু৷ তখনই তার কয়েকজন বন্ধু ছুটে আসে৷ আবেশ রক্তাক্ত অবস্থায় উঠে দাঁড়ায়৷ সে ঘুরে দাঁড়িয়ে ফের হাঁটতে শুরু করে৷ মাটিতে পড়তে থাকে রক্ত৷ এবার সিসিটিভিতে দেখা যায়, সে টলমল পায়ে হাঁটছে৷ কয়েকজন বন্ধু তাকে ধরতে গেলে সে হাত দিয়ে তাদের সরিয়ে দেয়, যেন তার কিছুই হয়নি৷ মদ্যপান করে থাকার ফলে সে ফের পড়ে যায়৷ এবার তাকে তুলে তার দুই বন্ধু একটি থামের সামনে বসিয়ে দেয়৷ সে শুয়ে পড়ে৷ গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, আবেশ যেখানে পড়ে যায়, সেখানেই শুধু কাচের টুকরো ছিল৷ দ্বিতীয়বার যেখানে সে পড়ে যায়, সেখানে তার শরীরে জল দিয়ে রক্ত ধোয়ানোরও চেষ্টা করা হয়৷

এর পর আবাসনের নিরাপত্তারক্ষী ও গাড়ির চালকদেরও কাছাকাছি আসতে দেখা যায়৷ সিসিটিভিতে দেখা যায় তাদের বন্ধুদের ব্যস্ততা৷ কেউ অ্যাম্বুল্যান্স ডাকার চেষ্টা করে৷ কেউ অ্যাম্বুল্যান্স না পেয়ে ডাকার চেষ্টা করে ট্যাক্সি৷ এক কিশোরী সন্ধ্যা ছ’টা পাঁচ মিনিটে ১০০ ডায়ালে লালবাজারে ফোন করে৷ এক কিশোরী আবেশকে বাঁচানোর জন্য তার মুখে অক্সিজেন দেওয়ার চেষ্টা করে৷ কেউ বা পাম্প করার চেষ্টা করে তাকে৷ একজন নিজের জামা খুলে ক্ষত বেঁধে দেয়৷ এর মধ্যে আবেশের দু’জন বন্ধু লিফটে করে চলে যায় উপরে৷ লেখক অমিত চৌধুরি ও তাঁর স্ত্রীকে ডেকে নিয়ে আসে৷ তাঁরা আসার পরই আবেশের এক বাল্যবন্ধু জানায়, তার মা ক্যানসার রোগী৷ ভর্তি রয়েছেন একটি বেসরকারি হাসপাতালে৷ তাঁকে দেখতে যেতে হবে বলে সে বেরিয়ে যায়৷ আরও এক বন্ধুও তার মাকে দেখতে হবে বলে বেরিয়ে যায়৷ তাদের সঙ্গে বেরিয়ে যায় আরও দুই পড়ুয়া৷ কয়েকজন কিশোর-কিশোরী আবাসনে থেকে যায়৷ ট্যাক্সি বা অ্যাম্বুল্যান্স কোনওটিই মেলেনি৷ অমিতবাবুর একটি গাড়িতে আবেশের এক বন্ধু ও এক বান্ধবী আবেশকে নিয়ে হাসপাতালে রওনা দেয়৷ অন্য গাড়িতে ছিলেন অমিত চৌধুরি, তাঁর স্ত্রী, মেয়ে ও মেয়ের এক বান্ধবী৷ অমিতবাবুর স্ত্রীই গাড়ি চালাচ্ছিলেন৷ হাসপাতালে পৌঁছনোর পর চিকিৎসা শুরু হয়৷ কিন্তু মৃত্যু হয় আবেশের৷ গোয়েন্দাদের দাবি, আবেশের প্রত্যেক বন্ধুর ভূমিকা আলাদাভাবে খতিয়ে দেখা হয়েছে৷ এর পরও আরও কয়েকজনকে জেরা করে আরও কিছু তথ্য নেওয়া হবে৷ ১০০ ডায়ালে ফোন পাওয়ার কতক্ষণ পর ঘটনাস্থলে পুলিশের টিম আসে, তা-ও জানার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ৷

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ