শুভময় মণ্ডল: হুডিনি চ্যালেঞ্জে গা ভাসাতেই কি মৃত্যু জাদুকর ম্যানড্রেক ওরফে চঞ্চল লাহিড়ীর। সোমবার হাওড়ার রামকৃষ্ণপুর ঘাট থেকে জাদুকরের নিথর দেহ উদ্ধারের পর থেকে শোকের ছায়া ম্যাজিশিয়ান মহলে। তবে আদৌ কি পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ছিল এই স্টান্টের? প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা মাথায় রেখেছিলেন কি চঞ্চল লাহিড়ী? প্রশ্ন তুলছেন অন্যান্য জাদুকররা। এই মুহূর্তে ছোটপর্দায় জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘ভানুমতীর খেল’ খ্যাত ম্যাজিশিয়ান অরিন্দম কর্মকার এমনই কিছু প্রশ্ন তুললেন। ওই ধারাবাহিকের ক্রিয়েটিভ টিমের নেতৃত্বে ছিলেন তিনিই। বাস্তবে এবং টিভির পর্দায় ম্যাজিক দেখানো অরিন্দমের মতে, এমন স্টান্ট অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং এর জন্য পর্যাপ্ত রিহার্সালও দরকার। চঞ্চল লাহিড়ীর মৃত্যর ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। সেইসঙ্গে ভবিষ্যতে যাঁরাই স্টান্ট চেষ্টা করবেন তাঁরা যেন সচেতন হয়েই নামেন বলে জানিয়েছেন অরিন্দম।
হাত-পা বেঁধে বাক্সবন্দি করে জলে ফেলে দেওয়া এবং জল থেকে জীবিত উঠে আসার মতো জাদুর খেলা ‘হুডিনি অ্যাক্ট’ নামে পরিচিত। মার্কিন জাদুকর হ্যারি হুডিনি প্রথম এই খেলা দেখিয়ে বিশ্বকে চমকে দেন। শোনা যায়, রেকর্ড গড়ে হুডিনি চ্যালেঞ্জ করেছিলেন আগামী ১০০ বছরে আর কেউ এই খেলা দেখাতে সফল হবেন না। সে সময় ভারতীয় জাদুরও বিশ্বজোড়া কদর। শোনা যায়, এর পর থেকেই ভারতীয় জাদুবিদ্যাকে ছোট করে দেখাতে শুরু করেন হুডিনি। ভারতকে অসম্মান করার অভিযোগও ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। অন্যদিকে, তাঁর রেকর্ড ভাঙতে গিয়ে মৃত্যু হয় একাধিক জাদুকরের। শেষে হুডিনিকে চ্যালেঞ্জ করে প্রথম তাঁর রেকর্ড ভাঙেন জুনিয়র পিসি সরকার অর্থাৎ প্রদীপকুমার সরকার। বিশিষ্ট জাদুকর প্রতুলকুমার সরকারের ছেলে। আর তা ভাঙেন ১০০ বছর পূর্ণ হওয়ার অনেক আগেই। হুডিনি এই খেলা দেখিয়েছিলেন আগের শতকের দ্বিতীয় দশকে। জুনিয়র পিসি সরকার সেই রেকর্ড ভাঙেন ৬০ বছরের মধ্যে। তারপরও বহু চেষ্টা হয়েছে। কেউ সফল হয়েছেন। কেউ ব্যর্থ। মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।
[আরও পড়ুন: হুডিনি হতে চেয়েছিলেন ম্যানড্রেক, রেকর্ড ভাঙতে গিয়ে দীর্ঘ মৃত্যুমিছিল]
গত রবিবার এমনই চ্যালেঞ্জ নিয়ে গঙ্গায় স্টান্ট দেখাতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন জাদুকর ম্যানড্রেক ওরফে চঞ্চল লাহিড়ী। এমন ঘটনা আরও একাধিকবার ঘটেছে। তার মধ্যে অনেকগুলি নথিবদ্ধ হয়েছে। কোনওটা হয়নি। এই তালিকাতেই সাম্প্রতিকতম ঘটনা হল এই বাংলার দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুরের চঞ্চল লাহিড়ীর। রবিবার হাওড়া ব্রিজ থেকে তাঁকে হাত-পা বেঁধে গঙ্গায় নামিয়ে দেওয়া হয়। নামার পর কিছু দূর গিয়েই দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। সমস্ত বাঁধন ছাড়িয়ে বেরিয়ে আসতে তিনি পেরেছিলেন। কিন্তু সাঁতরে উঠে আসতে পারেননি। সোমবার বিকেলে হাওড়া ঘাটে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। অরিন্দম জানিয়েছেন, ‘এই খেলা দেখানোর পিছনে থাকে দীর্ঘ অধ্যবসায় এবং মানসিক ধৈর্য। পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে ডুবুরি, লাইফগার্ড থাকা দরকার। সেগুলো কি আদৌ ছিল কি না এক্ষেত্রে জানা নেই। উনি নিশ্চয়ই আগে অনেকবার এই খেলা রিহার্সাল করেই গঙ্গায় নেমেছিলেন। ওনার মৃত্যু খুবই দুর্ভাগ্যজনক। তবে ভবিষ্যতে আশা করি অন্য জাদুকররা একটু সচেতন থাকবেন।’ ঘটনায় পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করেছে কলকাতা পুলিশ।
[আরও পড়ুন: খোঁজ মিলল ম্যানড্রেকের, হাওড়ার ঘাট থেকে উদ্ধার হওয়া দেহ শনাক্ত পরিবারের]