সুব্রত বিশ্বাস: এ যেন ‘ঢাল নেই তরোয়াল নেই নিধিরাম সর্দারে’র উপাখ্যানের মতোই ব্যবস্থা। রেলমন্ত্রী থেকে জোনাল ম্যানেজার, রেলের সবাই ব্যস্ত সাফাই নিয়ে। কিন্তু যাত্রী নিরাপত্তা এখানে যেন অধরা। অ্যান্টি সাবোতাজ নিরীক্ষণের সবচেয়ে দ্রষ্টব্য সামগ্রী স্ক্যানার মেশিন। সেই মেশিন নেই হাওড়া, শিয়ালদহের মতো করিডর স্টেশনে। এমনকী মেট্রোতেও। সামনেই সাধারণতন্ত্র দিবস। দেশজুড়ে সতর্কতা জারি হচ্ছে। জনবহুল স্থানগুলিতে অ্যান্টি সাবোতাজ চেকিং হবে। দেশের মধে্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও জনবহুল স্টেশন হিসাবে পরিচিত হাওড়া ও শিয়ালদহ। দৈনিক পঁয়ত্রিশ লক্ষেরও বেশি মানুষ চলাচল করেন। অথচ সেখানে নেই স্ক্যানার মেশিন।
[একাধিক ভাষায় সাবলীল, ‘ভারতের লাদেন’-এর দক্ষতায় তাজ্জব পুলিশও]
চলতি দশকের প্রথম দিকে দুই স্টেশনে স্ক্যানার লাগানো হয়েছিল। তবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তা খারাপ হয়ে যায় অনেক দিন আগেই। জোড়াতাপ্পির কৌশলে কিছুকাল তাতে লোক দেখানো চেকিং চললেও পরে তা একেবারে অচল হয়ে পড়ে। বলা চলে মৃত্যু হয় যন্ত্রের। হাওড়া ওল্ড কমপ্লেক্সের দু’টি ও নিউ কমপ্লেক্সের একটি মোট তিনটি স্ক্যানার মেশিনের জায়গা এখন ১০ নম্বর শেড। দামি এই মেশিন এভাবে ঠাঁই পাওয়ায় শেডের নামই এখন পরিবর্তিত হয়ে হয়েছে, ‘সেমিটারি অফ স্ক্যানার’ হিসাবে। শিয়ালদহ রেল পুলিশের সুপার অশেষ বিশ্বাসের কথায়, স্ক্যানার সিকিউরিটি ইকুইপমেন্ট হিসাবে খুবই জরুরি। এজন্য রেলের কাছে আবেদন জানানো হবে। হাওড়া আরপিএফের কর্তাদের মতে, বারবার স্ক্যানার খারাপের পর বহু আবেদন করেও কোনও ফল হয়নি। বরং নির্দেশ আসে, লোকচক্ষুর আড়ালে মেশিনগুলিকে নিয়ে ফেলতে। এর পরেই মেশিনগুলিকে ওই শেডে পাঠানো হয়।
[প্রতিরক্ষামন্ত্রকের ছাড়পত্র, এবার ওয়াঘার মতো ফুলবাড়িতেও ‘বিটিং দ্য রিট্রিট’]
দেশের বিভিন্ন জায়গায় নাশকতার ঘটনা ঘটার পর ২০১১ সালে রেলের গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলিতে স্ক্যানার মেশিন লাগানোর পরিকল্পনা নেয় রেল। ২০১২ পূর্ব রেলের ওই দুই স্টেশনে লাগানো হয় স্ক্যানার। লাগে মেট্রো রেলেও। ৬০ থেকে ৬৫ লক্ষ টাকা দাম পড়ে এক একটি মেশিনের। দুই রক্ষী ও এক অপারেটরের মাধ্যমে সক্রিয় হয় মেশিনগুলি। কম্পিউটার সংযুক্ত মেশিনের মধ্যে দিয়ে বিপজ্জনক বা সন্দেহজনক সামগ্রী গেলে ইন্ডিকেট করত কম্পিউটার। এর পরে ব্যাগ বা লাগেজের মালিককে তা খুলে দেখানোর জন্য বলা হত। কয়েক বছর পর মেশিনগুলি খারাপ হতে শুরু করে। রেলের তরফে একাধিক বাহানা বা প্রতিশ্রুতি দিলেও মেশিন আর জোটেনি নিরাপত্তার খাতিরে।