Advertisement
Advertisement

বরদাস্ত করব না নিজের মর্জি মতো চলা, কঠোর বার্তা প্রশাসক মমতার

“যুদ্ধের সময় যাঁরা দলের বিরোধিতা করেন, তাঁদের কোনও ক্ষমা নেই৷” জানা গিয়েছে, এবার মন্ত্রিত্ব ও সাংগঠনিক দায়িত্ব বণ্টনের ক্ষেত্রে কড়া মনোভাব নিচ্ছেন দলনেত্রী৷ এক্ষেত্রে পারফরম্যান্সই শেষ কথা৷

Mamata Banerjee emerge as strict administrator in her first interaction with the newly elected Trinamul MLAs

সমর্থনের হাত: তৃণমূল কংগ্রেসের প্রথম পরিষদীয় দলের বৈঠকে নেত্রী নির্বাচন৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি সমর্থনের হাত বিধায়কদের৷ কালীঘাটে৷ শুক্রবার৷ ছবি: অমিত ঘোষ৷

Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:May 21, 2016 9:17 am
  • Updated:May 21, 2016 5:13 pm

স্টাফ রিপোর্টার: বিরাট জয় বাড়িয়েছে দায়িত্ব৷ ভবিষ্যতে মানুষের রায়কে আরও বেশি মর্যাদা দিতেই দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই কঠোর হাতে দলের রাশ ধরতে শুরু করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই তিনি নবনির্বাচিত বিধায়ক তথা দলের পদাধিকারী ও সাংসদদের সঙ্গে বৈঠকে স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন, যেমন খুশি বলা, যেমন খুশি চলা তিনি আর বরদাস্ত করবেন না৷ মানুষ যে রায় দিয়েছে তা অভূতপূর্ব৷  এর পরেও যাঁরা জিততে পারেননি, তাঁদের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে৷ নিজেকে বড় ভাবলে এমনই হয়৷ মণীশ গুপ্ত, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যর মতো প্রার্থীদের ক্ষেত্রে অবশ্য নেত্রী সহানুভূতিশীল৷ এক্ষেত্রে অন্য ফ্যাক্টর কাজ করেছে৷

এছাড়া যাঁরা দলের প্রার্থীর বিরোধিতা করেছেন অথবা বিরূপ মন্তব্য করে বিরোধীদের খুশি করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও মমতা কঠোর৷ রানাঘাট মহকুমায় তিনটি গুরুত্বপূর্ণ আসন খুইয়েছে তৃণমূল৷ মূলত, এই কারণে সরে যেতে হচ্ছে নদিয়া জেলা সভাধিপতি বাণী রায়কে৷ তাঁর জায়গায় আসছেন দীপক বোস৷ পাশাপাশি দীনেশ ত্রিবেদী, আরাবুল ইসলামের মতো কয়েকজনের আচরণে নেত্রী এতটাই ক্ষুব্ধ যে তিনি বৈঠকে বলছেন, “যুদ্ধের সময় যাঁরা দলের বিরোধিতা করেন, তাঁদের কোনও ক্ষমা নেই৷” জানা গিয়েছে, এবার মন্ত্রিত্ব ও সাংগঠনিক দায়িত্ব বণ্টনের ক্ষেত্রে কড়া মনোভাব নিচ্ছেন দলনেত্রী৷ এক্ষেত্রে পারফরম্যান্সই শেষ কথা৷

Advertisement

শুক্রবার কালীঘাটের অফিসে পরিষদীয় দলের বৈঠকে দলনেত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর বক্তব্য রাখেন মমতা৷ সেখানে তিনি বলেন, “যাঁরা জিতেছেন সবাইকে শুভেচ্ছা৷ যাঁরা পরাজিত হয়েছেন তাঁরাও ভাল লড়াই করেছেন৷ কিন্তু কেন জিততে পারেননি সেটা বুঝতে হবে৷ সবাইকে মিলেমিশে কাজ করতে হবে৷ পুনরায় মানুষ আমাদের উপর যে বিপুল মাত্রায় আস্থা রেখেছেন, তার পূর্ণ মর্যাদা দিতে হবে৷ বিধায়ক হয়ে গেলেই কাজ শেষ হয়ে যায় না৷ এখন থেকে আপনাদের মানুষের জন্য কাজ করা শুরু হল৷ নিজের এলাকায় আরও বেশি করে সময় দিন৷” নেত্রীর কাছে নিদিষ্ট খবর রয়েছে, যাদবপুর-সহ কিছু আসনে মানুষ ভোট দিতে দেওয়া হয়নি কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্যে৷ এগুলিতে ফল খারাপ হয়েছে৷ এই পরিকল্পনা ছিল ভবানীপুরেও৷ মানুষকে বেরোতে দেওয়া হয়নি৷ তা হলে আরও ভাল ফল হত৷ এছাড়াও কিছু আসনে ফল খারাপ হয়েছে নেতৃত্বের গাফিলতি ও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জন্য৷ জেলা সভাপতিদের কাছ থেকে এ নিয়ে জানতে চান দলনেত্রী৷ হলদিয়া, তমলুক, মালদা, বাঁকুড়া, দক্ষিণ দিনাজপুর, শিলিগুড়ির আসন গুলিতে ফল খারাপ হয়েছে৷ নেতাদের সতর্ক করেই মমতা বলেন, “উত্তরবঙ্গের ১০-১১টা আসনে আগে থেকে জোর দিতে বলেছিলাম৷ অ্যালার্ট করেছিলাম, তার পরেও শোনা হয়নি৷”

Advertisement

এদিন ওই বৈঠকের পর রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর কাছে সরকার গঠনের দাবি জানান ২১১ বিধায়কের নেত্রী৷ সঙ্গে ছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়, সৌগত রায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, মুকুল রায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, শোভন চট্টোপাধ্যায়৷ ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যে কালীঘাটে ফিরে আসেন৷

এদিকে বর্ণাঢ্য শপথের প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছে তৃণমূল শিবিরে৷

আগামী ২৭ মে রেড রোডে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে কাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে, তা নিয়ে তৃণমূল শিবিরে এখন ব্যস্ততা তুঙ্গে৷ রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, কংগ্রেস সভানেত্রী, অখিলেশ যাদব, নীতীশ কুমার, জয়ললিতা, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, লালুপ্রসাদ যাদব-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সর্বভারতীয় নেতৃত্বকে এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হবে৷ অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খানকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে৷ এককথায় তারকাখচিত হতে চলেছে এই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান৷ এদিনই জয়ললিতা ফোন করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শুভেচ্ছা জানান৷ মমতা বলেন, “চিঠিপত্র তৈরি, কার্ড ছাপানো হচ্ছে৷ প্রস্তুতি চলছে অনুষ্ঠানের৷ শপথের সময়টা এখন চূড়ান্ত হয়নি৷ প্রোটোকল অনুযায়ী সকলকে আমন্ত্রণ করা হবে৷” কেন রেড রোডে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান, তার ব্যাখ্যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “১৫ আগস্ট জনগণের স্বাধীনতা দিবস রেড রোডে হয়৷ আমরা আসার পর বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানও সেখানে করা হয়েছে৷ রাজভবন কিংবা নেতাজি ইণ্ডোরে করলে তিন-চার হাজার মানুষ অনুষ্ঠান দেখতে পারতেন৷ বাইরে করলে ২০হাজার মানুষ অনুষ্ঠান দেখতে পারবেন৷ তাই জনগণের জন্যই এই অনুষ্ঠান করা৷ তাদের ধন্যবাদ দেওয়া৷ আর রাস্তাই রাস্তা দেখাবে৷” তবে দূরত্বের জন্য এবার আর শপথগ্রহণের পর হেঁটে নবান্নে যাবেন না বলে জানিয়েছেন তিনি৷ তাঁর বক্তব্য, “আগেরবার ৩৪ বছর পর নতুন সরকারের অনুষ্ঠান ছিল৷ আর এবার দূরত্বটাও একটু বেশি৷”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ