সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বছর খানেক বাদে রাজ্য বিধানসভা ভোট। তার আগে রাজ্য বাজেটে গ্রামাঞ্চলে বাড়তি নজর দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কর্মসংস্থান, পরিকাঠামো উন্নয়ন থেকে শুরু করে সরাসরি আমজনতাকে সুবিধাভোগীর তালিকায় আনা, বাজেটে সব দিক নজরে রাখার চেষ্টা করলেন মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্য বাজেটে এবার মূলত গ্রামাঞ্চলের পরিকাঠামোতে নজর দেওয়া হয়েছে। বন্যা প্রতিরোধ থেকে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, সীমিত ক্ষমতার মধ্যে যতটা সম্ভত পরিকাঠামো খাতে বরাদ্দ বাড়িয়েছে রাজ্য সরকার। স্রেফ পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের জন্য বরাদ্দ ওঁরা হয়েছে ৪৪ হাজার ১৩৯.৫৫ কোটি টাকা। চলতি বছর গত দেড় দশকের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে রাজ্য। সেই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সেদিকেও নজর দেওয়া হয়েছে বাজেটে। ২০০ কোটি টাকা খরচে ‘নদী বন্ধন’ প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যা রোধে মাস্টারপ্ল্যান তৈরি হবে ওই প্রকল্পে। সঙ্গে হবে কর্মসংস্থানও। ঘাটালবাসীর দীর্ঘদিনের দুর্দশা ঘোচানোর উদ্যোগও দেখা গিয়েছে পঁচিশের রাজ্য বাজেটে। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের জন্য আলাদা নতুন করে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করল রাজ্য সরকার। এই প্রকল্পে ৩৪০ কোটি টাকা ইতিমধ্যেই খরচ করা হয়েছে। আগামী ২ বছরে ওই প্রকল্পে বরাদ্দ আরও বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
গ্রামাঞ্চলের রাস্তাঘাটের উন্নয়নের জন্য গত কয়েক বছরে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার। এ বছর সেই বরাদ্দের পরিমাণ আরও দেড় হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। এই প্রকল্পে ৩৭ হাজার কিলোমিটার রাস্তা তৈরি এবং সংস্কার করা হবে। আসলে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় স্থানীয় ঠিকাদার বা পঞ্চায়েতের গাফিলতিতে রাস্তাঘাট সময়মতো মেরামত হচ্ছে না। গ্রামাঞ্চলের মানুষের মধ্যে সেই নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হওয়ার আগেই পদক্ষেপ করছে রাজ্য। এবারের বাজেটে আরও ১৬ লক্ষ মানুষকে বাংলার বাড়ি প্রকল্পের আওতায় আনার ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থাৎ এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ছাব্বিশের আগেই আরও ১৬ লক্ষ মানুষ রাজ্য সরকারের সুবিধাভোগীর তালিকায় চলে আসবে। বাজেটে বলা হয়েছে, আরও সাড়ে তিনশো সুফল বাংলার স্টল খোলা হবে রাজ্যজুড়ে। অর্থাৎ গ্রামাঞ্চলের মানুষের কাছে স্বপ্লমূল্যে সবজি-আনাজ পৌঁছে দেওয়ার পথ আরও সুগম করতে চাইছে রাজ্য। এছাড়া রাজ্যের তৃণমূল সরকারের আমলে প্রায় শ’খানেক জনকল্যাণমুখী কর্মসূচি চলে। সেই প্রকল্পগুলি চালাতে নিতান্ত কম খরচ হয় না। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আগামী দিনে ওই প্রকল্পগুলির আওতায় যাতে আরও বেশি মানুষকে সুবিধা দেওয়া যায়, সেদিকে নজর দেওয়া হবে। সার্বিকভাবে দেখতে গেলে, বাজেটে গ্রামের ভোটারদের দিকে বাড়তি নজর দেওয়া হয়েছে।
আসলে শহরাঞ্চল তৃণমূলের অভেদ্য দুর্গ। গত কয়েকটি নির্বাচনে হাজার চেষ্টা করেও কলকাতা বা শহরতলিতে সেভাবে দাঁত ফোঁটাতে পারেনি বিরোধী শিবির। সে তুলনায় গ্রামাঞ্চলে কোথাও কোথাও সংগঠন তৈরি হয়েছে বিজেপির। বিশেষ করে বাংলাদেশ আবহে গ্রাম বাংলায় মেরুকরণের মাধ্যমে শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করছে গেরুয়া শিবির। কোথাও কোথাও দলের অন্দরের বিবাদও চিন্তার কারণ হতে পারে তৃণমূলের জন্য। সম্ভবত সেসব ভেবেই ছাব্বিশের ভোটের আগে রাজ্য বাজেটে বাড়তি জোর দেওয়া হল গ্রামাঞ্চলের পরিকাঠামো উন্নয়নে। তৃণমূল নেত্রী নিশ্চিত করতে চাইছেন, ভোটের আগে গ্রামবাংলার সাধারণ ভোটারদের মধ্যে যেন কোনওরকম অসন্তোষ না তৈরি হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.