সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিয়াল্লিশে বিয়াল্লিশটা আসনই চাই। ঝাঁপিয়ে পড়ুন সকলে। আরও সক্রিয় হতে হবে। সোমবার, দলের বর্ধিত কোর কমিটির বৈঠক থেকে লোকসভা নির্বাচনে লড়াইয়ের মূল সুর একেবারে বেঁধে দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন নজরুল মঞ্চে আসন্ন নির্বাচনের রণকৌশল ঠিক করতে বৈঠকে বসেছিলেন দলের সবস্তরের নেতৃবৃন্দ। সেখান থেকেই তাঁর বার্তা, কেন্দ্রে বদল চাই। ক্ষমতা থেকে বিজেপির অপসারণ চাই। চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বললেন, ‘ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে জবাব দেব।’
এবারের নির্বাচনে তৃণমূলের মূল প্রতিপক্ষ এক এবং একমাত্র বিজেপি। তা নানা কথার মাধ্যমেই বারবার বুঝিয়ে দিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই এদিনের বৈঠকে বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াইয়ে ব্লু প্রিন্ট তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে সংশয়ের কিছু নেই। নেত্রী নিজেও অবশ্য তা পরোক্ষে বললেন। তাঁর কথায়, ‘সিপিএম কী করছে, দেখার দরকার নেই। কংগ্রেস কী করছে, দেখার দরকার নেই। বিয়াল্লিশের মধ্যে বিয়াল্লিশটা আসনই আমাদের চাই। সেইমতো ব্লক স্তর থেকে কাজ শুরু করে দিন।’ এ প্রসঙ্গে তিনি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি পরামর্শ দিয়েছেন। ইভিএম কারচুপির চেষ্টা চলছে, এই অভিযোগ তুলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ, ‘ইভিএম নিয়ে দলের কর্মীদের ট্রেনিং হবে। যাঁরা গণনার দায়িত্বে থাকবেন, তাঁদের বেছে নিয়ে চলবে প্রশিক্ষণ। ভিভিপ্যাট কীভাবে কাজ করে, তা খুব ভালভাবে বুঝে নিতে হবে। যতটা সম্ভব, কারচুপি রুখতে তৎপর হতে হবে।’ এই দায়িত্ব তিনি দিয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, দীনেশ ত্রিবেদী-সহ তিন শীর্ষ নেতাকে। তৃণমূল ভবনে নির্দিষ্ট দিনে ঘণ্টা দুয়েক ধরে চলবে প্রশিক্ষণ।
পুলওয়ামার পর সবুজ সংকেত, শহরে অত্যাধুনিক ‘ধনুষ’-এর নল তৈরির কাজ শুরু
কেন্দ্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দলীয় কর্মীদের উজ্জীবিত করতে বারবার একটি হাতিয়ারই তুলে এনেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তাঁর কথায়, ২০১৯এর নির্বাচনী লড়াই আসলে উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই। গত পাঁচ বছরে মোদি সরকার দেশকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে, এই অভিযোগে সরব হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, ‘কেন্দ্রে একটি উগ্রবাদী দল ক্ষমতায় আছে। আরএসএস, ভিএইচপি-র মতো সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান হচ্ছে দ্রুত। দেশে মন্ত্রিসভা বলে কিছু নেই।’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ-কে বিঁধতে গিয়ে তিনি তুলে এনেছেন গুজরাট দাঙ্গার প্রসঙ্গ। নাম না করে নেত্রীর কটাক্ষ, ‘দুই ভাই, যাঁরা দাঙ্গার রাজনীতিতে অভ্যস্ত, তাঁরা দেশ চালাচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তই পরে জানতে পারছে। এসব বেশিদিন বরদাস্ত নয়। মোদির দিন শেষ, ঔদ্ধত্যের দিন। বিদায়ঘণ্টা বেজে গিয়েছে, পরিবর্তন আসছে।’
কালবৈশাখীতে বিপর্যস্ত ট্রেন চলাচল, দুর্ভোগের শিকার নিত্যযাত্রীরা
এছাড়া রাজ্যে সাম্প্রতিক অশান্তি, গুজব ছড়ানো প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট নির্দেশ, কাউকে কোনওরকম উসকানিমূলক কার্যকলাপ করতে দেখলে কিম্বা প্ররোচনায় পা দিতে দেখলে, সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানাতে হবে। পুলিশ ব্যবস্থা না নিলে, তাঁর বাড়ির দরজা খোলা সবসময়ে। সেখানে গিয়ে অভিযোগ জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এপ্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর আরও অভিযোগ, জনৈক ব্যক্তিদের বোরখা পরিয়ে ছদ্মবেশ ধারণ করিয়ে ‘ছেলেধরা’ বলে গুজব রটানো হচ্ছে, গণপ্রহারের মতো ঘটছে ঘটানো হচ্ছে সংগঠিতভাবে। এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট, রাজ্যের প্রতিটি আসনে বিজেপিকে পর্যুদস্ত করে কেন্দ্রের দিকে এগোতে চাইছে তৃণমূল। এখানেই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে লড়াই একের বিরুদ্ধে এক – বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূলের।