ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: সূত্রটা ধরিয়ে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গান্ধী মূর্তির পাদদেশে কলকাতার প্রথিতযশা সব শিল্পীকে নিয়ে এনআরসির নীরব প্রতিবাদে এদিন তুলি ধরেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার দুপুরে আর দশজনের সঙ্গে সেখানে হাজির ছিলেন থিমশিল্পী ভবতোষ সুতারও। তাঁর নাম করেই মুখ্যমন্ত্রী অনুরোধ করেন, যদি দুর্গাপুজোয় এ নিয়ে কোনও কাজ করা যায়। একেবারে নির্দিষ্টভাবে যে অনুষ্ঠানের শেষে ভবতোষ জানিয়ে দিলেন, এনআরসি নিয়ে মানুষের মনে একটা অহেতুক ভয় জন্মেছে। দুর্গাপুজো জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একটা বড় উৎসব। তা সমাজের বৃহত্তর আর্ট ফর্মও। তাই মানুষের মনের লুকনো ভয়ের প্রভাব পুজোর থিমে অবশ্যই পড়বে। এক কথায় বলতে গেলে, এনআরসি, সিএএ বা এনপিআর নিয়ে এত আন্দোলন, এত প্রতিবাদ এবার থিমের ভাষা হয়ে উঠতে চলেছে পুজোর কাজে। দেশ ছাড়ার ভয় নিয়ে বিশেষ কাজ হতে পারে সেখানে। ভবতোষের নিজের কাজে তো বটেই, এর প্রভাব পড়তে পারে, আর বাকি শিল্পীদের কাজেও।

এনআরসি নিয়ে বলতে গিয়ে ভবতোষ বলছেন, “এনআরসি নিয়ে মানুষের মধ্যে একটা ভয় জন্মেছে। সেই ভয় শিল্পীদের মধ্যেও আছে। একটা অহেতুক ভয়। আর শিল্প একটা পাবলিক আর্ট ফর্ম। সেখানে সমাজ জীবনের প্রভাব পড়বেই। আর দুর্গাপুজো যেহেতু জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একটা বড় উৎসব, সমাজের বৃহত্তর আর্ট ফর্মেও তার প্রভাব পড়বে। এই ভয়ের প্রভাব দুর্গাপুজোর কাজেও পড়বে।”
তিনি বলছেন, “পুজোর থিম বানানোটা একটা সামাজিক আর্ট ফর্ম। সেই শিল্প তো ইস্যুভিত্তিক হয়। শিল্পীরা ভাবের ঘরে থাকেন না। তাদেরও প্রতিবাদের ভাষা জানা আছে। আর শিল্প হল সামাজিক ইস্যুগুলোকে তুলে ধরার সেই ভাষা।”
[আরও পড়ুন: হরিয়ানার যুবকের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক সন্ধ্যার! শিশু খুনে প্রকাশ্যে পরকীয়া তত্ত্ব]
প্রায় পঁয়তাল্লিশজন শিল্পীকে একজোট করে এনআরসির প্রতিবাদে ছবি আঁকার আয়োজন করা হয়েছিল। ব্যবস্থাপনায় ছিলেন শিল্পী শুভাপ্রসন্ন। যোগেন চৌধুরি, মনোজ মিত্র, অভিজিৎ মিত্র-সহ অসংখ্য বিশিষ্ট শিল্পী তাঁদের মতো করে প্রতিবাদের ভাষা তুলে ধরেছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই শিল্পের মাধ্যমে একাধিক সামাজিক প্রতিবাদ করছেন বিভিন্ন সময়ে। ভবতোষের কথায়, এই প্রতিবাদ প্রতীকী। ইস্যুভিত্তিক। শিল্পীরাও পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ে ভাবছেন। এই ভয়ের পরিস্থিতি তাঁদেরও ভাবায়। একজন দেশের কথা না বুঝেই সব টুকরো করে ফেলছেন। আর শিল্পীরা সবটা গোটা করে দেখান। এটাই একজন শিল্পী আর অশিল্পীর মধ্যে তফাৎ। যার প্রভাব পুজোর কাজেও পড়বে।