Advertisement
Advertisement
করোনা

অমানবিকতার শিকার হয়েই বাংলা ছেড়েছেন মণিপুরী নার্সরা, জানাল সেবিকা সংগঠন

অভিযোগ, এরাজ্যে প্রতিটি ক্ষেত্রে অপদস্ত করা হচ্ছিল তাঁদের।

Manipur nurses are facing awkward situation in kolkata, says INK

ছবি: প্রতীকী

Published by: Tiyasha Sarkar
  • Posted:May 19, 2020 10:08 pm
  • Updated:May 20, 2020 8:12 am

শুভঙ্কর বসু: অভিমান ও অমানবিকতার শিকার হয়েই বাংলা ছেড়েছেন মণিপুরী নার্সরা। করোনা সংকটে নার্সদের রাজ্য ছাড়া নিয়ে যখন চারিদিকে হইচই শুরু হয়েছে ঠিক সেই সময়ই এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করল মণিপুরী নার্সদের সংগঠন ‘মণিপুরীস ইন কলকাতা’ বা এমআইকে। তাঁদের দাবি, যাঁরা শহর ছেড়েছেন তাঁরা পরিস্থিতির শিকার হয়েই এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন।

মঙ্গলবার এক প্রেস বিবৃতিতে সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, কলকাতা বা এ রাজ্যের চিকিৎসা পরিষেবায় নিজেদের সবটুকু দিয়ে কাজ করেন মণিপুরী নার্সরা। এরাজ্যে অন্তত ১২০০ জন মণিপুরী নার্স দিবারাত্র মানুষের সেবায় নিয়োজিত। কাজের প্রতি তাঁদের দায়বদ্ধতা শুধু শহর বা দেশ নয় গোটা বিশ্বে স্বীকৃত। কিন্তু না চাইলেও বেশ কিছু চরম পরিস্থিতির শিকার হয়েই ১২০০ জন নার্সের মধ্যে ৩০০ জন শহর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। সংগঠনের তরফে দাবি করা হয়েছে, বিষয়টি এমনভাবে দেখানো হয়েছে যে এই আপৎকালীন পরিস্থিতিতে চিকিৎসা পরিষেবাকে প্রাধান্য না দিয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন মনিপুরী নার্সরা। এমন বক্তব্যে মণিপুরী নার্সদের শুধু কালিমালিপ্ত করা হচ্ছে তাই নয়, তাঁদের আত্মত্যাগকেও ছোটো করে দেখানো হচ্ছে। অথচ তাঁদের রাজ্য ছাড়ার কারণ সম্পূর্ণ ভিন্ন।

Advertisement

[আরও পড়ুন: শেষ ২৪ ঘণ্টায় বাংলায় নতুন করোনা আক্রান্ত ১৩৬ জন, ক্রমশ কমছে মৃত্যুর হার]

প্রেস বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, করোনার এই সংকটকালেও নিজেদের কাজের প্রতি ১০০ শতাংশ দায়বদ্ধ ছিলেন মণিপুরী নার্সরা। কিন্তু পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি তাঁদের রাজ্য ছাড়তে বাধ্য করল। তাঁদের দৈহিক গঠনের জন্য প্রতিনিয়ত অপমান সহ্য করতে হচ্ছিল। এই করোনা পরিস্থিতিতে যা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল। দিনভর হাড়ভাঙা খাটুনি পর যখন তাঁরা নিজেদের অস্থায়ী বাসস্থানে ফিরতেন তখন প্রতিবেশীদের কাছ থেকে সহ্য করতে হত চরম লাঞ্ছনা ও গঞ্জনা। তাঁদের খাটো করতে ‘থুতু ফেলা’ কিংবা করোনা নাম ধরে ডাকতেও বাকি রাখেনি সমাজ। অনেক সময় এমন হয়েছে ডিউটি সেরে বাড়ি ফেরার পর তাঁদের আবাসনের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। লিফট ব্যবহার করতে দেওয়া হয়নি। এমনকী শুধুমাত্র করোনার চিকিৎসা করছেন তাই তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় মুদিখানা সামগ্রী দিতেও অস্বীকার করেছেন দোকানদার। এমন অসহায় পরিস্থিতিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কোনও সুরাহা হয়নি। অবশেষে পুলিশের হস্তক্ষেপে তারা বাসস্থানে ঢুকতে পেরেছেন। সংগঠনের তরফে খাবার পৌঁছে দেওয়া হলে তবে তাদের খাবার জুটেছে। অনেকক্ষেত্রে আবার বাড়িওয়ালা তাদের অন্য বাসস্থান খুঁজে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে।
এছাড়াও এই পরিস্থিতিতে একের পর এক হাসপাতাল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকেই বেতন পাননি। ফলে বাড়ি ভাড়া থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে অনেকেই বিপদে পড়েছিলেন। অনেকে কোয়ারেন্টাইনে থাকার সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে খাদ্যও পাননি। মণিপুরী নার্সরা যেহেতু এ রাজ্যের রেশন কার্ড হোল্ডার নন, তাই দুবেলার খাদ্য জোগাতে তাদের চরম সংকটে পড়তে হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে বিবৃতিতে।

Advertisement

এছাড়াও অনেক হাসপাতালে নার্সরা সংকটকালে কাজ করার ন্যূনতম পিপিইউ ও মাস্কটুকুও পাননি। একাধিকবার অভিযোগ জানালেও ভ্রুক্ষেপ করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।তাঁদের নিজেদের কোভিড টেস্ট করাতে বললে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাতেও আমল দেয়নি। এমন সংকটকালে যেখানে সামাজিক দূরত্ব বিধি বজায় রাখা বাধ্যতামূলক ছিল সেখানেও একই ঘরে আট থেকে দশজন গাদাগাদি করে থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন নার্সরা। যার ফলে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন অনেকেই। স্বাভাবিকভাবেই তাই তারা বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। অনেকের বাড়ির লোকই তাদের মেয়ের জন্য চিন্তায় ছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত তাদের বাড়ি ফিরে আসতে অনুরোধ করেন। এমন চরম পরিস্থিতিতে তাই তাদের কলকাতা ছেড়ে চলে যাওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না।

[আরও পড়ুন: চাষিদের আড়ালে ফড়ে, ধরতে খাদ্যদপ্তরের হাতিয়ার ‘মুখ্যমন্ত্রীর চিঠি’]

সংগঠনের সভাপতি ক্ষেত্রীমায়ুম শ্যামকেসো সিং বলেন, “মণিপুরী নার্সদের রাজ্য ছাড়া নিয়ে যে সমস্ত বক্তব্য উঠে এসেছে তা শুধু তাদের কালিমালিপ্ত করে তাই নয়, তারা যে দায়বদ্ধতা নিয়ে কাজ করছেন সেটাকেও ছোটো করে দেখানো হয়।” যদিও অ্যাসোসিয়েশন অফ হস্পিটালস ইন ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার সভাপতি তথা আমরি হাসপাতালের গ্রুপ সিইও রূপক বড়ুয়া জানিয়েছেন, “বিভিন্ন অসন্তোষ ও দাবিদাওয়া থাকতেই পারে। এবং সেগুলি বিভিন্ন হাসপাতাল ম্যানেজমেন্ট এর সঙ্গে শান্তিপূর্ণ আলোচনা করে সমাধান করা যেত। কিন্তু এই আপৎকালীন পরিস্থিতিতে ছেড়ে চলে যাওয়াটা কোনোও সমাধান হতে পারে না”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ