দীপঙ্কর মণ্ডল: পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে দেরি হয়ে গিয়েছিল, তাই নেট-এ বসা হয়নি। তবে জেলে বন্দি অবস্থায় সেট বা কলেজ সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় পাস করে নজির গড়লেন মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম ওরফে বিক্রম। এখন রাজ্য সরকার যদি চায়, তাহলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, যাদবপুর কিংবা প্রেসিডেন্সিতে পড়াতে বা গবেষণা করতে পারবেন জেলবন্দি এই মাওবাদী নেতা। অর্ণব দামকে অভিনন্দন জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর। অর্ণব-সহ সমস্ত রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির দাবি তোলা হয়েছে সংগঠনের তরফে। জেলবন্দি মাওবাদী নেতা সেট পরীক্ষায় পাশ করার খবরে খুশি কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসও। তবে আদর্শ নির্বাচনী বিধির কারণে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি।
[ ভুয়ো ওয়েবসাইটে চাকরির টোপ, বধূর অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও ২ লক্ষ টাকা]
বরাবরই মেধাধী ছাত্র। নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ছিলেন খড়গপুর আইআইটিতে। ১৯৯৮ সালে ক্যাম্পাস থেকে আচমকাই নিখোঁজ হয়ে যান তৃতীয় বর্ষের ছাত্র অর্ণব দাম। ২০০৫ এ মাও-নাশকতায় জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে জামিনও পান। কিন্তু মাস দুয়েক পর ফের নিখোঁজ হয়ে যান অর্ণব। অবসরপ্রাপ্ত ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের ছেলে হয়ে যান মাওবাদী নেতা। সিপিআই (মাওবাদী) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সদস্য ও বিহার-ঝাড়খণ্ড-ওড়িশার সীমান্ত আঞ্চলিক কমিটির সদস্য ছিলেন অর্ণব দাম ওরফে বিক্রম। জঙ্গলমহলে রোগা পাতলা ছেলেটার দাপটে কার্যত ঘুম উড়ে যায় পুলিশের। পশ্চিম মেদিনীপুরের সাঁকরাইল ইএফআর ক্যাম্পে হামলা-সহ একাধিক নাশকতার ঘটনায় অভিযুক্ত অর্ণব।
২০১২ সালে পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়তলির বলরামপুর থেকে মাওবাদী নেতা অর্ণব দামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার হয় একে-৪৭-র মতো আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র। এখন হুগলি জেলে রয়েছেন অর্ণব। যখন কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে ছিলেন, তখন তাঁকে পড়াশোনার সুযোগ করে দেয় কারাদপ্তর। জেল থেকেই SET পরীক্ষা দিয়েছিলেন অর্ণব। জানা গিয়েছে, শুক্রবার স্পিড পোস্টে ছেলের পরীক্ষার রেজাল্ট পেয়েছেন অর্ণব দামের বাবা। রাজ্যের কলেজ সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন জেলবন্দি এই মাওবাদী নেতা। জেল থেকে SET পরীক্ষায় পাস করেছেন কোনও বন্দি, এমন নজির নেই। জেলে বসেই ইন্দিরা গান্ধী মুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বা ইগনু থেকে ইতিহাসে অনার্স করে স্নাতকোত্তর হন মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম। দুটিতেই ফার্স্ট ক্লাস পান তিনি।
[ বিজ্ঞপ্তি দিয়েও প্রত্যাহার কমিশনের, শিক্ষক বদলি ভোটের পরই]