ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: ন্যাশনাল টিবি কন্ট্রোল প্রোগ্রামের থেকে পাওয়া যক্ষ্মা রোগের ওষুধ নিঃশেষ পশ্চিমবঙ্গে। অবস্থা এতটাই সংকটে যে স্বাস্থ্য দপ্তর দুমাস এবং ৪ মাসের কোর্সের ওষুধ কেনার জন্য কয়েক সপ্তাহ আগে টেন্ডার দেয়। রাজ্যের অর্থে ২৬ লক্ষ পাতা (স্ট্রিপ) ওষুধ কেনা হয়েছে। অন্তত কয়েক কোটি টাকা খরচ হয়েছে তাতে। সংশ্লিষ্ট মহলের অভিমত, ভোটের মধ্যে যক্ষ্মার ওষুধ পাঠানো বন্ধ করায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ল কেন্দ্র। স্বাস্থ্যভবন সূত্রে খবর, যক্ষ্মা নোটিফায়েড ডিজিজ। নতুন রোগী চিহ্নিত হলেই জাতীয় যক্ষ্মা নির্মূল কর্মসূচির ওয়েবসাইটে জানাতে হবে। রোগীকে নিখরচায় ওষুধ-পথ্য দিতে হবে কেন্দ্রকে। রাজ্য যক্ষ্মার ওষুধ না কিনলে অন্তত দেড় লক্ষ রোগীর চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যেত। জানুয়ারিতে কেন্দ্র ঘোষণা করেছিল, ২০২৬ সালের মধ্যে ‘টিবি মুক্ত’ ভারত গড়া হবে। কিন্তু সেই কর্মসূচি কতটা সফল হবে, তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠে গেল।
যক্ষ্মার (Tuberculosis) ওষুধের আকালের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে চিকিৎসক সংগঠন সার্ভিস ডক্টরস ফোরাম। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ডা. সজল বিশ্বাসের অভিযোগ, দিল্লি ওষুধ পাঠানো বন্ধ করেছে। ফলে রোগীর জীবন যেমন সংশয়ে, তেমনই সুস্থ ব্যক্তি সংক্রমিত হতে পারেন। ন্যাশনাল টিবি কন্ট্রোল প্রোগ্রামের তথ্য বলছে, দেশে প্রায় ২৬ লক্ষ টিবি রোগী আছে। যাঁদের নিয়ম করে ওষুধ (Medicines) খেতে হয়। গত সপ্তাহে ন্যাশনাল আরবান হেলথ মিশনের আধিকারিকদের সঙ্গে রাজ্যগুলির ভারচুয়াল বৈঠক হয়। সেই সময় দিল্লির কর্তারা কার্যত স্বীকার করে নেন যক্ষ্মা রোগের চারটি ওষুধ নিঃশেষ হতে বসেছে। কয়েকদিন আগেও স্বাস্থ্য সচিব আধিকারিকদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেন। ফের ওষুধ চেয়ে দিল্লিকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
যে চারটি ওষুধের আকাল সেগুলি হল –
এর মধ্যে প্রথম দুটি ওষুধ দুমাস এবং পরের দুটি চার মাস রোগীকে খেতে হয়। জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী, যক্ষ্মা নোটিফায়েড ডিজিজ। অত্যন্ত সংক্রামক (Infectioun)। রোগ চিহ্নিত হলেই ‘নিক্ষয়’ পোর্টালে রোগীর নাম নথিভুক্ত করা হয়। রোগীর ওষুধ ও পথ্য কেন্দ্রীয় সরকার দেশে সরবরাহ করে। পশ্চিমবঙ্গ-সহ (West Bengal) গোটা দেশে চার ওষুধের এহেন তীব্র সঙ্কটে প্রমাদ গুনছে স্বাস্থ্যদপ্তর। স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রধান সচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম ইতিমধ্যে চারটি ওষুধ সরবরাহ করার জন্য দিল্লিতে চিঠি পাঠিয়েছে।
ন্যাশনাল হেলথ মিশনের (National Health Mission) ডেপুটি ডিরেক্টর ডা. সুশীল কুমার বিমল ওষুধের অপ্রতুল জোগানের কথা স্বীকার করলেও দায় ঠেলেছেন যক্ষ্মা নির্মূল কর্মসূচির ঘাড়ে। দিল্লি যক্ষ্মার ওষুধ পাঠাতে গড়িমসি করতেই এই পদক্ষেপ রাজ্যের। ‘নিক্ষয়’ পোর্টাল অনুযায়ী রাজ্যে টিবি রোগীর সংখ্যা প্রায় ১.৫০ লক্ষ। এদের মধ্যে অন্তত ৫০ হাজার রোগীকে চারটি ওষুধ খেতে হয়। টিবি নির্মূল কেন্দ্র অথবা জেলা হাসপাতাল থেকে নিখরচায় ওষুধ দেওয়া হয়। হাসপাতালে আসতে না পারলে আশা কর্মীদের মাধ্যমে ওষুধ পৌঁছনোর ব্যবস্থা করা হয়। এই অবস্থায় স্বাস্থ্যদপ্তর কর্মসূচি চালিয়ে যেতে রাজ্য কোষাগার থেকে অর্থ বরাদ্দ করেছে। স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. সিদ্ধার্থ নিয়োগী বলেছেন, যেসব রোগী চিকিৎসাধীন, তাঁদের ওষুধ কেনার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.