অর্ণব আইচ: ট্যাংরায় একই পরিবারের তিনজন আত্মহত্যা করেনি, খুনই করা হয়েছে তাদের! বুধবার সকালে একই পরিবারের তিনজনের দেহ উদ্ধারের ঘটনায় অজ্ঞাত পরিচয় আততায়ীর বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করল পুলিশ। অচেনা দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হলেও সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয় পরিবারের দুই ছেলে-প্রণয় এবং প্রসূন। প্রশ্ন উঠছে, অভিষিক্তায় ঘটা দুর্ঘটনা নিয়েও।
এদিন সকালে ট্যাংরার বাড়ির দুটি ঘর থেকে উদ্ধার হয় ২ মহিলার হাতের শিরাকাটা রক্তাক্ত দেহ। পাশের ঘরে মৃত অবস্থায় পড়েছিল এক নাবালিকা। জানা গিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার রাতে। ওইদিন গড়ফা থানা এলাকায় মেট্রোর পিলারে ধাক্কা দেয় একটি গাড়ি। ২ ভাই জখম হন, নাম প্রসূন ও প্রণয় দে। সঙ্গে ছিল প্রণয়ের ছেলে প্রতিপও। ঘটনার তদন্ত শুরু হতেই রহস্য আরও ঘনীভূত হয়। দুই ভাইয়ের দাবি ছিল, গোটা পরিবার দেনায় ডুবেছিল। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার উপায় ছিল না। তাই আত্মহত্যার পথ বেছে নেন তাঁরা। এদিকে মৃত সুদেষ্ণা দে-র বাবার তরফে ট্যাংরা থানায় লিখিত অভিযোগে জানানো হয়েছে, তাঁর মেয়েকে খুন করা হয়েছে। এই লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, মৃত দুই বউয়ের দেহে ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। বড় বউ সুদেষ্ণা দে-র কবজিতে ক্ষত, ছোট বউ রোমি দে-র গলায় ক্ষত রয়েছে। প্রসূনের মেয়ের শরীরেও ক্ষতচিহ্ন মিলেছে। এরপরই প্রশ্ন, তবে কি এই তিনজন আত্মহত্যার সাহস দেখাতে পারেনি? তাই তাঁদের স্বামীরাই খুন করে দুই বউকে? রেহাই পায়নি মেয়েও? ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণের পর এই সন্দেহ আরও দানা বেঁধেছে তদন্তকারীদের। কারণ, প্রণয়-প্রসূনরা দাবি করেছিলেন বিষ মেশানো পায়েস খেয়ে সকলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বাড়িতে পায়েসে পাওয়া যায়নি। বাটিতে সামান্য খাদ্যদ্রব্য মিলেছে, কিন্তু সেটা পায়েস কিনা তা নিশ্চিত নয়।
এদিকে প্রণয়-প্রসূনদের দাবি অনুযায়ী, বাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রায় ২ ঘণ্টা রাজারহাটের নির্জন এলাকায় ঘুরেছিল। এরপর অভিষিক্তার কাছে পিলারে ধাক্কা মারে তাঁদের গাড়ি। এটা কি ইচ্ছাকৃত? আত্মহত্যা করার চেষ্টা নাকি পুলিশের নজর ঘোরাতেই দুর্ঘটনা ঘটানো হয়েছিল? কারণ, দুই ভাই প্রায়শই গাড়ি চালাতেন। ফলে তাঁরা জানাতেন, গাড়ি পিলারে ধাক্কা মারলে এয়ার ব্যাগ খুলে যাবে। ফলে মৃত্যুর সম্ভাবনা একেবারেই নেই বললেই চলে। আবার দুর্ঘটনার সময় সকলেই সিটবেল্ট পরেছিলেন। যারা আত্মহত্যার চেষ্টা করবে, তারা কি সিটবেল্ট পরে গাড়ি চালাবে? প্রশ্ন করছেন তদন্তকারীরাই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.