সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ঘাটশিলার তরুণী সুস্মিতা রায়ের মৃত্যুর মৃত্যু ঘিরে রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে। জানা গিয়েছে, কালীঘাটের মেস থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে একাধিক পুরুষের সঙ্গে ভিডিও চ্যাট করেন সুস্মিতা। ভিডিও চ্যাট করার সময়ে তাঁকে আপত্তিকর অবস্থাতেও নাকি সুস্মিতাকে দেখা গিয়েছে বেশ কয়েকবার। তাঁর রুমমেটরা জানিয়েছেন, প্রথমে গুরমিত ও পরে বিবেক নামের এক যুবকের সঙ্গে ভিডিও চ্যাটে বেশ কিছুক্ষণ উত্তেজিতভাবে কথা বলতে শোনা যায় সুস্মিতাকে। জানা গিয়েছে, গুরমিতের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে ছিল সুস্মিতার। পরে বিবেকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ায় দূরত্ব বাড়ে গুরমিতের সঙ্গে। সুস্মিতার এই ব্যবহারে ক্ষুব্ধ ছিলেন গুরমিত। তবে ১০ ডিসেম্বর তিনি ঘাটশিলায় ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। তবে কি মৃত্যুর পিছনে দায়ী ত্রিকোণ সম্পর্কই? তদন্তে পুলিশ। একইসঙ্গে পরিবারের দাবি মেনে ঘাটশিলার পাঁচ যুবকের খোঁজেও তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।
সুস্মিতার জীবনযাত্রা নিয়েও বেশ কিছু প্রশ্ন উঠে এসেছে। মৃতার পরিবার জানিয়েছে, ঘাটশিলায় থাকার সময় একটি দুষ্কৃতী চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিল বিমানসেবিকা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে কলকাতায় আসা তরুণী সুস্মিতা রায়। সেই চক্রটি এতটাই ক্ষমতাশালী যে এলাকা ছেড়ে কলকাতায় আশ্রয় নেওয়া সত্ত্বেও তরুণীর পিছু ছাড়েনি তারা। কী হয়েছিল ঘাটশিলায়? দানা বেঁধেছে ব্যাপক রহস্য। রুমমেটরা জানিয়েছেন, সুস্মিতা নিয়মিত নৈশপার্টিতে যেতেন। কাউকে কিছু বলে যেতেন না। তাঁর একাধিক পুরুষবন্ধু ছিল। তাঁদের সঙ্গেও নিয়মিত দেখা করতেন সুস্মিতা। শেষ যেদিন মেস ছেড়ে বেরিয়ে যান, সেদিন রুমমেটকে বলে গিয়েছিলেন ঘাটশিলার বাড়িতে যাচ্ছেন। অথচ, পরে সুস্মিতাই হোয়াটসঅ্যাপ করে ওই রুমমেটকে জানান, তিনি মিথ্যা বলেছেন। কেন মিথ্যা বললেন সুস্মিতা? মেসের এক আবাসিক জানিয়েছেন, ওই তরুণীর কাছে ফোন আসলে তিনি খুব চেঁচাটেন। অন্য জায়গায় গিয়ে কথা বলতেন। কারও নামে নম্বর সেভ করা থাকত না, ফোন আসলেই সুস্মিতা আড়ালে চলে যেতেন, জানিয়েছে আর এক রুমমেট।
তবে কি কালীঘাট এলাকা থেকে তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করে গঙ্গায় ভাসিয়ে দেয় সেই দুষ্কৃতীরাই? বুধবার সকালে টানা ১০ দিন নিখোঁজ থাকার পর গঙ্গার ঘাট থেকে উদ্ধার হয় ঘাটশিলার তরুণীর মৃতদেহ। সুস্মিতা রায়ের দেহ ভাসতে দেখা যায় উত্তর বন্দর থানার গঙ্গার ঘাটে। এলাকার লোকেরা দেখেন জিনস টপ পরা একটি মেয়ের দেহ ভাসছে গঙ্গায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। গত কয়েকদিন ধরে নিখোঁজ ছিল ঘাটশিলার তরুণী। কলকাতার কালীঘাট এলাকায় পেয়িং গেস্ট থাকত সে। পুলিশের সন্দেহ হয় এটি হয়তো সেই তরুণীর দেহ। ঘটনাস্থলে এসে মেয়েটির দেহ শনাক্ত করেন তাঁর বাবা। ঘটনার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তাঁর অভিযোগ, “আমার মেয়েকে খুন করা হয়েছে। যারা ওকে মেরে ফেলল তাদের শাস্তি চাই।” মোবাইল টাওয়ার লোকেশন সার্চ করে দেখা গিয়েছিল, শেষ সুস্মিতার টাওয়ার লোকেশন ছিল ধর্মতলা এলাকায়। এখান থেকে কীভাবে সে উত্তর বন্দর এলাকায় গেলেন তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে এলে পরিষ্কার হবে আদৌ তিনি জলে ডুবে মারা গিয়েছেন নাকি কেউ অচৈতন্য করে তাঁকে জলে ফেলে দিয়েছিল। সুস্মিতার পরিবারের লোকেরা তদন্তকারী অফিসারদের জানিয়েছিলেন, ঘাটশিলায় সমাজবিরোধী একটি চক্র সুস্মিতার পিছনে লেগেছিল। তিনি কলকাতায় চলে আসার পরেও তারা পিছু ছাড়েনি। সুস্মিতার মৃত্যুর পিছনে সেই গ্যাংয়েরই হাত রয়েছে কি না তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে সুস্মিতার বন্ধুদেরও। সুস্মিতার রুমমেট জানিয়েছেন, “পার্ক স্ট্রিটের ওই বিমানসেবিকা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আর যাবে না বলে জানিয়েছিল ও। মাঝেমধ্যেই অন্যমনস্ক থাকত।” ঠিক কী কারণে অন্যমনস্ক থাকতেন সুস্মিতা? আপাতত এই প্রশ্নের উত্তরকেই পাখির চোখ করেছেন তদন্তকারী অফিসাররা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.