সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রতিমার ঝলমলে রূপও যেমন সত্যি, তেমন পিছনে কাঠ-খড়ের বাস্তবতাও মিথ্যে নয়। উৎসবের আনন্দ যেমন সত্যি, তেমনই সেই মরশুমেই পংক্তিভোজে পরিচারিকাকে দূরে সরিয়ে রাখাও সত্যি। পুজোর মধ্যেই যে খবরে উত্তাল হয়েছিল গোটা শহর। ছি ছি পড়েছিল নেটদুনিয়ায়। এবার সেই নেটদুনিয়াতেই সংঘবদ্ধ হচ্ছেন প্রতিবাদীরা। ‘গৃহশ্রমিকের অপমানের প্রতিবাদে’ আগামী শুক্রবার সল্টলেক সিটি সেন্টারে একটি প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়েছে। সেখান থেকে পুজো উদ্যোক্তাদের কাছে পৌঁছে নোটিস প্রত্যাহারের দাবি জানানোরও কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
[ অভিজাত বাসিন্দাদের সঙ্গে বসে ভোগ খেতে দেওয়া হল না পরিচারিকাকে ]
ঘটনা সল্টলেকের সিবি ব্লকের পুজোর। স্থানীয় বাসিন্দা শৌভিক ঘোষ নিজে পংক্তিভোজে যেতে পারেননি। তাই পাঠিয়েছিলেন বাড়ির দীর্ঘদিনের পরিচারিকাকে। কিন্তু তাঁকে সেখানে খাওয়া-দাওয়ার অনুমতি দেননি উদ্যোক্তারা। প্রতিবাদ করতে গেলে শৌভিকবাবুকে জানানো হয়, এটাই নিয়ম। এবং সে বিষয়ে আগেই নোটিস দিয়ে জানানো হয়েছিল। সে নোটিসের ছবিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন তিনি। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে, মানুষের জন্য নিয়ম, নাকি নিয়মের জন্য মানুষ? যে পুজো মানবিকতার, সেখানে নিজেদেরই বানানো নিয়মের ফাঁস কেটে আরও একটু মানবিক কি হতে পারতেন না পুজো উদ্যোক্তারা? এই সূত্রেই ভেসে ওঠে কয়েকদিন আগের ঘটনা। যেখানে মলিন পোশাকের কারণে শহরের এক অভিজাত রেস্তরাঁয় ঢুকতে দেওয়া হয়নি এক গাড়ি চালককে। অপর একটি ঘটনা, যেখানে ধুতি পরার কারণে শপিং মলে ঢুকতে পারেননি এক পরিচালক। পোশাকের মাপকাঠিতে মানুষকে মাপার এই শিক্ষা কলকাতার ঐতিহ্য নয়। তবু একের পর এক ঘটনা প্রমাণ করে দিচ্ছে, ঐতিহ্যকে ধুলোয় মিশিয়ে সেদিকেই এগোচ্ছে শহর। এদিকে এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতেও জোর তর্ক জমে। অনেকে বলেন, আগেই যখন নিয়ম জানানো ছিল, তখন পুজো উদ্যোক্তাদেরও পুরোপুরি দোষ দেওয়া যায় না।
এই পরিস্থিতিতে মুখ বুজে বসে থাকল না শহর। গৃহশ্রমিকের অপমানের প্রতিবাদে সমবেত হওয়ার আহ্বান এসেছে নেটদুনিয়া থেকেই। ইভেন্ট তৈরি করে প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন তরুণ-তরুণীরা। তাঁরা জানিয়েছেন, ‘সল্টলেকের সিবি ব্লকে দুর্গাপুজোর ভোগ খেতে দেওয়া হল না এক মহিলাকে সেই অঞ্চলের বাসিন্দাদের সঙ্গে। কারণ তিনি গৃহশ্রমিক। সে বা তারা যাতে একসাথে পুজোমণ্ডপে বসে না খেতে পারে তার জন্য নিয়মাবলী পর্যন্ত ছাপানো হয়েছে। এই অমানবিক আচরণের ধিক্কার জানিয়ে এবং তার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে তার জন্য আমরা আগামী শুক্রবার ৬ অক্টোবর দুপুর ৩ টে নাগাদ সিটি সেন্টার ১ এ মিলিত হচ্ছি এক প্রতিবাদী সভার জন্য। সেখান থেকে যাওয়া হবে সেই পুজো কমিটির কাছে। তারা যাতে অবিলম্বে এই নোটিস প্রত্যাহার করে ক্ষমা চান সেই দাবি করা হবে। সমমনস্ক বন্ধুদের আহ্বান জানাচ্ছি উপস্থিত থাকার জন্য।’
ইতিমধ্যেই বহু মানুষ এ প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন। এমনকী সপরিবারে পাশে থাকারও আশ্বাস দিয়েছেন। এ শহর যে আজও প্রতিবাদী, স্রেফ সোশ্যাল মিডিয়ায় মত ব্যক্ত করার মধ্যেই আবদ্ধ নয়, এ প্রতিবাদ যেন তারই মুখ হয়ে উঠছে ক্রমশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.