Advertisement
Advertisement

Breaking News

অন্ধজনে আলো দেবে ব্রেইল পূজা গাইড

হাতের স্পর্শেই বুঝে নিয়ে দুর্গাপুজোর আনন্দ উপভোগের জন্য শহরের পথে বেরিয়ে পড়তে পারবেন দৃষ্টিহীনরা!

NGO Launches Durga Puja Guide In Braille For The Blinds
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:September 29, 2016 9:20 pm
  • Updated:September 29, 2016 9:20 pm

অনির্বাণ চৌধুরী: আর মাত্র ঘণ্টা কয়েকের অপেক্ষা! পিতৃপক্ষের অবসানে দেবীপক্ষের প্রথম আলো এসে ধুইয়ে দেবে চরাচর। শুরু হবে মৃণ্ময়ী দেবীর চক্ষুদানের পালা। তার আগেই, আশ্বিনের সাঁঝে দৃষ্টিহীনদের জন্য উদ্ভাসিত আলোর খবর নিয়ে এল একটি স্বেচ্ছাসেবি সংস্থা। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ প্রফেশনালস, সংক্ষেপে এনআইপি’র উদ্যোগে শুরু হল এক অন্য পুজোর আয়োজন। দৃষ্টিহীনদের জন্য ব্রেইল পদ্ধতিতে প্রকাশিত হল এ বছরের দুর্গা পূজা গাইড।
অবশ্য, এটাই প্রথমবার নয়। এই উদ্যোগ শুরু হয়েছে সেই ২০১১ সাল থেকেই! সাধু প্রয়াস, সন্দেহ নেই। সেই জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিশু উন্নয়ন, নারী উন্নয়ন এবং সমাজ কল্যাণ দফতরের সহযোগিতাও হয়েছে এই স্বেচ্ছাসেবি সংস্থার পাথেয়। তারই সাকার রূপ এই ব্রেইল দুর্গা পূজা গাইড।
তা, ২০১১’র পর থেকে যখন প্রতি বছরেই প্রকাশিত হচ্ছে দৃষ্টিহীনদের এই বিশেষ গাইডলাইন, তখন পৌনঃপুনিকতা এসে কি ক্লান্ত করে না প্রকাশনাকে?
ভুলটা ভেঙে দিলেন এনআইপি’র সচিব দেবজ্যোতি রায়। জানালেন, দৃষ্টিহীনদের জন্য বিশেষ ভাবে প্রকাশিত এই গাইডবই এ বছরে কলেবরে বেড়েছে। গত বছরে তাঁরা এই বইয়ের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন ২৩০টি পূজামণ্ডপকে। এ বছরে সেই সংখ্যাটা এসে ঠেকেছে ৩০০’য়। অর্থাৎ, সীমিত নয়, অপরিমেয় আনন্দের আধারই তাঁরা তুলে দিচ্ছেন দৃষ্টিহীনদের হাতে।
সেই আনন্দের অনুরণন স্পষ্টতই ধ্বনিত হল গাইডবই প্রকাশের আগে দৃষ্টিহীন কিশোর-কিশোরীদের ভাষ্যপাঠ এবং উদ্বোধনী সঙ্গীতে। বহুশ্রুত হলেও অন্য মাত্রা পেল বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রর ‘যা চণ্ডী’র পাঠ, জনপ্রিয় বাংলা ছবির ‘মঙ্গল দীপ জ্বেলে’ গান! তার পরেই অনুষ্ঠানের রাশটি নিজের হাতে নিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী শশী পাঁজা। জানালেন, এই গাইডবই কী ভাবে উপকৃত করবে সমাজের অন্য ধারার মানুষদের।
”হাতের স্পর্শেই বুঝে নিয়ে দুর্গাপুজোর আনন্দ উপভোগের জন্য শহরের পথে বেরিয়ে পড়তে পারবেন দৃষ্টিহীনরা। এ বড় কম কথা নয়। সেই ২০১১ সাল থেকে এই প্রচেষ্টা চলছে, ভবিষ্যতেও চলবে। তবে এখানেই কিন্তু আমরা থেমে থাকিনি। উত্তর কলকাতার লাহা কলোনির মাঠ থেকে প্রতি বছরেই এক পূজা পরিক্রমার আয়োজন করা হয়। রাজ্যের ১০০টি পরিবার অংশ নেন এই পরিক্রমায়। তাঁদের নতুন জামা-কাপড় দেওয়া হয়, সঙ্গে থাকে সুখাদ্যেরও আয়োজন”, জানালেন মন্ত্রীমহোদয়া।
কিন্তু, প্রশ্ন একটা থেকেই যায়। ব্রেল পূজা গাইডের মাধ্যমে শহরের কোথায় কোন পূজামণ্ডপে যেতে হবে, তার হদিশ তো না-হয় পেলেন দৃষ্টিহীনরা। তারপর? পথেঘাটে বেরিয়ে যদি পড়তে হয় প্রতিকূলতার মুখে?
”সেক্ষেত্রে আমাদের নিজেদের দিকটা নিয়ে সচেতন হতে হবে। আরও মানবিক হতে হবে যাতে সবাই মিলে একসঙ্গে পথচলা যায়”, নিজেদেরও প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাল মন্ত্রীমহোদয়ার এই বক্তব্য। পাশাপাশি, এই উদ্যোগ যাতে সর্বাঙ্গসুন্দর হয়, তার জন্য এক সরকারি পরিকল্পনার কথাও ঘোষণা করলেন তিনি। জানালেন দৃষ্টিহীনবান্ধব দুর্গোৎসব পুরস্কারের কথা। প্রতি বছরে তিনটি পূজামণ্ডপের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। শর্ত একটাই- সমাজের এই শ্রেণির মানুষদের কোনও ভাবেই যাতে পূজা মণ্ডপে এসে কোনও অসুবিধার মুখে পড়তে না হয়! ”আমরা দেখি, দৃষ্টিহীনদের মণ্ডপে প্রবেশের জন্য বিশেষ ব়্যাম্প আছে কি না! দেখি পর্যাপ্ত পরিমাণে হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা রয়েছে কি না! গেট কতটা চওড়া, হুইল চেয়ার সেখান দিয়ে মসৃণভাবে নিয়ে যাওয়া সম্ভব কি না- খতিয়ে দেখা হয় তাও! পার্কিং, পানীয় জলের বন্দোবস্ত ইত্যাদির সঙ্গে পুজো কমিটির নামটাও ব্রেইলে আছে কি না, সেই দিকটাও দেখা হয়”, জানালেন শশী পাঁজা। এবং মেয়র-ইন-কাউন্সিল দেবাশিস কুমার, ডিজএবিলিটি কমিশনার রাণু ভট্টাচার্য, কলকাতা শারদোৎসব সমিতির সচিব পার্থ ঘোষের উপস্থিতিতে প্রকাশ করলেন ব্রেইল দুর্গা পূজা গাইড।
কিন্তু, এখানেই তাঁর কর্তব্য সমাধা হল না। এই ব্রেইল দুর্গা পূজা গাইড যথাযথ ভাবে দৃষ্টিহীনদের কাজে আসছে কি না, তাও অনুষ্ঠানে হাতে-কলমে পরীক্ষা করে দেখলেন তিনি। নিজে হাতে ধরে সেই বইয়ের পাতায় আঙুল ছোঁওয়ালেন দৃষ্টিহীনদের। তাঁরাও গাইডবই পাঠ করে প্রমাণ দিলেন, উদ্যোগ বৃথা যায়নি!
আর, আশ্বস্ত হলাম আমরা। জানলাম, প্রতি বছরের মতো এ বারেও দুর্গোৎসবে কেউ নিরানন্দের মুখ দেখবে না। দশভুজার আরাধনায় যে ভাবে অংশ নেয় দশ দিকের মানুষ, এবারেও তার ব্যত্যয় হবে না।

Advertisement

Advertisement

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ