অভিরূপ দাস: মহিষাসুর সত্যি, হনুমান সত্যি, ক্যাপ্টেন স্পার্ক সত্যি, লেবুতলার দুর্গাও! সত্যি বলেই না নজর রাখছে সর্বদা। নিজের ত্রিনয়ন দিয়ে তিনিই দেখবেন কারা এল, কারা গেল।
পুজোয় দুর্গার পরনে ৬ কোটি টাকা দামের শাড়ি। সোনায় সোহাগা বরণ, তাই মাটির চোখ দিয়েই তিনি জরিপ করবেন দর্শনার্থীদের। সে চোখের আড়ালে নাকি লাগানো থাকবে সিসিটিভি। “দাদা, সবচেয়ে দামি দুর্গা বলে কথা, নিরাপত্তা তো আধুনিক করতেই হবে।” জানিয়েছেন পুজোর সাধারণ সম্পাদক সজল ঘোষ।
[চেতলার কাঠের দুর্গা প্রতিমা নিয়ে তুঙ্গে বিতর্ক]
এযাবৎ সবচেয়ে দামি শাড়ি লেবুতলার দখলে। তাঁদের বিজ্ঞাপনেও বড় বড় হরফে লেখা ‘কস্টলিয়েস্ট দুর্গা’। শাড়ির পুরোটাই সোনা দিয়ে তৈরি। ওজন প্রায় ২০ কেজি। হাই প্রোফাইল এই দুর্গার নিরাপত্তাও তাই জেড ক্যাটাগরির। মেটাল ডিটেক্টর গেট, ভিড়ের মধ্যে লুকানো স্বেচ্ছাসেবক তো ছিলই। আরও আধুনিক করতে দুর্গার ত্রিনয়নে বসছে সিসিটিভি ক্যামেরা। দর্শনার্থীরা পেন্নাম ঠুকে বেরনোর সঙ্গে সঙ্গে তাদের ছবিও তাই ধরা পড়ে যাবে দুর্গার ত্রিনয়নে। আপাতত দামি শাড়ি তৈরির শেষ মুহূর্তের টাচ চলছে। চলছে ফ্যাশন ডিজাইনারের সঙ্গে আঁচলের কুচি ঝালিয়ে নেওয়া।
ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পল নকশা করছেন মায়ের শাড়ির। পুজোর চারদিন দুর্গাকে আধুনিক টাচ দেবেন তিনিই। তবে শাড়ি ছাড়াও অন্য রহস্য রয়েছে এ পুজোর স্টকে। পিঁয়াজের খোসা ছাড়িয়ে তার তল পেতে গেলে কান পাততে হবে লেবুতলার আনাচে কানাচে। “একদিকে সার্পেন্টাইন লেন। আরেকদিকে গোলাপ শাস্ত্রী লেন। মাঝখানে নমস্তে লন্ডন!” লেবুতলার আশপাশে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে এমন চুটকি। রহস্যটা কী? “লন্ডনে আসবেন, মাকে দেখবেন, নমষ্কার করবেন। মা-ও কিন্তু দেখবেন আপনাদের..”। এটুকু বলেই হাঁটা দিচ্ছেন পুজোর কর্মকর্তারা।
[দশমীর দিন বিসর্জনের সময় বাড়াল রাজ্য]
পুজোর এবার ৮২ বছরে পা। একফালি মাঠে বাকিংহাম প্যালেস, লন্ডন ব্রিজ, বিগবেন, মাদাম তুসোর মিউজিয়াম। শরতের বিকেলে মনে হবে লন্ডনে চলে এসেছেন আপনি। এ লন্ডন অমর সরকারের। তিলতিল করে তিনিই সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে তৈরি করেছেন টেমসে পারের স্থাপত্য। উত্তরে আবার থিম পুজো হয়? নাক সিঁটকান অনেকে। থিমে যেন একছত্র অধিকার দক্ষিণের। সেখানে সমস্ত আর্ট কলেজের ছাত্ররা পাটের বস্তা, ঝিনুক কুচি, বোতলের ছিপি দিয়ে প্যান্ডেল করেন। ‘সবচেয়ে বড় দুর্গা’ হয়। এসব কথায় কান দেওয়ার সময় নেই সজল ঘোষের। তিনি ঠারেঠোরে জানান, বর্ষা বলতে যেমন ইলিশ, উত্তর বলতে তেমনই সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার। “আমরা অনেকটা ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার মতো হয়ে গিয়েছি। থিম নিয়ে নতুনরা মারপিট করে করুক। ফুটবল ওয়ার্ল্ড কাপ আসলেই যেমন ওই দুই দেশের কথা আপনিই চলে আসে, পুজো এলে তেমনই আমাদের।”
নেতাজির সাবমেরিন থেকে লোকাল ট্রেন। হেন কোনও ইস্যু নেই যা হাজির হয়নি সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজোয়। এবছরও তাই ফের একবার চমক দেওয়ার জন্য তৈরি তারা। ঠাকুর দেখার জন্য জনগণের কাছে তাদের কোনও আবেদন নেই। নেই ‘আমাদের মণ্ডপে আসুন’ গোছের ডায়লগ “কী করব বলুন তো? আমাদের পুজো এমনিও ৪ লক্ষ অমনিও ৪ লক্ষ। চারদিনে ওটাই আমাদের গড়পড়তা দর্শক। সে ভিড় সামলানোর প্ল্যানিং চলছে..।” ফের ব্যস্ত হয়ে পড়লেন পুজোর কর্মকর্তারা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.