গৌতম ব্রহ্ম ও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়: কলকাতা থেকে দুর্গাপুর। গ্রিন করিডর দিয়ে ১৭০ কিমি পথ পেরিয়ে শহরে এল কিডনি, লিভার ও কর্নিয়া। মাঝপথে আবার ঘটেছে দুর্ঘটনাও। কিন্তু, সব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে দুর্গাপুরের মধুস্মিতা বায়েনের দুটি কিডনি পেলেন দমদমের অভিষেক মিশ্র ও নদিয়ার মিঠুন দালাল।আর লিভার পেলেন বারাকপুরের সঞ্জিত বালা। অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ইতিহাসে নয়া মাইলফলক তৈরি করল পশ্চিমবঙ্গ। কর্মযজ্ঞ সফল করার জন্য রাজ্য ও কলকাতা পুলিশকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এসএসকেএম হাসপাতালের সুপার রঘুনাথ মিশ্র।
[ হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপনের পর ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছেন রানিগঞ্জের রাখাল দাস]
জন্ম থেকে অসুস্থ। ভাল করে হাঁটা-চলা, এমনকী কথাও বলতে পারত না সে। একমাত্র মেয়েকে সুস্থ করে তোলার কম চেষ্টা করেননি বাঁকুড়ার মেজিয়া থার্মাল পাওয়ার প্লান্টের কর্মী দিলীপ বায়েন। আদি বাড়ি অসমে। কর্মসূত্রে মেয়ে মধুস্মিতা ও স্ত্রীকে নিয়ে মেজিয়াতেই থাকেন দিলীপবাবু। গত ১২ তারিখ রাতে আচমকাই অসুস্থ হয়ে পড়ে বছর তেরোর ওই কিশোরী। প্রথমে তাকে ভরতি করা হয়েছিল বাঁকু়ড়ার সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে স্থানান্তরিত করা হয় দুর্গাপুরের মিশন হাসপাতালে। শনিবার বিকেলে চিকিৎসক জানিয়ে দেন, ‘ব্রেন ডেথ’ হয়েছে মধুস্মিতার। দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার পর একমাত্র মেয়ের অঙ্গদানে সম্মত হন বায়েন দম্পতি। আর দেরি করেনি দুর্গাপুরের মিশন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। স্বাস্থ্য দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
রবিবার ভোর থেকে শুরু হয়ে যায় তৎপরতা। মধুস্মিতা বায়েনের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে পাঠিয়ে দেওয়া হয় কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে। সেই নমুনা মিলিয়ে তৈরি রাখা হয় কিডনি এবং লিভার গ্রহীতাদের। দুর্গাপুর থেকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতাল পর্যন্ত ১৭০ কিমি রাস্তায় গ্রিন করিডোর করে তৈরি করে রাজ্য পুলিশ ও কলকাতা পুলিশ। রবিবার সন্ধে সাড়ে সাতটা নাগাদ দুটি অ্যাম্বুলেন্সে মধুস্মিতার বাক্সবন্দি অঙ্গ নিয়ে কলকাতার উদ্দেশে রওনা হন দুর্গাপুরের মিশন হাসপাতালে ১০ জন চিকিৎসকের একটি দল। পৌনে দশটা নাগাদ কিডনি, লিভার ও কর্নিয়া পৌঁছে যায় এসএসকেএম হাসপাতালে।মধুস্মিতার দুটি কিডনি দমদমের অভিষেক মিশ্র ও নদিয়ার মিঠুন দালালের শরীরে প্রতিস্থাপন করেছেন চিকিৎসকরা। আর লিভার পেলেন বারাকপুরের সঞ্জিত বালা। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অঙ্গ প্রতিস্থাপন সফল। গ্রহীতাদের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। এদিকে দুর্গাপুর থেকে গ্রিন করিডর দিয়ে কলকাতায় অঙ্গ আনার সময়ে আবার পানাগড়ে জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনা ঘটে। আহত হন দু’জন।
এর আগে আকাশপথে ভিনরাজ্য থেকে অঙ্গ নিয়ে আসা হলেও সড়কপথে এত দীর্ঘ পথ পেরিয়ে অঙ্গ নিয়ে আসার ঘটনা বিরল। ছিল অন্য চ্যালেঞ্জও। শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করার পর পাঁচ ঘণ্টা পর্যন্ত সতেজ থাকে লিভার। কিডনি সতেজ থাকে আট থেকে দশ ঘণ্টা। তারমধ্যেই তা প্রতিস্থাপিত করতে হয়।
ছবি: উদয়ন গুহরায়
[বাঙালি হলে মিলবে না চাকরি, এজেন্সির বিজ্ঞাপনে তোলপাড় কলকাতা ]